Afghanistan Earthquake

Afghanistan Earthquake: ‘সব গিয়েছে, বাঁচব কী ভাবে বলতে পারেন?’

পার্বত্য এই এলাকায় পৌঁছনো সহজ নয়। পাকটিকায় পৌঁছতেই বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের। তার উপরে ভারী বর্ষণে শুখা মাটিতে বান ডেকেছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কাবুল শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ ০৬:৪০
Share:

ভূমিকম্পে বিদ্ধস্ত পাকটিকা প্রদেশ। ছবি: পিটিআই

এক রাতের কয়েক মুহূর্ত বদলে দিয়েছে আফগানিস্তানের পাকটিকা প্রদেশকে। যত দূর চোখ যায়, শুধুই ধ্বংসস্তূপ। পথ ধরে এগোলেই কানে আসে কান্নার রোল, কোথাও গোরস্থানের স্তব্ধতা।

Advertisement

মঙ্গলবার গভীর রাতের ভূমিকম্পে মৃত্যুপুরীর চেহারা নিয়েছে পাকিস্তান-সীমান্ত ঘেঁষা পাকটিকা আর খোস্ত প্রদেশের এক ডজন গ্রাম। ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা লাগামছাড়া। গত কালই মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছিল। যার মধ্যে প্রচুর শিশুও রয়েছে। জখম হন অন্তত ১৫০০ জন। কমপক্ষে ২ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নানা কারণে ধীরগতিতে উদ্ধারকাজ চলায় ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে থাকা মৃতের সংখ্যা আসলে যে কত, তার কিনারা হয়নি এখনও। তার উপরে গত রাত থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে প্লাবন ডেকেছে গ্রামগুলোয়। এই অবস্থায় বিশ্বের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে তালিবান সরকার। দেশের অন্যতম সরকারি আধিকারিক আনাস হক্কানির টুইট, ‘সরকার তার সাধ্যমতো কাজ করছে। এই বিপর্যয়ে বিশ্বের অন্য দেশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াবে বলে আশা’। আফগানিস্তানের শীর্ষনেতা হিবাতুল্লা আখুন্দজ়াদা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, উদ্ধারকর্মীরা এখনও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সব প্রান্তে পৌঁছতে পারেননি। ফলে মৃত্যু মিছিল আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা।

সে রাতের ভূমিকম্পে নিজে বাঁচলেও পরিবারের ১৯ জনকে একসঙ্গে হারিয়েছেন এক তরুণী। পাকটিকার একমাত্র হাসপাতালে জায়গা হয়েছে তাঁর। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি, ‘‘রাতের অন্ধকারে হঠাৎ বিছানাটা কেঁপে উঠল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছাদ ভেঙে পড়ল। কী ভাবে যেন বেঁচে গেলাম। জ্ঞান ফিরলে দেখি, মাথার উপরে খোলা আকাশ। মাথায় চোট পেয়েছি। কাঁধের প্রচণ্ড যন্ত্রণা। আমি ছাড়া পরিবারের কেউ বেঁচে নেই শুনেছি।’’ পাকটিকার হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই। চিকিৎসক থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম— কোনও কিছুই পর্যাপ্ত নয়। ভরসা তবু স্থানীয়েরা। আহতদের রক্ত দিতে হাসপাতাল চত্বরে ভিড়।

Advertisement

গত অগস্টে তালিবান সরকার ক্ষমতা দখলের পরে আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য পরিষেবা ধুঁকছে। দোসর চরম অর্থনৈতিক সঙ্কট। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো অর্থ তালিবানের হাতে নেই। প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তা আবদুল কাহার বালখি বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর মতো আর্থিক অবস্থা এই সরকারের নেই।’’

ভূমিকম্পের রাতে পরিবার-সহ প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন জ়াইতুল্লা ঘুরজিওয়াল। কিন্তু বাকি সব কিছু কেড়ে নিয়েছে প্রকৃতি। তাঁর কথায়, ‘‘সব গিয়েছে। বাড়ি-ঘর, জিনিসপত্র, টাকা-পয়সা সব। বৌ-বাচ্চাদের নিয়ে কী ভাবে বাঁচব বলতে পারেন?’’ আমাদের কাছে একটা কম্বল নেই, তাঁবু পর্যন্ত নেই। খাবার, জল কিছুই নেই। ’’

পার্বত্য এই এলাকায় পৌঁছনো সহজ নয়। পাকটিকায় পৌঁছতেই বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের। তার উপরে ভারী বর্ষণে শুখা মাটিতে বান ডেকেছে। মোবাইলের টাওয়ার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রত্যন্ত গ্রামগুলির সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সংগঠনের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস জানান, ওষুধ, তাঁবু, খাবার, ত্রাণ নিয়ে ত্রাণকর্মীরা ইতিমধ্যেই রওনা দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার উদ্দেশে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতের একটি দল আফগানিস্তানে গিয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন