কের্চ সেতুর যান চলাচলের অংশটির উদ্বোধন করেছিলেন পুতিন স্বয়ং। ছবি: সংগৃহীত।
ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার সংযোগকারী সেতুতে আবার আঘাত হানল ইউক্রেন! মঙ্গলবার ‘কের্চ ব্রিজ’ নামে পরিচিত ওই সেতুর একটি স্তম্ভ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ইউক্রেনের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। তবে বিবিসি প্রকাশিত খবরে দাবি, হামলার জেরে সাময়িক ভাবে সেতুটি বন্ধ করে দেওয়া হলেও পরে যান চলাচল আবার শুরু হয়েছে।
ইউক্রেন সেনা হামলার দায় স্বীকার করে জানিয়েছে, তাদের সেনাকর্তা জেনারেল ভাসিল মালিউক কের্চ সেতুতে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। ক্রাইমিয়ার সঙ্গে রুশ ভূখণ্ডের সংযোগরক্ষাকারী সেতুর ‘প্রচণ্ড ক্ষতি হয়েছে’ বলেও কিভের দাবি। কের্চ সেতুর মূলত দু’টি অংশ। একটি অংশে রয়েছে রেললাইন। অন্য অংশে যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল করে। ক্রাইমিয়া এবং দক্ষিণ ইউক্রেনের যে সমস্ত এলাকা রাশিয়া দখল করেছে, সেখানে যোগাযোগ ও রসদ সরবরাহের জন্য এই সেতু ব্যবহার করা হয়।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পরে এই নিয়ে তৃতীয় বার ওই সেতুর উপর হামলা চালাল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির বাহিনী। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে সামান্য সংঘর্ষের পরে দক্ষিণ ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করেছিল রুশ সেনা। পরে গণভোট করিয়ে ওই অংশকে রুশ ভূখণ্ডের সঙ্গে জুড়ে নিয়েছিল ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার। ২০১৮ সালে ১২ মাইল লম্বা কের্চ সেতুর যান চলাচলের অংশটির উদ্বোধন করেছিলেন পুতিন স্বয়ং। তার দু’বছর পর রেল পরিবহণের অংশটি চালু হয়েছিল।
সামরিক দৃষ্টিতে ক্রাইমিয়ার অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। কৃষ্ণসাগর উপকূলের ক্রাইমিয়ার সেবাস্তিপোল বন্দর শীতের সময়ও সচল থাকে। মূল রুশ ভূখণ্ডের কোনও বন্দরে সে সুবিধা নেই। সমুদ্র ভেসে আসা বরফের চাঁইয়ের কারণে বছরভর সেগুলি সচল রাখা সম্ভব নয়। সেই সামরিক অবস্থানগত গুরুত্বের কারণে এ বারের যুদ্ধের গোড়া থেকেই ইউক্রেন বাহিনী বারে বারে নিশানা করেছে ক্রাইমিয়াকে। ২০২৩ সালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ক্রাইমিয়ার সেবাস্তিপোল বন্দরে রুশ বাহিনীর মজুত তেলের ভান্ডার ধ্বংস করে দিয়েছিল ইউক্রেন সেনা।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার মস্কোর যাবতীয় গোয়েন্দা ‘নেটওয়ার্ক’ এবং প্রতিরক্ষা নজরদারি ব্যবস্থার ‘চোখে’ ধুলো দিয়ে রুশ ভূখণ্ডের গভীরে ঢুকে রবিবার পাঁচ সামরিক বিমানঘাঁটিতে নিখুঁত ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইউক্রেন। বিস্ফোরকবাহী ১১৭টি কোয়াড কপ্টারের হামলায় অন্তত ৪০টি বোমারু ও নজরদারি বিমান ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলে ইউক্রেনের দাবি। কের্চ সেতুতে হামলার ক্ষেত্রেও কিভ বিস্ফোরকবাহী ড্রোন ব্যবহার করেছে বলে রুশ সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি। যদিও এ ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরি দল সেতুর স্তুম্ভের তলার বিস্ফোরক বসাতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।