অন্য ‘শিন্ডলার’ গোয়েরিং বাঁচিয়েছিলেন ৩৪ ইহুদিকে

ওই বাড়িতেই শৈশব কেটেছিল হিটলারের অন্যতম বিশ্বস্ত সহকারী হেরমান গোয়েরিং এবং তাঁর ভাই আলবার্ট গোয়েরিং-এর। দুই ভাইয়ের মধ্যে ভাব থাকলেও প্রকৃতির দিক থেকে একদম দুই মেরুতে অবস্থান। সদ্য যুবক হেরমান তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে টগবগ করে ফুটছেন। হিটলারের বক্তৃতা শুনে নাম লিখিয়েছেন নাৎসি দলে। অন্য দিকে বছর দুয়েকের ছোট আলবার্টের সময় কাটে গানের আসরে শিল্পী বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। সঙ্গী মদ আর মহিলা। দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পরে আলবার্ট চলে যান ভিয়েনায়। সেখানে দুই ইহুদি ভাই অস্কার এবং কুর্ট পিলজারের সংস্থায় কাজ করতে শুরু করেন তিনি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

বার্লিনের পশ্চিম দিকে একটা সাদামাটা লাল ইটের বাড়ি। তবে বাড়িটার ইতিহাস সাদামাটা নয় মোটেও।

Advertisement

ওই বাড়িতেই শৈশব কেটেছিল হিটলারের অন্যতম বিশ্বস্ত সহকারী হেরমান গোয়েরিং এবং তাঁর ভাই আলবার্ট গোয়েরিং-এর। দুই ভাইয়ের মধ্যে ভাব থাকলেও প্রকৃতির দিক থেকে একদম দুই মেরুতে অবস্থান। সদ্য যুবক হেরমান তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে টগবগ করে ফুটছেন। হিটলারের বক্তৃতা শুনে নাম লিখিয়েছেন নাৎসি দলে। অন্য দিকে বছর দুয়েকের ছোট আলবার্টের সময় কাটে গানের আসরে শিল্পী বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। সঙ্গী মদ আর মহিলা। দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পরে আলবার্ট চলে যান ভিয়েনায়। সেখানে দুই ইহুদি ভাই অস্কার এবং কুর্ট পিলজারের সংস্থায় কাজ করতে শুরু করেন তিনি।

এর পরে শুরু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। অস্ট্রিয়া অভিযানের দায়িত্ব ছিল হেরমানের উপরেই। চলতে থাকে ইহুদি গ্রেফতারি। তারও পুরোভাগে হেরমান। বেকার হয়ে যান আলবার্ট। কারণ, ইহুদি দুই ভাই অস্কার এবং কুর্ট পিলজারকেও গ্রেফতার করেছিলেন হেরমান।

Advertisement

সাত বছর পরে, ১৯৪৫ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হন হেরমান এবং আলবার্ট দু’জনেই। হেরমান যখন নিশ্চিত তাঁর ফাঁসি হবে, আলবার্ট তখন জেরার মুখে অফিসারের হাতে তুলে দেন ৩৪ জন ইহুদির তালিকা। পিলজার ভ্রাতৃদ্বয় ছিলেন সেই তালিকার ২৪ নম্বরে। এমনকী ছিল অস্ট্রিয়ার প্রাক্তন চ্যান্সেলর শুশনিগের নামও। তালিকাটি দেখে হকচকিয়ে যান ওই অফিসার। ভেবে নেন, চালাকি করার চেষ্টা করছেন আলবার্ট। তাই সেই তালিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বিশেষ। এই রকমই একটা সময়ে আমেরিকা থেকে কুর্ট পিলজারের চিঠি আসে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকদের কাছে তিনি আবেদন জানান, আলবার্টকে যেন মুক্তি দেওয়া হয়। কারণ, তিনি সাহায্য করেছিলেন বহু ইহুদিকে।

এর পরে আলবার্টকে জেরা করতে শুরু করেন আমেরিকার ভিক্টর পার্কার। স্পষ্ট জার্মান বলতে পারতেন ভিক্টর। কারণ, তাঁর পরিবার এক সময় থাকত জার্মানিতেই। তাঁরাও ছিলেন ইহুদি। আমেরিকায় পালিয়ে গিয়ে নাম পরিবর্তন করে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। ভিক্টরের এক আত্মীয় সোফি বিয়ে করেছিলেন অস্ট্রীয়-হাঙ্গেরীয় গীতিকার ফ্রানজ লেহরকে। নাৎসি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন সোফি এবং লেহর দু’জনেই। আর সোফির নামও ছিল আলবার্টের তালিকায়। ১৫ নম্বরে।

ভিক্টর সরাসরি কথা বলেন সোফির সঙ্গে। সোফি জানান, সত্যি কথা বলছেন আলবার্ট। নিজের কারখানায় কাজ করাবেন বলে জনা ৩৪ ইহুদিকে বন্দিদশা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। দাদা হেরমানের সই নকল করে বহু আদেশ বদলে দিয়েছিলেন, যার ফলে অনেক ইহুদির গ্রেফতারিও এড়ানো গিয়েছিল।

এই সব প্রমাণের ভিত্তিতে ছাড়া পান আলবার্ট। আর দোষী সাব্যস্ত হন হেরমান। তবে ফাঁসির আগেই সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। মুক্তি পেলেও আলবার্টের ভাগ্য ফেরেনি। মোট চারটি বিয়ে ভাঙার পরে মদ্যপে পরিণত হন তিনি। ১৯৬৬ সালে মারা যান। প্রায় ৫০ বছর পরে আলবার্ট গোয়েরিং-এর কথা জানতে পারে সারা বিশ্ব। ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’ ছবিটি যাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি সেই
শিন্ডলােরর সমান সম্মান দেওয়া হয় আলবার্টকেও।

এর পরে একটি পারিবারিক গল্প প্রকাশ্যে আনেন আলবার্টের একমাত্র কন্যা এলিজাবেথ গোয়েরিং ক্লাসা। তাঁর মাকে আলবার্ট জানান, তিনি হেরমানের সৎ ভাই। পরে তাঁর বাবা ক্যাথলিক হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পারিবারিক সূত্রে ইহুদি বাবার ইহুদি ছেলে
ছিলেন আলবার্ট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement