নাগরিকদের হাতে থাকা বন্দুকেই কাঁপছে দুনিয়ার ফার্স্ট পাওয়ার আমেরিকা

আল-কায়েদা নয়। আইএস-ও নয়। দুনিয়ার একাংশ যার দিকে ‘যুদ্ধবাজ’ বলে আঙুল তোলে, যার রণ হুঙ্কারে কাঁপে গোটা বিশ্ব, সেই আমেরিকা এখন তার নাগরিকদের হাতে হাতে ঘোরাফেরা করা বন্দুকে কার্যত বিপর্যস্ত। সন্ত্রস্ত!

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৪:১৪
Share:

আল-কায়েদা নয়। আইএস-ও নয়।

Advertisement

নাগরিকদের হাতে হাতে বন্দুক পৌঁছে যাওয়ায় ভয়টা বেশি পাচ্ছে আমেরিকা।

দুনিয়ার একাংশ যার দিকে ‘যুদ্ধবাজ’ বলে আঙুল তোলে, যার রণ হুঙ্কারে কাঁপে গোটা বিশ্ব, সেই আমেরিকা এখন তার নাগরিকদের হাতে হাতে ঘোরাফেরা করা বন্দুকে কার্যত বিপর্যস্ত। সন্ত্রস্ত!

Advertisement

ক্যালিফোর্নিয়ার ঘটনার পর সেই ভয়-ভীতি এতটাই তুঙ্গে পৌঁছেছে যে, প্রথম পাতায় মার্কিন দৈনিক ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে সম্পাদকীয় লিখতে হয়েছে। ভাবুন, ৯৫ বছর পর, প্রথম পাতায় সম্পাদকীয়! দৈনিকটিকে সরব হতে হয়েছে মার্কিন সংবিধানের ‘বন্দুক আইন’ সংশোধনের দাবিতে।

রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, কোনও পক্ষেই না-ঝুঁকে মার্কিন দৈনিকের সম্পাদকীয়তে বিনা বাধায় নাগরিকদের অস্ত্রধারণের অধিকারটি নিয়ে রাজনীতিকদের নতুন করে ভাবতে বলা হয়েছে। মার্কিন সংবিধানে দেওয়া এই অধিকারটি পুরোপুরি বহাল রাখা সঙ্গত কি না, বহাল থাকলে নাগরিকরা কোন কোন ধরনের অস্ত্র হাতে রাখতে পারবেন, তা দ্রুত খতিয়ে দেখার জন্য সেরা মার্কিন দৈনিকটির তরফে সে দেশের রাজনীতিকদের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন--ফার্মাকোলজি ছেড়ে কী ভাবে আইএসের ঘাতক হল তাশফিন

ওই সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়ার ঘটনার পিছনে কী ‘মোটিভ’ ছিল, তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কতটা, কী সম্পর্ক রয়েছে, তার তদন্ত হচ্ছে, এটা ভাল কথা। কিন্তু, এমন ঘটনা তো একটা-দুটো নয়। একের পর এক ঘটেই চলেছে। যার শিকার হতে হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, ওরেগন, সাউথ ক্যারোলিনা, ভার্জিনিয়া, কানেক্টিকাটের মতো বহু মার্কিন শহরের নিরীহ নাগরিকদের। কিন্তু, তার পরেও রাজনীতিকদের হেলদোল নেই। তারা দেশের অস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির ওপরেই ভরসা রেখে চলেছেন। কারণ, বিদেশে অস্ত্র রফতানি করে ওই মার্কিন অস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিই দেশের রাজকোষ ভরায়। আর মার্কিন নাগরিকদের হাতে হাতে বিনা বাধায় বন্দুক পৌঁছে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলে ওই মার্কিন অস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির ব্যবসা ধাক্কা খায়।

মার্কিন দৈনিকটি লিখেছে, আইনের ফাঁক গলে মার্কিন নাগরিকদের হাতে হাতে এখন ঘোরাফেরা করছে যুদ্ধাস্ত্র। যে বন্দুক বা রাইফেল যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়, নাগরিকরাও তা কিনতে পারছেন, কাছে রাখতে পারছেন, সব সময়। এক রকমের মেকি ‘হিরোইজম’-এর নেশায় নাগরিকদের বুঁদ করে রাখতে মার্কিন অস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি আমেরিকার বাজারে ওই ধরনের অস্ত্র ঢালাও ভাবে বেচছে। ওই সব অস্ত্র কেনার জন্য লোভনীয় অফার দেওয়া হচ্ছে। একটা মহল থেকে বলা হচ্ছে, ওই সব বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র কেনা হচ্ছে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, নরওয়ে থেকে, বা চোরা পথে সেখান থেকে ওই সব অস্ত্রশস্ত্র আনা হচ্ছে। তারা কিন্তু এটা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। আমেরিকায় কিছুই হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পুরুষোত্তম ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘বহু দিন আগে আত্মরক্ষার জন্য নাগরিকদের অস্ত্রধারণ করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে। প্রাচীন ভারতেও এই ধরনের অধিকার ছিল। তবে সেটা ছিল মূলত ফিলোজফিক্যাল রাইট। যে সময় গোটা ইউরোপে চলছে একনায়কতন্ত্র, তখন মার্কিন সংবিধানে প্রদত্ত ওই অধিকারই প্রমাণ করে কতটা গণতন্ত্র রয়েছে আমেরিকার সংবিধানে। কিন্তু তার পর সমাজব্যবস্থা অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়েছে। খুন, অপরাধের ঘটনা বেড়েছে। শুধু এই বছরেই ক্যালিফোর্নিয়া-কলোরাডোর মতো মার্কিন নাগরিকদের অবাধে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে প্রায় সাড়ে তিনশোটি। তাতে কয়েকশো’ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ওই অধিকার সঙ্কোচনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু মূলত রিপাবলিকানদের জন্যই মার্কিন মুলুকে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। আত্মরক্ষার যুক্তি ছাড়াও রিপাবলিকানরা বলছেন, ব্যক্তির সুরক্ষা যথেষ্ট সুনিশ্চিত করতে পারছে না রাষ্ট্রব্যবস্থা। তা ছাড়া সন্ত্রাসবাদ গোটা আমেরিকাতেই অন্যতম বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসে ‘বন্দুক আইন’ সংশোধনের জন্য একটি বিল পাস করাতে চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তাঁর যুক্তি ছিল, তালিকায় থাকা সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিমানে যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আমেরিকায়। অথচ, তারা বিনা বাধায় দোকান থেকে বন্দুক কিনতে পারছে! এটা চলতে পারে না। কিন্তু, ওবামা পারেননি, রিপাবলিকানদের বাধায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প-সহ যে চার রিপাবলিকান প্রার্থী আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য লড়ছেন, তাঁরা সকলেই প্রেসিডেন্ট ওবামার ওই বিলটির বিরোধিতা করেছেন। তাই আগামী দিনেও ‘বন্দুক আইন’ মার্কিন মুলুকে আদৌ বদলাবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্টই সংশয় রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন