আমেরিকাকে আর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ মনে করার কোনও কারণ নেই— খাস ওয়াশিংটনে বসে এমন হুঁশিয়ারি দিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দূত মুশাহিদ হুসেন সইদ। গত কাল আটলান্টিক কাউন্সিল নামে একটি মার্কিন থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের আলোচনায় এই মন্তব্যের পাশাপাশি মুশাহিদ বলেন, আমেরিকা যদি কাশ্মীর ও ভারত সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টায় তা হলে পাকিস্তান এ বার চিন, রাশিয়ার দিকে ঝুঁকবে। আমেরিকার ক্ষমতা এখন পড়তির দিকে।
কাশ্মীর বিষয়ে পাকিস্তানের আর এক দূত শাজরা মানসাবও ওয়াশিংটনে সইদের সঙ্গে রয়েছেন। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের দাবিতে আমেরিকা সে ভাবে সাড়া দেয়নি— তাই ওয়াশিংটনের মঞ্চে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দুই দূত। তাঁদের মন্তব্য ক্যামেরায় রেকর্ড না হলেও সেখানে উপস্থিত শ্রোতার সংখ্যা কিছু কম ছিল না। এক প্রশ্নের জবাবে সইদ বলেন, চিন এখন পাকিস্তানের বন্ধু। আর রাশিয়ার সঙ্গেও আরও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দিকে এগোচ্ছে পাকিস্তান।
এই সূত্রে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের জন্য নিযুক্ত বিশেষ মার্কিন প্রতিনিধি রিচার্ড ওলসনের কাছে ভারতের বিরুদ্ধে একটি নথিও জমা দেন তিনি। সইদের বক্তব্য, রুশ সরকার এই প্রথম পাকিস্তানকে অস্ত্র বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে। তাই দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতির ছক যে ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে আমেরিকাকে সতর্ক হতে হবে।
সইদের দাবি, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত ওবামা জমানায় পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান নিয়ে মার্কিন বিদেশ নীতি বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। তাদের নীতির মধ্যে যথেষ্ট সংশয়ও ছিল। আমার ধারণা পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতো দেশকে বুঝতেই পারেনি ওবামা প্রশাসন। তাই দেশ দু’টোকে সেই ফল ভুগতে হয়েছে।’’ তাঁর মতে, কখনও তালিবানের সঙ্গে আলোচনার কথা বলা, কখনও তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হওয়া এবং শেষমেশ মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবা এবং একেবারে শেষে আফগানিস্তানে সাড়ে আট হাজার সেনা রেখে দেওয়া— মার্কিন নীতিতে বরাবরই সংশয় থেকে গিয়েছে।
সইদ বলছেন, পরবর্তীকালে কী হবে তা ভাবী মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করবে। সইদরা চান, আমেরিকা যেন সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পাকিস্তানকে দেখে। শান্তি এবং নিরাপত্তা দু’টোকে. আলাদা বিষয় হিসেবে যেন দেখা না হয়, কারণ সেটা সম্ভব নয়। পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক, তা চালিয়ে যেতে আগ্রহী পাক প্রশাসন। কিন্তু সইদের মতে, এখন তাদের অন্য দেশের সঙ্গেও মিত্রতা তৈরি হচ্ছে, সেটা মাথায় রাখা ভাল। জইশ প্রধান মাসুদ আজহারকে জঙ্গি ঘোষণা করা নিয়ে বাধা দিয়েছে চিন। এ নিয়ে ভারতের উদ্যোগ সফল হয়নি। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পাশেই দাঁড়িয়েছে বেজিং। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে করিডর তৈরি করতেও উদ্যোগী হয়েছে চিন।