Teacher Suspension

ডেভিডের মূর্তি ‘পর্নোগ্রাফি’, চাপে ইস্তফা প্রধান শিক্ষিকার

স্কুলের পাঠ্যক্রমে অভিভাবকদের ‘নিয়ন্ত্রণ’ শুরু হয়ে গিয়েছে আমেরিকার অনেক প্রদেশেই। এই প্রদেশের স্কুলে ধীরে ধীরে সব ধরনের যৌনশিক্ষা ও লিঙ্গ পরিচয় বিষয়ক পাঠ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।

Advertisement

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

বস্টন শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৮:০৯
Share:

ফ্লরিডার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে পদত্যাগ করার জন্য বাধ্য করা হল। ফাইল ছবি।

ফ্লরিডার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে পদত্যাগ করার জন্য বাধ্য করা হল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ১১-১২ বছরের পড়ুয়াদের পর্নোগ্রাফি দেখানো হয়েছে তাঁর স্কুলে! কী সেই অশালীন ছবি?

Advertisement

এই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির শিল্প বিষয়ক ক্লাসে রেনেসাঁস, অর্থাৎ, ইউরোপীয় পুনর্জাগরণ বিষয়ক পাঠের সময়ে মিকেলাঞ্জেলোর কালজয়ী মর্মরমূর্তি ‘ডেভিড’-এর ছবি দেখানো হয়েছিল। হিব্রু বাইবেলের চরিত্র ডেভিডের ১৭ ফুটের এই ভাস্কর্যটি একটি বিশাল মার্বেলখণ্ড থেকে খোদাই করেছিলেন পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের ইতালীয় শিল্পী মিকেলাঞ্জেলো। এখন ইটালির ফ্লরেন্সের একটি শিল্প সংগ্রহশালায় রয়েছে সেটি। প্রতি বছর অন্তত ১০ লক্ষ মানুষ সেটি দেখতে যান।

এ-হেন মূর্তির ছবি দেখে শিশুমন ‘কলুষিত’ হবে, মনে করছেন স্কুলের কিছু অভিভাবক। তাঁদের প্রশ্ন, কেন ষষ্ঠ শ্রেণির বাচ্চাদের ‘নগ্ন’ পুরুষের ছবি দেখানো হল এবং কেন বাচ্চাদের দেখানোর আগে অভিভাবকদের অনুমতি নেওয়া হল না?

Advertisement

অভিভাবকদের চাপে পড়ে তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষিকা হোপ ক্যারাসকুইয়াকে বলা হয়, ভুলের দায় নিয়ে অবিলম্বে ইস্তফা দিন তিনি। না হলে বরখাস্ত করা হবে তাঁকে। বাধ্য হয়ে ইস্তফাই দেন শিক্ষিকা। তার পরেই প্রশ্ন উঠছে, ডেভিডের মতো বিখ্যাত শিল্পকলাকে ‘পর্নোগ্রাফি’ বলে চিহ্নিত করায় কি অভিভাবকদের ‘সংকীর্ণমনস্কতা’র পরিচয়ই পাওয়া গেল না?

স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিভাবকদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। স্কুল বোর্ডের এক সদস্যের কথায়, ‘‘রেনেসাঁসের পাঠ প্রাইমারি স্কুল থেকেই শুরু করে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তাই বলে কি আমরা মন্তেসরির বাচ্চাদের ডেভিডের পূর্ণ অবয়ব দেখাব? নিশ্চয় নয়। দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদেরও নয়। কোন শ্রেণি থেকে সেই ছবি দেখানো যাবে, তা আমাদের আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই কাজ করা উচিত হয়নি।’’ স্কুল কর্তৃপক্ষের আরও দাবি, গত বছর প্রথা মেনে অভিভাবকদের জানানো হয়েছিল যে, ষষ্ঠ শ্রেণির শিল্প বিষয়ক ক্লাসে ডেভিডের ছবি দেখানো হবে। কিন্তু এ বার সে রকম কোনও নোটিস পাঠানো হয়নি। ফলে এই ‘ভুলের দায়’ নিতে হবে প্রধান শিক্ষিকাই।

প্রসঙ্গত, স্কুলের পাঠ্যক্রমে অভিভাবকদের ‘নিয়ন্ত্রণ’ শুরু হয়ে গিয়েছে আমেরিকার অনেক প্রদেশেই। যার মধ্যে অন্যতম ফ্লরিডা। এই প্রদেশের স্কুলে ধীরে ধীরে সব ধরনের যৌনশিক্ষা ও লিঙ্গ পরিচয় বিষয়ক পাঠ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, সেই আইন ভাঙলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁদের চাকরির সঙ্গে সঙ্গে লাইসেন্সও হারাবেন। ডেভিড-বিতর্কে প্রধান শিক্ষিকাকে জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনা বলে দিচ্ছে, এখন থেকে সেই পথেই হাঁটা হবে।

ফ্লরিডার রিপাবলিকান গভর্নর রন ডিসান্টিস ক্ষমতায় আসার পর থেকেই স্কুলের পাঠ্যক্রম নিয়ে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তাঁর মতে, অভিভাবকের স্কুলের পাঠক্রমের ও পাঠ্য বইয়ের বিষয়ে মতামত দেওয়ার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। তিনি মনে করেন, অতি ‘উদারনৈতিক’ মানসিকতা থেকে স্কুলে অনেক কিছু পড়ানো হচ্ছে, যা পড়ুয়াদের জানার দরকার নেই এবং যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকর। স্কুলের গ্রন্থাগারে কী বই থাকবে, সেই বিষয়েও প্রাদেশিক আইন মেনে চলতে হবে। গ্রন্থাগারে রাখা যাবে না কোনও ‘বিতর্কিত’ বই। এ ভাবেই, অভিভাবকদের আপত্তিতে কৃষ্ণাঙ্গ ঔপন্যাসিক টনি মরিসনের ‘দ্য ব্লুয়েস্ট আই’ ও কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলনের অন্যতম মুখ রোজ়া পার্কসের জীবনী ‘দ্য লাইফ অব রোজা পার্কস’ কয়েকটি স্কুলে রাতারাতি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট বলছে, ফ্লরিডার বিভিন্ন স্কুলে এ ভাবেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্রায় ১৭০টি বই। তার সঙ্গে বর্ণভেদ ও লিঙ্গবৈষম্যকেও পাঠক্রম থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।

সমাজতাত্ত্বিকদের আশঙ্কা, দীর্ঘদিন ধরে এ ভাবে চলতে থাকলে আমেরিকার নতুন প্রজন্মের ইতিহাস বোধ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ডেভিড-বিতর্কের পরে এই সব স্কুলপড়ুয়ার শিল্প সচেতনতার বিকাশ নিয়েও আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন