International News

ভুল ধারণা ভেঙে দিতে মানব-বইয়ের গ্রন্থাগার

১৮ বছর আগে কোপেনহাগেনে তৈরি হয়েছিল মানব-গ্রন্থাগার (হিউম্যান লাইব্রেরি)। পরে তা অন্তত ৭০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে বই-মানুষের সঙ্গে অন্য সংযোগ তৈরি হয় পাঠকের, তাঁর সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলে। সময় পূর্বনির্ধারিত। কারণ, বইয়ের মতো তো বই-মানুষদের বাড়ি নিয়ে পড়া যাবে না। লাইব্রেরি যেখানে, সেখানেই আলাপচারিতা।

Advertisement

অন্বেষা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৮ ১১:১১
Share:

ঢাকার মানুষ-বই নাহিয়ান বুশরা

কেউ একা মা, কেউ যৌন হেনস্থার শিকার। কেউ শরণার্থী, কেউ আবার সমকামী সন্তানের মা, শৈশবে ধর্ষণের ক্ষত ভুলে হাজির কোনও সাহসিনী— এমন অসংখ্য মুখ। যাদের নামের তুলনায় এই পরিচয়ই বড়। আর সেই পরিচয়ের সঙ্গে লেগে থাকা ‘বাঁধাধরা ধারণা’কে চুরমার করতে চায় ওই মুখগুলো। বই হয়ে। মানব-বই।

Advertisement

১৮ বছর আগে কোপেনহাগেনে তৈরি হয়েছিল মানব-গ্রন্থাগার (হিউম্যান লাইব্রেরি)। পরে তা অন্তত ৭০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে বই-মানুষের সঙ্গে অন্য সংযোগ তৈরি হয় পাঠকের, তাঁর সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলে। সময় পূর্বনির্ধারিত। কারণ, বইয়ের মতো তো বই-মানুষদের বাড়ি নিয়ে পড়া যাবে না। লাইব্রেরি যেখানে, সেখানেই আলাপচারিতা।

মানব-গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা রনি আবেরগেল ই-মেলে জানালেন, ‘কোনও সঙ্কটে থাকা মানুষ কী ভাবে নিশ্চিন্তে একটু কথা বলতে পারেন, সেটা নিয়ে ভেবেছিলাম আমরা। যে আলোচনায় কেউ কারও বিচার করতে বসবে না। দু’জনের ভিন্নতা মেনেই কথা এগোবে। যা নিয়ে আমার ভ্রান্ত ধারণা, তা মানব-বই শুধরে দিতে পারে সেটা। ধরা যাক, আমি নারীবাদীদের দেখতে পারি না। এখানে আমি পেয়ে যেতে পারি এমন এক মানুষ-বইকে, যিনি তার জীবনের গল্প শুনিয়ে আমার ধারণা পাল্টে দিলেন।’

Advertisement

“তবে আলোচনাটা আলোচনাই, তর্ক নয়। একে অন্যকে বোঝাই এখানে মূল লক্ষ্য”, ফোনে বললেন হর্ষদ দিনকর ফাদ, ভারতে মানব-গ্রন্থাগারের হায়দরাবাদ শাখার প্রতিষ্ঠাতা। এ দেশে ইনদওরে প্রথম এমন লাইব্রেরি গড়ে ওঠে। গত বছর মার্চে হর্ষদ শুরু করেন এই লাইব্রেরি। এই তরুণের প্রাথমিক সংগ্রহে ছিল ১০ জন মানব-বই। এক বছরে বেড়ে তা হয়েছে ৫২।

কী ভাবে খুঁজে পেলেন বইরূপী মানুষদের? হর্ষদ জানান, লাইব্রেরিতে বই হতে চান? এই মর্মে আবেদন চাওয়া হয়, ফেসবুক বা ব্যক্তিগত আলাপে। সাড়া মেলে এ ভাবেই। প্রাথমিক জড়তা ছিল সকলেরই। একেবারে অপরিচিত কারও সামনে বসে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাগ
করে নেওয়া মুখের কথা নয়। তবে এক বার কথা বলার পরে বইয়ের দল সহজ হয়ে যায়।

হর্ষদের মনে আছে, সেই মায়ের কথা, যিনি সন্তান সমকামী জেনে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসেননি। বাস্তব মেনে ছেলের পাশে দাঁড়ান। পরে তাদের অধিকারের জন্যই কাজ শুরু করেন। হর্ষদের লাইব্রেরির বই হয়ে সেই মা অনেক পাঠকের ভুল ধারণা ভেঙেছেন। আর এক জনের কথা বললেন হর্ষদ। ১৩ বছর বয়সে ধর্ষণের শিকার সেই মেয়ে এখন ২০-র তরুণী। মেয়েটির সাহস অনুপ্রেরণা দিয়েছে বহু পাঠককে।

হায়দরাবাদে কখনও কলেজ ক্যাম্পাস, কখনও বা খোলা জায়গায় মাসে দু’বার বসে এই লাইব্রেরি। এই অভিনব গ্রন্থাগার রয়েছে ঢাকাতেও। সেখানকার সহ-প্রতিষ্ঠাতা উপমা রশিদ জানালেন, দু’বছর আগের এক জুনে পথ চলা শুরু। প্রথমে ১০ জন মানব-বই। এখন ১৫। মানুষ-বই পাঠের আসর সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে। নিরামিষাশী, একা মা, দৃষ্টিহীন, ৭০ পেরনো মহিলা আন্দোলনকারী, অনেক বই উপমাদের সংগ্রহে। সবচেয়ে সমাদর পেয়েছেন দৃষ্টি হারানো নাহিয়ান বুশরা। ঢাকা পেরিয়ে বিশ্ব জুড়ে আগ্রহ তাঁকে নিয়ে।

মুম্বই, চেন্নাই, পুণে, বেঙ্গালুরু, গুজরাত এবং কলকাতাতেও মানব-গ্রন্থাগার চালুর ভাবনা রয়েছে বলে জানান রনি আবেরগেল। তাঁরা চান, অন্য এক ভবিষ্যৎ। যে ভবিষ্যৎ ভাল-মন্দ বিচার ছেড়ে ভরসা রাখবে মানুষে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন