Fawzia Koofi

বুলেটের শক্তিতে জয়লাভ করা যায় না

ফওজিয়া কুফি। আফগানিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি-র প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট। রাজনীতিবিদ, নারী অধিকার কর্মী এবং দোহায় তালিবানের সঙ্গে চলতি শান্তি বৈঠকে প্রধান আলোচনাকারী। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের (আজ, শুক্রবার যা ঘোষণা হওয়ার কথা) দৌড়ে এগিয়ে। দোহা থেকে কথা বললেন অগ্নি রায়ের সঙ্গে।ফওজিয়া কুফি। আফগানিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি-র প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট। রাজনীতিবিদ, নারী অধিকার কর্মী। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের (আজ, শুক্রবার যা ঘোষণা হওয়ার কথা) দৌড়ে এগিয়ে। দোহা থেকে কথা বললেন অগ্নি রায়ের সঙ্গে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২০ ০৩:০৯
Share:

ফওজিয়া কুফি।

প্রশ্ন: গোটা জীবন লড়ছেন মহিলাদের নিরাপত্তা এবং স্বার্থ নিয়ে। নিশ্চয়ই কানে এসেছে, ভারত এই মুহূর্তে উত্তাল নারী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে। কী ভাবে দেখছেন বিষয়টিকে?

Advertisement

উত্তর: শুধু ভারত নয়, লিঙ্গ বৈষম্য এবং নারীদের উপর শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা আন্তর্জাতিক সমস্যা। ভারতে এবং সর্বত্র একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়ে গিয়েছে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে ছাড় পেয়ে যাওয়ার। একে রক্ষাকবচের সংস্কৃতিই বলা চলে। এর মোকাবিলায় আইন এবং মৌলিক শিক্ষা সংস্কার প্রয়োজন। আইনের হাত এমন ভাবে শক্ত করতে হবে যেন এই অপরাধীরা কিছুতেই ছাড় না পায়। যে সব দেশে সংঘর্ষ বা যুদ্ধ চলছে, সেখানে এই সমস্যা দ্বিগুণ। যেমন আমাদের দেশ। তারই মধ্যে আমরা মহিলা এবং শিশুদের লাঞ্ছনাবিরোধী আইন পাশ করিয়েছি। মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসা সংক্রান্ত আইনের খসড়া তৈরি করা হয়ে গিয়েছে। সেটিও পাশ করানোর জন্য লড়ছি। আমাদের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র যদি কড়া পদক্ষেপ করতে পারে, ভারত পারবে না কেন ?

Advertisement

প্রশ্ন: আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে ভারতের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ?

উত্তর: ভারত তো শুধুমাত্র আমাদের সাম্প্রতিক দ্বিপাক্ষিক মিত্রই নয়। বহু প্রাচীন সভ্যতাগত সংযোগ রয়েছে আমাদের সঙ্গে। কাবুলিওয়ালা ভারতের কাছে পরিচিত নাম। দু’দেশের সরকারের রাজনীতি যখন যেমনই থাক না কেন, আমরা ভারতের বন্ধুই থেকেছি। অবশ্যই তাদের গভীর সহায়তা আমাদের যুবশক্তিকে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে, শিক্ষার আলো পেতে ভূমিকা নিয়েছে। ভারতের কলেজে পড়াশোনো করে আমাদের ছেলেমেয়েরা বিশ্বের অনেক জায়গায় ভাল কাজও করছে। আশা করব, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সাহায্য করেই যাবে ভারত। আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে শুধু ভারত নয়, গোটা অঞ্চলের অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তাগত আরও সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন।

প্রশ্ন: আপনার এই যাত্রাপথকে যদি সংক্ষেপে তুলে ধরতে চান, কী বলবেন ?

উত্তর: বাবা, স্বামী, ভাইকে হারিয়েছি যুদ্ধে। আমার দেহ বিক্ষত হয়েছে। বার বার হামলা হয়েছে। বুকের তিন সেন্টিমিটার পাশ দিয়ে গুলি চলে গিয়েছে। শরীরে ক্ষত মেরামতির জন্য (ওপেন উন্ড) এখনও নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়। ডান হাত ভাল কাজ করে না। অনেক বেদনার মুহূর্ত পার হয়ে এসেছি। বুলেটের শক্তিতে যে জয়লাভ করা যায় না, সেটা বোঝানোই এখন আমার কাজ।

প্রশ্ন: এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য আপনার নাম মনোনয়ন তালিকায়। কেমন অনুভূতি?

উত্তর: এটা কোনও ব্যক্তিগত অর্জনের বিষয় হিসেবে আমি দেখছি না। নোবেল পাই বা না পাই, এই যে এত দূর পৌঁছতে পারলাম, এটা আমার দেশের নারীশক্তির পক্ষে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তালিবান যুগে নারীকে ঘরে বন্ধ করে রাখা হত। আর এই প্রথম আফগানিস্তানের কোনও নারী নোবেলে মনোনয়ন পর্যন্ত পৌঁছলেন। ভবিষ্যতে সমঅধিকারের জন্য লড়াইয়ের পাথেয় হয়ে থাকবে এই স্বীকৃতি। এর পর বিশ্ববাসী আফগান নারীকে হেলাফেলা করতে পারবেন না। তা ছাড়া, আমি এবং আরও যে মহিলারা তালিবানের সঙ্গে শান্তি-আলোচনার অংশ নিয়েছেন, আমাদের হাত শক্ত হবে।

প্রশ্ন: তালিবানের সঙ্গে এক টেবিলে বসে আলোচনা করছেন। অথচ এরাই আপনাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। শান্তি আলোচনায় কোনও নারীর ভূমিকাকে তারা স্বীকারই করতে চায় না। অভিজ্ঞতার কথা একটু যদি বলেন।

উত্তর: অবশ্যই এক দিনে এই টেবিলে এসে বসতে পারিনি। ২০১০ সালে আমার কনভয়ের উপর তালিবান হামলা হয়েছিল, মরে যাওয়ার কথা ছিল আমার। সে সময় আমার দেশবাসীর কাছ থেকে অঢেল শক্তিও পেয়েছি। তবে দীর্ঘদিন ধরেই তালিবান কন্টাক্ট গ্রুপগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখা শুরু করেছিলাম। তালিবানের মধ্যে এমন অনেক অংশ বা সংগঠন রয়েছে যারা ততটা কট্টর নয়, নারীদের অধিকার সম্পর্কে অনেকটাই উদার মনোভাব নিয়ে চলে। তাদের সঙ্গে এবং তাদের মাধ্যমে কাজ করেছি। আজও যে সবাই মহিলাদের ব্যাপারে সদয় তা নয়। তার মধ্যেই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে।

প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় না তালিবানগোষ্ঠী আফগানিস্তান রাজনীতির মূলস্রোতে চলে এলে ফের গণতন্ত্র, মহিলাদের স্বাধিকার, সংখ্যালঘু অধিকারের দিকটি লঙ্ঘিত হবে ?

উত্তর: আফগানিস্তানের নারীরা এই বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। সংখ্যালঘুরাও। গৃহযুদ্ধের সময় তাঁরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তালিবানের ওই জমানা আফগানিস্তানের ইতিহাস নয়। অতীতে আফগানি নারীরাই স্থানীয় সমস্ত সমস্যা, সংঘাত মেটাতে ভূমিকা নিত। আমাদের মহিলা কবিদের ইতিহাস খুব সমৃদ্ধ। তালিবানকে দেশের ইতিহাসকে বুঝতেই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন