বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে রাজসাক্ষী হলেন আরও এক প্রাক্তন পুলিশকর্তা। আশুলিয়ায় ছ’জনকে পুড়িয়ে খুনের ঘটনায় রাজসাক্ষী হিসাবে বুধবার ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন প্রাক্তন এসআই শেখ আবজালুল হক। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো এই খবর জানিয়েছে। আবজালুল ঘটনার সময় আশুলিয়া থানায় কর্মরত ছিলেন। আগেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার পর তিনি রাজসাক্ষী হয়ে তদন্তপ্রক্রিয়ায় সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেন।
এর আগে বাংলাদেশ পুলিশের প্রাক্তন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লা আল-মামুন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হিসাবে জবানবন্দি দিয়েছেন। এই মামলায় হাসিনা, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং আল-মামুন ছিলেন প্রধান তিন অভিযুক্ত। গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তাতে রায় ঘোষণা করেছে। হাসিনা এবং আসাদুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রাজসাক্ষী হওয়ায় আল-মামুন ছাড় পেয়েছেন। তাঁকে পাঁচ বছরের কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইবুনাল। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জনই পলাতক এবং বর্তমানে ভারতে আশ্রয়ী। আল-মামুনের পর আবজালুল দ্বিতীয় কোনও পুলিশকর্তা, যিনি এই মামলায় রাজসাক্ষী হলেন।
হাসিনাদের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল আশুলিয়ার ঘটনা। অভিযোগ, গত ৫ অগস্ট গণঅভ্যুত্থানের জেরে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হলে আশুলিয়ায় ছাত্র ও জনতার ‘বিজয়মিছিল’ বেরিয়েছিল। তা থানার দিকে এগোলে পুলিশ গুলি চালায়। পরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় মৃতদেহে। জবানবন্দিতে আবজালুল এই ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। জানিয়েছেন, ওসি এএফএম সায়েদের নির্দেশে এএসআই বিশ্বজিৎ সাহা এবং আর এক জন মিছিলে গুলি চালিয়েছিলেন। তবে লাশে আগুন ধরাতে তিনি দেখেননি বলে দাবি করেছেন।
আশুলিয়ার ঘটনায় মোট অভিযুক্ত ১৬ জন। তাঁদের মধ্যে আট জনই পলাতক। আবজালুল জানিয়েছেন, ঘটনার ১০ দিন পরে থানার অস্ত্রাগারে গিয়ে তিনি নিজের অস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে এসেছিলেন। এই সংক্রান্ত মামলায় তিনি ২৩তম সাক্ষী।
ট্রাইবুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বাংলাদেশ। প্রত্যর্পণ চাওয়া হয়েছে আসাদুজ্জামানেরও। ভারত সরকার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা অবগত। বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। ভারত সর্বদা দেশে দেশের মানুষের শান্তি, গণতন্ত্র এবং স্থিতিশীলতার পক্ষে। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করা হবে।