ব্যারিকেডে ‘ইম্যাজিনে’র সুর, অস্ত্রে শান শিল্পীদের

জঙ্গি হামলার খবরটা প্রথম শুনেছিলেন জার্মানির এক পানশালায় বসে। কোনও একটা খবরের চ্যানেলে। ঘাড় ঘুরিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠেছিলেন। চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল প্যারিসের রক্তক্ষরণের একের পর এক ছবি। সে সব দেখে আর ধরে রাখতে পারেননি নিজেকে। রেস্তোরাঁ থেকে ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। বাড়ি পৌঁছে তড়িঘড়ি বের করেছিলেন তাঁর পোর্টেবল পিয়ানোটা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৬
Share:

ভয় পাচ্ছি না। বার্তা মাথিদে আদ্রোনোর।

জঙ্গি হামলার খবরটা প্রথম শুনেছিলেন জার্মানির এক পানশালায় বসে। কোনও একটা খবরের চ্যানেলে। ঘাড় ঘুরিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠেছিলেন। চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল প্যারিসের রক্তক্ষরণের একের পর এক ছবি। সে সব দেখে আর ধরে রাখতে পারেননি নিজেকে। রেস্তোরাঁ থেকে ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। বাড়ি পৌঁছে তড়িঘড়ি বের করেছিলেন তাঁর পোর্টেবল পিয়ানোটা। আর রাতেই কাউকে কিছু না জানিয়ে সোজা প্যারিসে পাড়ি দেন পিয়ানোশিল্পী ডেভিড মার্শেলো।

Advertisement

৪০০ মাইল গাড়ি চালিয়েছিলেন সে দিন। যখন প্যারিসের বাতাক্লঁ কনসার্ট হলের সামনে পৌঁছন, তখন সেখানে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। রাস্তায় স্পষ্ট চাপ চাপ রক্ত। ব্যারিকেডের সামনে সে দিন পিয়ানো বাজাতে শুরু করেন ডেভিড। জন লেননের ‘ইম্যাজিনে’র সুরে জঙ্গিহানায় ধ্বংস হওয়া কনসার্ট হলের সামনে জ্বালিয়েছিলেন প্রতিরোধের আগুন। ডেভিড একা নন, শিল্পকলার শহরে এমন হামলার প্রতিবাদে নিজেদের শিল্পকেই অস্ত্র করেছেন তামাম বিশ্বের ব্যঙ্গচিত্র শিল্পীরাও। বলছেন, মৌলবাদ প্রতিরোধে রং-তুলি আর সুরের চেয়ে বড় অস্ত্র আর কী ই বা হতে পারে!

বাতাক্লঁ হলের সামনে ডেভিডের পিয়ানো বাজানোর ভিডিও ছড়িয়েছে ইন্টারনেটে। ব্যঙ্গচিত্র শিল্পীরা বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তুলে দিয়েছেন প্যারিস হামলার প্রতিবাদে আঁকা ছবি। বার্তা দিয়েছেন শান্তি আর সহমর্মিতার। আর সেই ছবিই সোশ্যাল সাইটে তৈরি করেছে প্রতিবাদের নতুন ভাষা। বিভিন্ন দেশের নানা সংবাদপত্র এই ছবিগুলি ব্যবহারও করছে। এই শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন ওসামা হাজাজ, ম্যাথিডে আডোর্নো, কার্লোস লাতুফ, রস ম্যাকিনটস, জঁ সার, জঁ জুলিয়েন, কেলি সি-র মতো খ্যাতনামা শিল্পীরা।

Advertisement

কারও তুলিতে যেমন অশ্রুবিন্দুতে তৈরি হয়েছে আইফেল টাওয়ার, তেমনই কেউ আবার দেখিয়েছেন সন্ত্রাসে মাথা নোয়ানো আইফেল টাওয়ারকে ধরে রেখেছে মানুষ। ভয় দেখিয়ে যে আসলে মানবতাকে রোখা যায় না, সেই বার্তাও উঠে এসেছে ছবিতে। ফ্রান্সের পতাকা হাতে শরণার্থী শিশুর কান্না থেকে মুখ ঢেকে যাওয়া অন্ধকার— প্রতিরোধের ছবিতে উঠে এসেছে সবই।

আইফেল টাওয়ার হাতে কান্না খুদের। কেলি সি’র তুলিতে।

পিয়ানোবাদক ডেভিড তাঁর আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন ছোট্ট একটি বিবৃতিতে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কিছু তো একটা করতেই হতো। আমি শুধু একটু আশার আলো দেখাতে চেয়েছিলাম। মানুষকে অনুপ্রেরণা দিলে সবকিছু প্রতিরোধ করা যায়। সেই জন্যই তো ইম্যাজিন গানটা বাজিয়েছিলাম।’’

বিটলস্‌ খ্যাত লেননের এই গান বিশ্বশান্তির কথাই শুনিয়ে এসেছে। বলেছে মানবতার কথা, শান্তি, এক বিশ্ব-এক প্রাণের কথা।

মানবতাকে শান্তনা সৌধের। (ডানদিকে) অশ্রুবিন্দুতে আইফেল টাওয়ার। রস ম্যাকিনটসের আঁকা।

নিতান্তই কাকতালীয়, তবে প্যারিসের জঙ্গিহানা ঘটানো ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অন্যতম এক ব্রিটিশ জঙ্গিও তার কৈশোরের ‘আইডল’ জন লেননের নামেই নিজের নাম রেখেছে জেহাদি জন। যাঁর গান বলে, ‘গিভ পিস আ চান্স’, তার নাম নিয়েই জঙ্গি মুণ্ডচ্ছেদ করেছে দিনের পর দিন। ডেভিড অবশ্য মনে করেন, নিরাশ মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারে লেননের গান— ‘‘ইউ মে সে আই অ্যাম আ ড্রিমার, বাট আই অ্যাম নট দ্য ওনলি ওয়ান/আই হোপ সাম ডে ইউ উইল জয়েন আস, অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড উইল বি অ্যাজ ওয়ান...।’’

ছবি: সোশ্যাল সাইট থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন