তেল লুঠে ঢল, ট্যাঙ্কার ফেটে ছাই ১৫১ জন

আজ সকালে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১৫১ জনের। আহতের সংখ্যা ১৪০ জনেরও বেশি। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন বেশ কিছু মহিলা। এবং শিশুরাও।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ০৩:৩০
Share:

ভস্মীভূত: পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের বাহওয়ালপুরে রবিবার একটি তেলের ট্যাঙ্কার উল্টে যাওয়ার পরে তাতে বিস্ফোরণ ঘটে। ঝলসে মারা যান ১৫১ জন। ছবি: পিটিআই।

ভোর তখন সাড়ে ছ’টা। মোটরওয়ে পুলিশের কাছে খবর গিয়েছিল, আস্ত এক তেলের ট্যাঙ্কার উল্টে গিয়েছে জাতীয় সড়কে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু তত ক্ষণে খবর রটে গিয়েছে আশপাশের এলাকাতেও। শ’খানেক মানুষ ভিড় জমিয়েছেন ‘ফ্রি’ তেল বাড়ি নিয়ে যাবেন বলে। ট্যাঙ্কারের গায়ে সেঁটে থাকা ভিড়টা পুলিশ দ্রুত সরাতে চাইলেও কথা কানে তোলেননি কেউই। গেরস্থালির জ্যারিকেন, বোতল, বালতি হাতে নিয়েই চলছিল ট্যাঙ্কার থেকে উপচে পড়া পেট্রোলের দেদার লুঠ। মিনিট দশেক। তার পরেই হঠাৎ কানফাটা বিস্ফোরণ। তেলের ট্যাঙ্কার থেকে বিশাল আগুনের গোলা তখন গ্রাস করে ফেলেছে অনেকটা এলাকা। ট্যাঙ্কারের কাছে জড়ো হওয়া মানুষগুলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝলসে নিথর হয়ে গেলেন।

Advertisement

আজ সকালে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১৫১ জনের। আহতের সংখ্যা ১৪০ জনেরও বেশি। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন বেশ কিছু মহিলা। এবং শিশুরাও।

পঞ্চাশ হাজার লিটার পেট্রোল নিয়ে করাচি থেকে লাহৌর যাচ্ছিল ট্যাঙ্কারটি। বহওয়ালপুর জেলায় আহমেদপুর শারকিয়ার কাছে জাতীয় সড়কে উল্টে যায় সেটি। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, টায়ার ফেটেই বিপত্তি। গাড়ি ওল্টানোর খবর পাশের মৌজা রমজান গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিল দ্রুত। সাইকেল-মোটরবাইক নিয়ে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ পুলিশের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই তেল সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মর্মান্তিক পরিণতি হয় তার। আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সঙ্গে মোটরবাইকগুলোও পুড়ে খাক হয়ে যায় নিমেষে।

Advertisement

তেলে আগুন লাগল কী ভাবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ওখানে দাঁড়িয়েই সিগারেট খাচ্ছিলেন কয়েক জন। তাঁদের কেউই হয়তো জ্বলন্ত সিগারেট ছুড়ে ফেলেছিলেন তেলে ভিজে যাওয়া রাস্তায়। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মৃতদের মধ্যে অন্তত ১২০ জন হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মারা গিয়েছেন। এবং এঁদের প্রত্যেকেরই দেহ এতটা পুড়ে গিয়েছে যে, ডিএনএ পরীক্ষা না করে কাউকেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে না।

দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় তিনটি হেলিকপ্টার। পঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নিজের কপ্টারটিও উদ্ধারকাজে ব্যবহারের জন্য দেন। প্রায় একশো জন আহতকে জেলা সদর এবং বহওয়ালপুর ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। গুরুতর আহতদের স্থানান্তরিত করা হয়েছে মুলতানের সেনা হাসপাতালে।

পাকিস্তান মোটরওয়ে পুলিশের মুখপাত্র ইমরান শাহ জানিয়েছেন, পুলিশ বারবার বারণ করা সত্ত্বেও গ্রামবাসীরা তেল তোলা বন্ধ করেননি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমাদের কথা শুনলে হয়তো এত বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। আমার জীবদ্দশায় এত ভয়াবহ কাণ্ড আগে দেখিনি।’’ একই কথা শোনা গেল মহম্মদ সাব্বিরের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘ট্যাঙ্কারের চালকও বহু বার চিৎকার করে সকলকে বারণ করেছিলেন। কিন্তু কেউই তাতে আমল দেননি।’’

পাক পঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ মৃতদের পরিবার পিছু কুড়ি লক্ষ এবং আহতদের ১০ লক্ষ পাক টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। টুইটার, ফেসবুকে শোকবার্তা উপচে পড়ছে। আজকের এই ঘটনা ফিরিয়ে এনেছে বছর দু’য়েক আগের স্মৃতি। সে বার করাচিতে তেলের ট্যাঙ্কারের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষে পুড়ে মারা যান ৬২ জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন