মার্কিন একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে আগে তোলা পাঁচ বাংলাদেশি জঙ্গির ছবি। পিছনে আইএস-এর পতাকা। দাবি করা হয়েছে, গুলশনের রেস্তোরাঁয় হানাদারিতে অংশ নিয়েছে এরাও। তবে এদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
শুক্রবার সকালে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে ঝিনাইদহের একটি মন্দিরের সেবায়েতকে। আর শুক্রবার মধ্য রাতে এবং শনিবার সাতসকালে খুনের চেষ্টা করা হল আরও দুই মন্দিরের পুরোহিতকে। এ দিনই আর এক মন্দিরের পুরোহিত হত্যার হুমকি চিঠি পেয়েছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশে খুন হয়েছেন একের পর এক পুরোহিত, মুক্তমনা ব্লগার, সংখ্যালঘু মানুষ, এমনকী পুলিশকর্তার স্ত্রীও। তার মধ্যেই আবার শুক্রবার রাতে জঙ্গি হানায় কেঁপে উঠেছে ঢাকার গুলশনে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হোলি আর্টিজান বেকারি। শনিবার সকালে সেই রেস্তোরাঁ জঙ্গিমুক্ত হয়।
আর শনিবারই ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ সাতক্ষীরার ব্রহ্মরাজপুর শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দিরের পুরোহিত ভবসিন্ধু বরকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা করল এক দল অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী। গুরুতর জখম ৪৮ বছরের ভবসিন্ধুকে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁর অবস্থার অবনতি হওয়ায় দুপুর বেলায় হেলিকপ্টারে করে তাঁকে ঢাকার বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এই হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাতক্ষীরার ধূলিহর থেকে আলমগির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
আহত ভবসিন্ধুর বাড়ি সাতক্ষীরার বাজুয়াডাঙা গ্রামে। পাঁচ বছর ধরে তিনি
মন্দিরের কাজ করতেন। স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে তিনি ওই মন্দিরেই থাকতেন। ঘটনার সময় মন্দিরে ঘুমিয়ে ছিলেন ভবসিন্ধু। ভবসিন্ধুর স্ত্রী সুমিত্রাদেবী জানিয়েছেন, হাফ প্যান্ট পরা ও কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা সাত-আট জন দুষ্কৃতী প্রথমে মন্দিরের চৌকিদারকে বেঁধে ফেলে। তার পর ভবসিন্ধুকে ডাকে। ভবসিন্ধু বেরিয়ে আসতেই দুষ্কৃতীরা
তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ভবসিন্ধু। পুরোহিত মারা গিয়েছেন মনে করে দুষ্কৃতীরা তাঁকে ফেলে রেখে চম্পট দেয়। এই সময় সুমিত্রাদেবী বেরিয়ে এসে এই সব কাণ্ড দেখে চিৎকার-চেঁচামিচি শুরু করে দেন। সুমিত্রাদেবীর চিৎকার শুনে ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে ভবসিন্ধুবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সাতক্ষীরা সদর থানার এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, ভবসিন্ধুকে খুনের চেষ্টার আগে ওই মন্দিরের কাছেই কালেরডাঙা মোড়ে আব্দুল মাজেদ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ডাকাতি করে ওই দুষ্কৃতী দলটি। ওই পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, আব্দুল মাজেদও বলেছে, ওই দুষ্কৃতীরাও হাফ প্যান্ট পরেছিল এবং তাদের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল।
এর আগে শুক্রবার রাত বারোটা নাগাদ কিশোরগঞ্জের নগুয়া এলাকার বিবেকানন্দ পাঠাগার ও মন্দিরের পুরোহিত পলাশ চক্রবর্তীর (৪৬) উপরে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। মন্দিরের পাশেই একটি বাড়িতে থাকতেন পলাশ। শুক্রবার রাতে তাঁর বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে দুষ্কৃতীরা। পলাশ দরজা খুলতেই মুখ ঢাকা দুষ্কৃতীরা তাঁকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে বের করার চেষ্টা করে। এই সময় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পলাশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। পলাশ একটি শাবল নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। পলাশের ডান হাতে দুষ্কৃতীদের চপারের কোপ লেগেছে। তবে তাঁর আঘাত তেমন গুরুতর নয়।
এর মধ্যে আবার শনিবার হুমকি চিঠি পেয়েছেন বরগুনার সর্বজনীন কালীবাড়ি মন্দিরের পুরোহিত সঞ্জয় চক্রবর্তী। এ দিন সকালে মন্দিরে ঢুকে এই চিঠি পান তিনি। ‘পুরোহিত হত্যা সংগঠন’-এর নামে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘তোর মাথা নিয়ে যাব, এই আমাদের ইচ্ছা। পুরোহিত তোর মৃত্যু আমাদের হাতে। আমরা এখন বরগুনা জেলায় কিলিং মিশনে আছি।’ এই চিঠি পাওয়ার পরে বরগুনা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সঞ্জয়।
ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে খুন হয়েছেন একাধিক পুরোহিত। গত কালই খুন হয়েছেন ঝিনাইদহের মধুপুরের কাস্টসাপরা রাধামদন গোপাল মঠের পুরোহিত শ্যামানন্দ দাস। এ বছরের ৭ জুন ঝিনাইদহেই গলা কেটে খুন করা হয় পুরোহিত আনন্দগোপাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। ২১ ফেব্রুয়ারি খুন করা হয় পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের সন্তগৌরীয় মঠের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়কে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রকাশিত ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’-এর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে গত ছ’মাসে খুন হয়েছেন পাঁচ জন হিন্দু। খুন হয়েছেন কয়েক জন খ্রিস্টান যাজক এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসীও।