অস্ট্রীয় চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান। ছবি: এএফপি।
দশ বছর পরে পট পরিবর্তন অস্ট্রিয়ায়। গত সোমবার অতি-দক্ষিণ ফ্রিডম পার্টি এ দেশের জোট সরকারে যোগ দিয়েছে। তাতেই ভাঁজ গোটা ইউরোপের কপালে। অস্ট্রিয়ার নতুন চ্যান্সেলর এবং ইউরোপের সবচেয়ে নবীন নেতা সেবাস্টিয়ান কুর্জ আজ ব্রাসেলসে গিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরা ইউরোপের স্বার্থেই কাজ করবেন।
আমেরিকা, ব্রিটেন জুড়ে যখন প্রবল অতি-দক্ষিণ হাওয়া, তখন ইউরোপের মূল ভূখণ্ড এত দিন কিছুটা হলেও আশ্বাস দিচ্ছিল রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। সন্ত্রাস এবং শরণার্থী সঙ্কটের আবহে বছরের গোড়ায় নেদারল্যান্ডস, তার পরে ফ্রান্স এবং জার্মানি— সর্বত্রই অতি-দক্ষিণীরা মাথা চাড়া দিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষমেশ ক্ষমতায় আসেননি। এখন অস্ট্রিয়ার ছন্দপতন ফের চিন্তা বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে অতি-দক্ষিণ জোটসঙ্গীকে সরকারে সামিল করেও কনজারভেটিভ পিপলস পার্টির মুখ সেবাস্টিয়ান আজ বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি ইউরোপে ভাঙন ধরতে দেবেন না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষেই কাজ করবেন।
বস্তুত সোমবার শপথ নেওয়ার পরপরই ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক ৩১ বছরের সেবাস্টিয়ানকে চিঠি দিয়ে উদ্বেগের কথা জানান। জবাবে সেবাস্টিয়ান আশ্বস্ত করেন তাঁকে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ জুঙ্কারকেও সেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। ব্রাসেলসে জুঙ্কার বলেছেন, সেবাস্টিয়ানের সরকারের কাজ দিয়েই যা বিচার করার, করবেন। আপাতত ভরসা রাখছেন অস্ট্রিয়ার নয়া চ্যান্সেলরের কথায়। জুঙ্কারের মতে, ‘‘এই সরকার ইউরোপের পক্ষে। সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’’
সেবাস্টিয়ানের জোটসঙ্গী ফ্রিডম পার্টির অতীত মোটেই ‘সুখকর’ নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই দল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল প্রাক্তন নাৎসি নেতাদের হাত ধরে। শুধু ইইউ নয়, অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ফ্যান ডের বেলেন-ও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আগে নানাবিধ প্রতিশ্রুতি আদায় করে তবেই নব্য নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রেসিডেন্টও বুঝেছেন, না আঁচালে বিশ্বাস নেই!
তবে অভিবাসী নীতিতে কিছু পরিবর্তন আনছে নয়া সরকার। অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ করলেই মোবাইল আটক করা হতে পারে। প্রয়োজনে বাজেয়াপ্ত করা হবে অর্থও। চিকিৎসায় গোপনীয়তা বজায় রাখা হবে না। সেবাস্টিয়ান নিজেও বলেছেন, ‘‘বেআইনি অভিবাসীদের রুখতে হবে এবং তাঁদের নিজেদের দেশেই ফেরত পাঠানো হবে।’’ অস্ট্রিয়ার পাশের দেশ হাঙ্গেরি এবং কাছাকাছি পোল্যান্ডেও অভিবাসী-বিরোধী অতি দক্ষিণ সরকারই ক্ষমতায়। কট্টর অবস্থান ইতালিরও। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁও সেই পথে। যে সব শরণার্থীকে ফ্রান্সে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়, তাঁদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে আগামী বছরই বিল আনছেন তিনি।