(বাঁ দিকে) বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ়-জামান (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সে দেশের সেনাবাহিনীর কোনও বিরোধ নেই। সোমবার ঢাকায় এক সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছে বাংলাদেশি সেনা। সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে বিবিধ আলোচনা শুরু হয়েছিল। এই আবহে বাংলাদেশি সেনার এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ়-জ়ামানও সম্প্রতি জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদের নির্বাচন হওয়া উচিত। ওয়াকার আরও জানান, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের অধিকার কেবলমাত্র একটি নির্বাচিত সরকারেরই রয়েছে। তাঁর ওই মন্তব্যের পর সরকার এবং সেনার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা আরও বৃদ্ধি পায় বাংলাদেশের অন্দরে। এই অবস্থায় নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল বাংলাদেশি সেনা।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা এবং সমসামরিক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার দুপুরে ঢাকার সেনানিবাসে সাংবাদিক বৈঠক হয়। সেখানে ছিলেন বাংলাদেশি সেনার মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নাজিম-উদ-দৌলা এবং সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশন্স ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। সেখানেই বাংলাদেশি সেনার তরফে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করা হয়। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, সেনার তরফে জানানো হয়েছে, সরকার ও সেনাবাহিনী একে অপরের বিপরীতে দাঁড়ায়নি এবং একসঙ্গেই কাজ করছে।
সেনা এবং সরকারের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে সাম্প্রতিক গুঞ্জন নিয়েও মুখ খোলেন বাংলাদেশি সেনার মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক। তিনি বলেন, “যেভাবে কথা আসছে যে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিশাল মতপার্থক্য হয়েছে, বিভেদ রয়েছে, মিডিয়াতে বিষয়টি যেভাবে আসছে, এ রকম আসলেই কিছু হয়নি। আমরা একে অপরের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সুন্দরভাবে কাজ করছি। এটা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই।” সরকার এবং সেনাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করছে, এমন ভাবনারও কোনও কারণ নেই বলে মনে করছেন বাংলাদেশের ওই সেনাকর্তা। তাঁর বক্তব্য, সরকার এবং সেনা একসঙ্গেই কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও তা-ই করবে।
ওয়াকারের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, সেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সেনার এই বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। সম্প্রতি আমেরিকার প্রস্তাব মেনে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সঙ্গে ‘মানবিক করিডর’ স্থাপন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জেনারেল ওয়াকার। তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর বিষয়ে সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকার থেকেই আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই হতে হবে। এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে। যা করার, তা জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে করতে হবে।’’