বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচনী সমঝোতার জন্য অন্য দলগুলির জন্যও দরজা খুলে রাখতে চাইছে জামাত। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশে ভোটের আগে জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা চাইছে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত)। বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ জামাতের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ‘এক আসনে এক প্রার্থী’ দেওয়ার কৌশল নিয়েছে তারা। সেই কারণে ‘সমমনস্ক’ সাত দলের বাইরেও অন্য দলগুলির জন্যও দরজা খুলে রাখতে চাইছেন জামাত নেতৃত্ব।
শনিবার জামাত নেতা আমির শফিকুর রহমান চট্টগ্রামে একটি সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, “আমরা কনভেনশনাল (প্রচলিত) কোনও জোট করব না। কিন্তু অনেকগুলো দল এবং শক্তির সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী সমঝোতা হবে।” ‘প্রথম আলো’-র প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিটি আসন জয়-পরাজয়ের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে চাইছে জামাত। তাদের কৌশল হল, প্রতিটি আসনে তাদের বা তাদের সমর্থিত এক জনই প্রার্থী থাকুক। প্রয়োজনে অন্য দলের প্রভাবশালী প্রার্থী বা মনোনয়ন না-পাওয়া কাউকে সমর্থন করতেও দ্বিধা নেই তাদের।
তবে ‘সমমনস্ক’ সাত দল ছাড়াও আর কোন কোন দলের সঙ্গে তারা সমঝোতা করতে চাইছে, তা স্পষ্ট করেনি জামাত। তবে জামাতের ‘সমমনস্ক’ দলগুলির কয়েক জন নেতাকে উদ্ধৃত করে ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, নির্বাচনী আসন সমঝোতায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও গণ অধিকার পরিষদকেও পাশে পেতে চায় জামাত। যদিও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, এনসিপি কোনও আসনের জন্য কারও সঙ্গে কোনও ধরনের সমঝোতা করবে না।
ইতিমধ্যেই পাঁচ দফা দাবিকে সামনে রেখে সমমনোভাবাপন্ন সাতটি রাজনৈতিক দলের জোট গড়েছে জামাত। গত কয়েক মাস ধরেই গণভোট-সহ বিভিন্ন দাবিতে জামাতের পাশে দাঁড়িয়ে যৌথ ভাবে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে সাতটি ইসলামপন্থী দল— ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি। আগামী বছরের সংসদ নির্বাচনে তাদের নিয়ে জোট গড়ার বার্তা দিয়েছেন জামাত নেতা হামিদুর।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার জমানায় জামাতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। গত বছরের ৫ অগস্ট হাসিনা সরকারের পতন এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার জামাত এবং তাদের ছাত্র শাখা ‘ইসলামি ছাত্র শিবিরের’ উপর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। এর পরে গত এক বছর ধরে ধীরে ধীরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর প্রভাব বেড়েছে ‘১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি’ হিসেবে পরিচিত জামাতের। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিএনপি, বিভিন্ন বামপন্থী শক্তি এমনকি, অন্যান্য ইসলামি দলগুলিও তা নিয়ে ক্ষুব্ধ। কিন্তু সম্প্রতি ঢাকা, জাহাঙ্গিরনগর, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে পর্যুদস্ত করে জয়ী হয়েছে ইসলামি ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল।