মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
আগামী বছরের এপ্রিল মাসের গোড়ায় যে কোনও দিন বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের নির্বাচন হবে। শুক্রবার সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা জানিয়েছেন। জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনও একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে।’’
তাঁর এই ঘোষণার ভিত্তিতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে দেশবাসীর সামনে ভোটের বিস্তারিত ‘রোডম্যাপ’ (নির্ঘণ্ট) প্রকাশ করবে বলেও জানিয়েছেন ইউনূস। ঘটনাচক্রে, ‘ইউনূসের সমর্থক’ হিসাবে চিহ্নিত ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি’ (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত) গত সোমবার (২ জুন) এপ্রিল মাসে নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করেছিল। তার পরেই ইউনূসের এই ঘোষণা। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল তথা বিএনপি নেতৃত্ব ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপর ক্রমশ চাপ বাড়ালেও জামাত নেতৃত্ব সোমবার ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর স্পষ্ট করেছিলেন, তাঁরা চলতি বছরে ভোট চান না।
ইউনূসের সঙ্গে ওই বৈঠকের পরে জামাতের ‘নায়েবে আমির’ সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছিলেন, ‘‘নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে তিনটি বক্তব্য এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুন। কিছু রাজনৈতিক দল বলেছে ডিসেম্বরের মধ্যে। আর আমাদের পক্ষ থেকে আমরা বলেছি জুন এবং মে মাস আবহাওয়াগত ভাবে নির্বাচনের উপযোগী নয়। তাহলে মে, জুন বাদ দিলে ওঁর (প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস) প্রতিশ্রুতি পূরণের যে সময়সীমা, তা হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল। এর মধ্যে একটি রোজা রয়েছে। আমরা বলেছি, এর ভেতরেই আপনি একটি তারিখ ঘোষণা করুন।’’
ঘটনাচক্রে, বাংলাদেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত, শেখ হাসিনার জমানায় ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষিত জামাতের নির্বাচনী নির্ঘণ্টের ‘দাবি’র সঙ্গে পুরোপুরি মিলে গিয়েছে ইউনূসের ঘোষণা! জাতির উদ্দেশে ভাষণে শুক্রবার ইউনূস বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকারের বড় দায়িত্ব পরিচ্ছন্ন, উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ এবং বিপুল ভাবে অংশগ্রহণের পরিবেশে একটি নির্বাচনের আয়োজন করা। এমন একটি নির্বাচন করা, যাতে দেশ ভবিষ্যতে নতুন সঙ্কটে না পড়ে। এ জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। যে প্রতিষ্ঠানগুলি নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত, সেগুলিতে যদি সুশাসন নিশ্চিত করা না যায়, তা হলে ছাত্র-জনতার সব আত্মত্যাগ বিফলে যাবে।’’