জেমস ফোলির পর স্টিভেন সটলফ। চোদ্দো দিনের ব্যবধানে ইন্টারনেটে ফের এক মার্কিন সাংবাদিকের মুণ্ডচ্ছেদের ভিডিও। যার শিরোনাম ‘আমেরিকার কাছে দ্বিতীয় বার্তা।’ আইএসের (ইসলামিক স্টেট) পোস্ট করা গত কালের ভিডিওটির সত্যতা আজই স্বীকার করেছে আমেরিকা। সটলফ যে তাদেরই নাগরিক, বিশেষ তদন্তের পরে মেনে নিয়েছে আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।
আজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কড়া ভাষায় জানান, জঙ্গিদের ওই ভিডিওটি ‘বর্বর ও হিংসাত্মক।’ কিন্তু তাতে মার্কিন প্রশাসন বিচলিত নয়। জঙ্গিদের প্রতি তাঁর পাল্টা হুমকি, “আমাদের হাত কতটা লম্বা, ওরা জানে না। উপযুক্ত জবাব ওরা পাবেই।” একই সুরে তোপ দেগেছেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরিও। তিনি জানান, “কাপুরুষের মতো মুখোশের আড়ালে থেকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালাচ্ছে ওরা। যত দিন লাগুক, এর শাস্তি ওরা পাবেই।”
জঙ্গিদের বার্তা দিতেই আজ বাগদাদে অতিরিক্ত ৩৫০ সেনা পাঠান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অগস্টের প্রথম থেকেই ইরাকে বিমানহানা অব্যাহত রেখেছে মার্কিন সেনা। সাংবাদিক হত্যার আগের দিন অর্থাৎ গত সোমবারও ইরাকের ১২৩টি জায়গায় হামলা চালিয়েছে আমেরিকা।
তবে ওবামা নিজের অবস্থানে অনড় হলেও কিছুটা চিন্তিত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। কারণ সাম্প্রতিক এই ভিডিওতে জঙ্গিরা ব্রিটিশ এক নাগরিককে তাদের পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেই বার্তা পাওয়ার পরে আজই তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন ক্যামেরন। আমেরিকার মতো তাদেরও ইরাকে বিমানহানা চালানো উচিত কি না, বৈঠকে ওঠে সে প্রশ্নও। যদিও সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সব রাস্তাই খোলা রাখতে চাইছে ব্রিটেন।
ইরাক এবং সিরিয়ার যুদ্ধে আইএসের হয়ে নাম লেখানো ব্রিটিশ নাগরিকদের একটা বড় অংশ সম্প্রতি ফিরে এসেছে ব্রিটেনে। ইতিমধ্যেই বড় কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলার আশঙ্কায় কড়া সতর্কতা জারি হয়েছে দেশ জুড়ে। তার উপর আবার এই ভিডিওটি ব্রিটেনের অস্বস্তি আরও বাড়াল বলেই মনে করা হচ্ছে।
ফোলির ভিডিওতে যে জঙ্গিকে কথা বলতে শোনা গিয়েছিল, তার উচ্চারণ ব্রিটিশদের মতো হওয়ায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, সটলফকেও হত্যা করেছে ওই একই জঙ্গি।
২০১৩ সালে সিরিয়া থেকে অপহৃত হওয়ার পরে তিরিশোর্ধ্ব সাংবাদিক সটলফকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল ফোলি-হত্যার ভিডিওতেই। ওয়াশিংটন পিছু না হটলে ফোলির পরেই সটলফের পালা তখনই হুমকি দেয় জঙ্গিগোষ্ঠী।
ফোলির মতো এই ভিডিও ঘিরেও তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় গত কাল। অনেকেরই দাবি, সাম্প্রতিক ভিডিওটি আগেরটির চেয়েও নৃশংস। ফোলির ভিডিওয় শুধু জঙ্গিরাই ‘বার্তা’ দেয় ওবামাকে। এ বারের ভিডিওতে নিহত হওয়ার আগে ওবামাকেই দায়ী করে সটলফও পরোক্ষ বার্তা দিয়েছেন।
পরনে ফোলির মতোই কমলা জোব্বা, মরুভূমিতে হাঁটুর মুড়ে বসে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ওবামাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আমেরিকাবাসীর জীবন ও স্বার্থের কথা ভেবেই তো আপনার বিদেশনীতি! সেইমতো আপনি ইরাকে সেনা পাঠাচ্ছেন। কিন্তু এর মূল্য আমায় কেন দিতে হবে?”
সেই উত্তর পাননি সটলফ। পাননি তাঁর মা শিরলি সটলফও। মৃত্যুর সপ্তাহ খানেক আগে জঙ্গিদের কাছে ছেলের প্রাণভিক্ষা চাইলেও তাতে বিশেষ কান দেয়নি জঙ্গিরা।
নিহত সাংবাদিককে সর্বত্র মার্কিন বলা হলেও সটলফকে আজ আবার নিজেদের দেশের নাগরিক বলে দাবি করেছে ইজরায়েল। সে দেশের প্রায় সব কাগজেই আজ ফলাও করে ছাপা হয়েছে তাঁর মুণ্ডচ্ছেদের ঘটনা। সে দেশের কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি, জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক হলেও ২০০৫ সালে সটলফ পাকাপাকি ভাবে চলে আসেন ইজরায়েলে এবং সে দেশের নাগরিকত্ব নেন। প্রাণের ঝুঁকি ছিল বলেই এই পরিচয় এত দিন প্রকাশ করা হয়নি।