জীবনের জয়-গানে... সাহিত্যে নোবেল ডিলানকে

নামটা ঘোষণা হওয়ার পরে অনেকেই কানকে বিশ্বাস করতে পারেননি। ঠিক শুনছি তো! মুহূর্তের বিস্ময় কাটিয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছে ভক্তকুল। গুনগুন করতে করতে ফিরে গিয়েছেন ‘হাউ মেনি রোডস মাস্ট আ ম্যান ওয়াক ডাউন/ বিফোর ইউ কল হিম আ ম্যান...’-এর স্রষ্টার কাছেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৩
Share:

নামটা ঘোষণা হওয়ার পরে অনেকেই কানকে বিশ্বাস করতে পারেননি। ঠিক শুনছি তো! মুহূর্তের বিস্ময় কাটিয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছে ভক্তকুল। গুনগুন করতে করতে ফিরে গিয়েছেন ‘হাউ মেনি রোডস মাস্ট আ ম্যান ওয়াক ডাউন/ বিফোর ইউ কল হিম আ ম্যান...’-এর স্রষ্টার কাছেই।

Advertisement

এ বার সাহিত্যের নোবেল বব ডিলানের।

নোবেলের ইতিহাসে এমন জনপ্রিয় নাম শেষ যে কবে উঠে এসেছিল! বব ডিলান তো নিছক এক মার্কিন গায়ক নন। ডিলান একটা যুগের নাম। একটা আন্দোলন। দিনবদলের গান বাঁধা একটা কলম, গিটার আর একটা হারমোনিকা। এমন একটা নাম, যাঁর সঙ্গে গলা মেলায় সারা পৃথিবী।

Advertisement

ডিলানকে সাহিত্যের নোবেল দেওয়ার মধ্যে দিয়ে ঔপন্যাসিক-কবি-গল্পকারের বাঁধা গত থেকে বেরিয়ে এল সুইডিশ অ্যাকাডেমি। ছক ভাঙল তারাও। অ্যাকাডেমির সচিব সারা দানিয়ুসের কথায়, ‘‘এতে অনেকে অবাক হতে পারেন। কিন্তু আশা করি সমালোচনা করবেন না।’’

সমালোচনার কথা উঠছে কেন? ‘গীতিকার’কে বেছে নেওয়ার জন্য? বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়া কার্যত দু’ভাগ হয়ে যায় এই বিতর্কে। এক দল ভেসেছে উচ্ছ্বাসে, অন্য দলটি কটাক্ষে। সলমন রুশদির মতো সাহিত্যিক কিন্তু প্রথম দলে। তাঁর মতে, ডিলানকে সম্মানিত করে নোবেল কমিটি সাহিত্যের সংজ্ঞাকেই আরও প্রসারিত করল। রুশদি লিখেছেন, অর্ফিয়ুস থেকে ফৈজ, গান আর কবিতার যোগ চিরকালই নিবিড়। লিখেছেন, দিনটা ডিলানের গান শুনেই কাটাতে চান।

মনে রাখা ভাল, ভারতে আসা একমাত্র সাহিত্যে নোবেল ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’-র জন্য। সেটিও গীতিকবিতার সঙ্কলন! ডিলানের সৃষ্টিকে নোবেল কমিটি নিজে তুলনা করেছে কিংবদন্তি গ্রিক কবি হোমার এবং সাফোর রচনার সঙ্গে। দানিয়ুসের কথায়, ‘‘হোমার আর সাফোর রচনা (‘পোয়েটিক টেক্সট’) ছিল পারফর্ম করার জন্য। ডিলানের ক্ষেত্রেও তাই। আমরা এখনও হোমার বা সাফো পড়ি, উপভোগ করি। তাই ডিলানের রচনাও আমরা পড়তে পারি এবং আমাদের পড়া উচিত।’’ কমিটির মতে, গত ৫৪ বছর ধরে তাঁর গানের কাব্যভাষায় নিজেকে পুনরাবিষ্কার এবং নতুন আত্মপরিচয় খুঁজে বার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ডিলান। তাই ডিলানই এ বারের সম্মান পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতম।

এর আগে গ্র্যামি থেকে অস্কার, সবই এসেছে ডিলানের ঝুলিতে। বস্তুত বার্নার্ড শ-এর পর ডিলানই সেই বিরল প্রতিভা, যিনি একই সঙ্গে অস্কার এবং নোবেল দুই-ই পেলেন।

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন...

এ বারও নোবেল
পেলেন না যাঁরা

১৯৪১ সালের ২৪ মে মিনেসোটার ডুলুথে এক ইহুদি পরিবারে জন্ম ডিলানের। আসল নাম রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান। প্রিয় কবি ডিলান টমাসের নামের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পরে রূপান্তরিত নাম হয়, বব ডিলান। ডুলুথের খনি অঞ্চল হিবিংয়ে শৈশব কাটিয়েছেন। কিশোর বয়স থেকেই স্কুলপালানো ছেলের ব্যান্ডে হাত পাকানো শুরু। বিট জমানার লোকশিল্পী উডি গাথরির অনেকটা প্রভাব পড়েছিল ডিলানের উপরে। ষাটের দশকের গোড়ায় ডিলান যখন ক্যাম্পাস-কফি হাউস-ক্লাবে ঘুরে নিজেকে চেনাতে শুরু করেছেন, তখন আমেরিকা জুড়েই লোকগানের পুনরুজ্জীবন ঘটছে।

১৯৬১ সালে নিউ ইয়র্ক যাত্রা। গ্রিনউইচ গ্রামের বিভিন্ন কাফে ক্লাবে অনুষ্ঠান শুরু। তখন ডিলান সবে কুড়ির ঝোড়ো যুবক। সাদা মানুষের গলায় শ্রোতারা পেলেন কালো মানুষের গান। নিউ ইয়র্কে এসে বিখ্যাত কলম্বিয়া রেকর্ডস-এর জন হ্যামন্ডের চোখে পড়লেন তিনি। প্রথম অ্যালবাম ‘বব ডিলান’ (১৯৬২)। তার পর ‘ব্রিঙ্গিং ইট অন ব্যাক হোম’ ও ‘হাইওয়ে ৬১ রিভিজিটেড’ (১৯৬৫), ‘ব্লন্ড অন ব্লন্ড’ (১৯৬৬), ‘ব্লাড অন দ্য ট্র্যাকস’ (১৯৭৫), ‘ও মার্সি’ (১৯৮৯) ‘টাইম আউট অব মাইন্ড’ (১৯৯৭) এবং ‘মর্ডান টাইমস’ (২০০৬)। ডিলান শুধু এক জন গায়ক বা গীতিকার নন, তিনি একটি প্রজন্মের কণ্ঠস্বর। সেই স্বর মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, যুদ্ধে ধ্বস্ত ভিয়েতনামের পক্ষে সরব। উডস্টক থেকে বাংলাদেশের মুক্তিষুদ্ধ, প্রতিবাদের সুর বারবার ডিলানকে ঘিরেই মূর্ত। আবার সেই ডিলানই যখন পরে অনেক বেশি মন দিলেন রক অ্যান্ড রোল-এ, বদলে গেল সেই মানচিত্রও। পপ, ব্লুজ, গসপেল— ডিলানের পদচারণা সর্বত্র।

১৯৯৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পান মার্কিন ঔপন্যাসিক টনি মরিসন। ২৩ বছর পরে সাহিত্যে নোবেল ফিরল আমেরিকায়। ডিলানের নামটা অবশ্য কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় এসেছে। কিন্তু অনেকেই মনে করছিলেন, নোবেল কমিটি শেষ পর্যন্ত সঙ্গীতের দুনিয়াকে পুরস্কারের আওতায় আনার কথা ভাববে না। কিন্তু আজ সেই সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দিলেন লোকটি, যাঁর গলায় ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’ বা ‘দ্য টাইমস দে আর আ চেঞ্জিং’ এক কালে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতীয় সঙ্গীতের রূপ নিয়েছিল। বারাক ওবামা থেকে বিল ক্লিন্টন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দোরগোড়ায় ডেমোক্র্যাট শিবিরও আজ ডিলানকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন