Karakoram

১৪ বছর পর... মায়ের মতোই পাকিস্তানের দুর্গম কারাকোরামে প্রাণ হারালেন পর্বতারোহী ছেলে

মায়ের মৃত্যুর ১৪ বছর পর মায়ের মতোই কারাকোরামে প্রাণ হারালেন তিনিও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ১২:৪৭
Share:

নাঙ্গাপর্বত অভিযানের আগে টম ব্যালার্ড এবং ড্যানিয়েল নার্ডি। ছবি: সংগৃহীত।

উত্তর পাকিস্তানের কারাকোরাম পর্বতমালার নাঙ্গা পর্বতকে ‘কিলার মাউন্টেন’ বা ‘খুনি পাহাড়’ বলেই চেনেন পর্বতারোহীরা। কারণ, এই শৃঙ্গে ওঠার পথে প্রাণ হারিয়েছেন, এমন পর্বতারোহীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। সেই তালিকাতেই যোগ হল আরও দু’টি নাম। প্রায় দু’সপ্তাহ নিখোঁজ থাকার পর শৃঙ্গের ৫,৯০০ মিটার উচ্চতায় দেখতে পাওয়া গেল ইতালীয় পর্বতারোহী ড্যানিয়েল নার্ডি এবং ব্রিটিশ পর্বতারোহী টম ব্যালার্ডের মৃতদেহ। ইসলামাবাদ থেকেসরকারি ভাবে তাঁদের মৃত্যুর কথা জানিয়ে দিয়েছেন ইতালীয় রাষ্ট্রদূতও। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই মৃত্যুর পিছনে ভারতের ভূমিকা আছে বলে অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তান।

Advertisement

এমন একটা পথ দিয়ে পৃথিবীর নবম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ নাঙ্গাপর্বতে (৮,১২৫ মিটার) ওঠার চেষ্টা করছিলেন এই দুই ইউরোপীয় পর্বতারোহী, যেখান দিয়ে এর আগে কেউ কখনও যাননি। তাঁরা যখন ৬,৩০০ মিটার উচ্চতায়, তখন শেষ বারের মতো যোগাযোগ করা গিয়েছিল তাঁদের সঙ্গে। তার পর গত দু’সপ্তাহ ধরে তাঁদের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। হতাশ হয়ে গত বুধবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল উদ্ধারকাজও। কিন্তু হাল ছাড়েননি এক দল স্পেনীয় পর্বতারোহী। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় পাক পর্বতারোহী রহমতুল্লা বেগও। শেষ পর্যন্ত ৫,৯০০ মিটার উচ্চতায় তাঁরা দু’টি বিন্দু দেখতে পেয়েছেন। এই দু’টি টম আর ড্যানিয়েলের মৃতদেহ বলে জানিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের ইতালি দূতাবাসও। কিন্তু দুর্গমতার কারণে এখনও তাঁদের দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ইসলামাবাদে ইতালির রাষ্ট্রদূত স্তেফানো পন্টেকর্ভো শনিবারই টুইট করে জানিয়ে দিয়েছেন , ‘খুব দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, ইতালীয় পর্বতারোহী ড্যানিয়েল নার্ডি এবং ব্রিটিশ পর্বতারোহী টম ব্যালার্ডের উদ্ধারের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। স্পেনীয় পর্বতারোহী অ্যালেক্স শিকন দু’টি সিল্যুট দেখতে পেয়েছেন। ওঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি।’

Advertisement

মা অ্যালিসনের সঙ্গে টম ব্যালার্ড (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র।

মায়ের কাছ থেকেই পাহাড়ে চড়ার পাঠ নিয়েছিলেন ৩০ বছরের যুবক টম ব্যালার্ড। আর মায়ের মতোই কারাকোরামে প্রাণ হারালেন তিনি। তাঁর মা অ্যালিসন হারগ্রিভস ছিলেন কিংবদন্তী পর্বতারোহী। ১৯৯৫ সালে প্রথম মহিলা হিসেবে তিনি অক্সিজেন এবং কোনও সাহায্য ছাড়াই একাকী উঠেছিলেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে। একই বছরে পাকিস্তানের কারাকোরাম পর্বতমালায় পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কে-টুতে সফল অভিযানের পর নীচে নামতে গিয়ে প্রাণ হারান অ্যালিস। মায়ের দেখানো পথে হেঁটেই পর্বতারোহণে একের পর এক রেকর্ড ভাঙা শুরু করেছিলেন ছেলে টমও। ২০১৫ সালে প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে একটি শীতের মরসুমে আল্পস পর্বতমালার ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গ জয়ের রেকর্ড করেছিলেন তিনি। আর মায়ের মৃত্যুর ১৪ বছর পর মায়ের মতোই কারাকোরামে প্রাণ হারালেন তিনিও।

আরও পড়ুন: মৃত জঙ্গির সংখ্যা জানতে চাওয়া লজ্জার, ইস্তফা কংগ্রেস নেতার

কিন্তু প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে তাঁদের খোঁজ পাওয়া না গেলেও হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধারের কাজ কেন শুরু হয়নি? এই প্রশ্ন উঠতেই ভারতের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে পাকিস্তান। ভারতীয় বায়ুসেনার বালাকোট অভিযানের জন্য উত্তর পাকিস্তানের আকাশে বিমান বা হেলিকপ্টার চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে দাবি পাকিস্তানের। কিন্তু দুই দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরও কেন পাকিস্তান উদ্ধারকাজে হেলিকপ্টার পাঠাল না, উঠছে সেই প্রশ্নও।

আরও পড়ুন: এগোচ্ছে কুমির, জলার ধারে টোপ নগ্ন কৃষ্ণাঙ্গ শিশু

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন