Advertisement
১১ মে ২০২৪

এগোচ্ছে কুমির, জলার ধারে টোপ নগ্ন কৃষ্ণাঙ্গ শিশু

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টোপ’ গল্পে লেখককে এক জোড়া জুতো পাঠিয়েছিলেন রাজাবাহাদুর এন আর চৌধুরী। তাঁর নিজের শিকার করা বাঘের চামড়ায় তৈরি।

জিম ক্রো মিউজ়িয়ামে থাকা সেই ছবি।

জিম ক্রো মিউজ়িয়ামে থাকা সেই ছবি।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০১:৩২
Share: Save:

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টোপ’ গল্পে লেখককে এক জোড়া জুতো পাঠিয়েছিলেন রাজাবাহাদুর এন আর চৌধুরী। তাঁর নিজের শিকার করা বাঘের চামড়ায় তৈরি। লিখেছিলেন, ‘‘চমৎকার ঝকঝকে বাঘের চামড়ার নতুন চটি। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়, পায়ে দিতে লজ্জা বোধ হয় দস্তুরমতো। ইচ্ছে করে বিছানায় শুইয়ে রাখি।’’ গল্পের শেষে জানা যায়, ‘কীপারের বেওয়ারিশ ছেলেকে’ শিকারের টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন রাজা। এ ক্ষেত্রেও তা-ই। শুধু কোনও গল্প-কাহিনি নয়। ঘোর বাস্তব। এক সময়ে আমেরিকা ও ইউরোপে কুমির শিকারের টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হত আফ্রিকান শিশুদের। সম্প্রতি এই খবর প্রকাশিত হয়েছে আফ্রিকার একটি পত্রিকায়।

বলা হত ‘গেটর বেট’। জল থেকে শিকারকে ডাঙায় তুলতে টোপ করা হত আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের। আমেরিকার লুইজ়িয়ানা, ফ্লরিডায় বেশ প্রচলিত ছিল এই প্রথা। উনিশ শতকে কুমিরের গায়ের চামড়া দিয়ে তৈরি জ্যাকেট, জুতো, বেল্টের ব্যাপক চাহিদা ছিল। কিন্তু কুমির শিকার করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে যেত। কেউ হাত খুইয়েছেন তো কেউ পা। অগভীর জলাজমিতে নেমে কুমির শিকার করতে গিয়ে মারাও গিয়েছেন অনেকে। তাই কুমির শিকারের সহজ পন্থা জলার পাশে ফাঁদ পেতে আড়াল থেকে গুলি করা। হাঁস-মুরগি-খরগোশ, ছাগলের বাচ্চা, টোপ হিসেবে সবই দামি। আফ্রিকা থেকে আনা কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসের শিশুসন্তানকে টোপ হিসেবে বসিয়ে দেওয়া হত। কখনও কখনও ক্ষতিবিক্ষত করে। কারণ রক্তের গন্ধে দ্রুত আকৃষ্ট হয় ‘শিকার’।

মানুষের এই নৃশংসতা অস্বীকার করা হয়েছে বহুবার। কিন্তু একাধিক বার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এমনই ‘খবর’ উঠে এসেছে। ১৯২৩-এ একটি মার্কিন পত্রিকায় লেখা হয়েছিল, ‘‘জলার ধারে বাচ্চাদের ছেড়ে দেওয়া হত। বন্দুকবাজ শিকারের অপেক্ষায় লুকিয়ে থাকত আশপাশে। কুমির এগোলেই গর্জন করে উঠত বন্দুক।’’ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ‘ভুয়ো সংবাদ’। কিন্তু মার্কিন মিডিয়ায় ব্যাপক ভাবে ছড়িয়েছিল খবরটি। ফলে এটা মেনে নেওয়া হয়, শ্বেতাঙ্গ মার্কিনদের কাছে এ খবর বিশ্বাসযোগ্য লেগেছে।

জিম ক্রো মিউজিয়ামে একটি ছবি মিলেছিল। ছবিটি ফ্লরিডার এক বাসিন্দার তোলা। তিনি নিজের বাড়ির দেওয়ালে টাঙিয়ে রেখেছিলেন। ছবিতে ন’টি নগ্ন আফ্রিকান শিশু। তলায় লেখা ‘অ্যালিগেটর বেট’। ১৯০৮ সালের ৩ জুন একটি প্রথম সারির মার্কিন দৈনিকে খবর হয়েছিল— ‘‘নিউ ইয়র্ক চিড়িয়াখানার এক কর্মী দু’টি কৃষ্ণাঙ্গ শিশুকে কুমিরের খাঁচায় টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছে। চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা লোকেদের কুমির দেখাতে প্রাণীগুলিকে শীতকালীন ট্যাঙ্ক থেকে গরমকালে থাকার বিশেষ ট্যাঙ্কে সরানোর দরকার হয়ে পড়েছিল। আর কোনও উপায় খুঁজে পায়নি কেউ। কুমিরের খাঁচায় বাচ্চা দু’টিকে টোপ হিসেবে ঢোকানো হয়েছিল।’’ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ পরে সাফাই দিয়েছিলেন, বিজ্ঞাপন দেখে ওই বাচ্চা দু’টির মায়েরা নিজেরাই এসেছিলেন তাঁদের কাছে। ২ ডলার করে দেওয়া হয়েছিল মহিলাদের। তা ছাড়া, বাচ্চা দু’টির কোনও ক্ষতিও হয়নি। যদিও পরের প্রশ্নটাই উঠেছিল, সেই সময়ে কৃষ্ণাঙ্গ মহিলারা লিখতে-পড়তে পারতেন না। তাঁরা বিজ্ঞাপন দেখলেন কী ভাবে! আজ অবধি এ প্রশ্নের উত্তর দেয়নি প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jim Crow Museum crocodile Alligator Bait
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE