ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। মঙ্গলবার লন্ডনে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে। ছবি: রয়টার্স।
পার্লামেন্টের সম্মতি ছাড়া ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারবে না বলে জানিয়ে দিল সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। ফলে সাময়িক ভাবে ধাক্কা খেল টেরেসা মে সরকারের ব্রেক্সিট পরিকল্পনা। গত বছরের জুন মাসে এক গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার রায় দেন ব্রিটেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছেন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। মে-র সহযোগীরা দাবি করেন, লিসবন চুক্তির ৫০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু এই মতকে চ্যালে়ঞ্জ জানিয়ে আদালতে যান কয়েক জন ব্রেক্সিট-বিরোধী। হাইকোর্টে বিরোধীদের আইনজীবী সওয়াল করেন, এই বিষয়ে পার্লামেন্টের অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন। হাইকোর্ট বিরোধীদের পক্ষে রায় দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে সরকার। এই শুনানির জন্য নজিরবিহীন ভাবে শীর্ষ আদালতের ১১ জন বিচারপতিকে নিয়ে বেঞ্চ গঠন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড নিউবার্গার আজ বলেন, ‘‘পার্লামেন্টে আইন পাশ না করিয়ে সরকার লিসবন চুক্তির ৫০ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সুপ্রিম কোর্ট সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ তবে এই বিষয়ে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের আইনসভার মত মানার দায় ব্রিটিশ সরকারের নেই বলে জানিয়েছে আদালত। স্কটল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা ব্রেক্সিটের বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন। মামলার অন্যতম প্রধান আবেদনকারী জিনা মিলারের মতে, ‘‘এই মামলায় শুনানি বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া নিয়ে হয়েছে, রাজনীতি নিয়ে নয়। প্রমাণ হয়ে গেল যে, কেবল পার্লামেন্টের অধিকারই সার্বভৌম।’’
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে যে সরকারের পরিকল্পনা ধাক্কা খেয়েছে তা ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করে নিচ্ছেন টেরেসা মে-র সহযোগীরা। তবে প্রকাশ্যে সরকারের দাবি, এই রায়ে মার্চের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পরিকল্পনার উপরে কোনও প্রভাব পড়বে না। প্রয়োজনে পার্লামেন্টে পেশ করার জন্য খসড়া বিল তৈরিও করে রেখেছে সরকার।
বিরোধী লেবার পার্টির নেতাদের মতে, ওই বিল প্রয়োজনে অনেক সংশোধন করতে হবে। কারণ, ব্রিটেনের মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্তু ইউরোপের অভিন্ন বাজার, চিকিৎসা সংক্রান্ত ‘ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি’ বা বিমান চলাচল সংক্রান্ত ‘ইউরোপিয়ান অ্যাভিয়েশনস এজেন্সি’-র মতো সংগঠনের সুযোগ তাঁরা ছাড়তে চেয়েছেন এমন কোনও প্রমাণ নেই। তাই পার্লামেন্টের নজরদারিতে, প্রয়োজনে ভোটাভুটির মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া হওয়া দরকার।