কানাডীয় সেনাবাহিনীর কর্তা হিসেবে নিজের ভূমিকাকে বড় করে দেখিয়ে এত বড় বিপদে পড়বেন, হরজিৎ সজ্জন তা সম্ভবত ভাবতে পারেননি। ছবি: রয়টার্স।
কানাডার ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠল। পার্লামেন্টে প্রবল ঝড়ের মুখে পড়লেন হরজিৎ সজ্জন। সম্প্রতি ভারত সফরে এসেছিলেন কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হরজিৎ। কানাডার সেনাবাহিনীতে কাজ করার সময় তাঁর ভূমিকা কী ছিল, ভারত সফরে এসে তা হরজিৎ সজ্জন অনেক ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন বলে অভিযোগ। সজ্জন নিজে সে অভিযোগ মেনেও নিয়েছেন। কিন্তু একাধিক বার নিজের ভূমিকা সম্পর্কে ভুয়ো দাবি করার অভিযোগ ওঠায় হরজিৎ সজ্জনের অপসারণের দাবি জোরদার হয়েছে কানাডায়।
আফগানিস্তানে তালিবান বিরোধী অভিযানে অংশ নিয়েছিল কানাডা। ২০০৬ সালে কন্দহর প্রদেশকে তালিবানের দখলমুক্ত করতে ‘অপারেশন মেডুসা’ নামে একটি অভিযান করে কানাডার বাহিনী। ভয়ঙ্কর সংঘর্ষে কন্দহর তালিবানের দখলমুক্ত হয়েছিল। কিন্তু কানাডীয় বাহিনীর ১২ জন এবং ব্রিটিশ বাহিনীর ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। সে সময় হরজিৎ সজ্জন কানাডার সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্তা ছিলেন। অপারেশন মেডুসা-তেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু গত মাসে ভারত সফরে এসে হরজিৎ সজ্জন এক ভাষণে জানান, অপারেশন মেডুসার কাণ্ডারী ছিলেন তিনিই। ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর এই মন্তব্যকে ঘিরেই ঝড় উঠেছে কানাডায়।
গত মাসে ভারত সফরে এসে যে মন্তব্য করেছিলেন কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, সেই মন্তব্যকে ঘিরেই পার্লামেন্টে তিনি ঝড়ের মুখে পড়েছেন। —ফাইল চিত্র।
বিরোধী দলনেত্রী রনা অ্যামব্রোস কানাডার হাউস অব কমনসে বলেছেন, ‘‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আবার কানাডার মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন বলে জানা গিয়েছে এবং এটা খুব বড় বিষয়।’’ ২০১৫ সালে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময়ও হরজিৎ সজ্জন একই রকম দাবি করেছিলেন বলে কানাডার বিরোধী দলনেত্রী হাউস অব কমনসকে মনে করিয়ে দেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যিনি এই ভাবে বার বার তথ্য গুলিয়ে ফেলেন, প্রধানমন্ত্রী এখনও তাঁকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পদে রেখে দিয়েছেন কী ভাবে?’’
আরও পড়ুন: কাশ্মীর সমস্যায় মধ্যস্থতা করতে চান এরদোগান, প্রস্তাবে না দিল্লির
আর এক বিরোধী দল নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা টম মুলকেয়ারও হরজিৎ সজ্জনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এমন একটা ঘটনা আপনি ঘটিয়েছেন, যার জন্য ক্ষমা চাওয়া যথেষ্ট নয়, ইস্তফা দেওয়া দরকার।’’
হরজিৎ সজ্জন নিজের ‘ভুল’ স্বীকার করেছেন। তিনি নিজের ভূমিকাকে বড় করে দেখিয়েছেন বলে মেনে নিয়েছেন এবং তার জন্য নিঃশর্তে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ত্রুদো কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘মন্ত্রী একটি ভুল করেছেন। তিনি ভুল স্বীকার করেছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন। কানাডার মানুষ এটাই চান।’’ ত্রুদো আরো বলেছেন, ‘‘এই মন্ত্রী (হরজিৎ সজ্জন) বিভিন্ন ভাবে দেশের সেবা করেছেন। একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে, একজন সৈনিক হিসেবে এবং এখন এক জন মন্ত্রী হিসেবে। তাঁর উপর আমার সম্পূর্ণ ভরসা রয়েছে।’’