কার্লা ডেল পন্টে
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে যুদ্ধাপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করতে হাতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের কমিশনের এক প্রাক্তন সদস্য। সিরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে ওই কমিশন।
যুদ্ধাপরাধ নিয়ে কর্মরত প্রবীণ আইনজীবী কার্লা ডেল পন্টে রাষ্ট্রপুঞ্জের তদন্ত কমিশনে কাজ করেছেন টানা পাঁচ বছর। এ বার অবসরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। রবিবার এক সাক্ষাৎকারে সুইস সংবাদমাধ্যমে তিনি দাবি করেছেন, ‘‘আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যথেচ্ছ প্রমাণ রয়েছে। আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত।’’
আরও পড়ুন: ট্রাম্পকে সংযত থাকার আর্জি জানালেন শি
কিন্তু তাঁর আক্ষেপ অন্য জায়গায়। কারণ সিরিয়ার যুদ্ধাপরাধ নিয়ে বিচারের জন্য কোনও আন্তর্জাতিক আদালত তৈরি হয়নি বা আইনজীবীও রাখা হয়নি। তাই তাঁর মতে, এই বিচার অধরাই রয়ে যাবে। কার্লার কথায়, ‘‘এই জন্যই পরিস্থিতি এতটা হতাশাজনক। প্রস্তুতির দিক থেকে আমরা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছি। কিন্তু না আছে আইনজীবী, না আছে কোর্ট! এটাই ট্র্যাজেডি।’’
এর আগে পূর্বতন যুগোস্লোভিয়া ও রোয়ান্ডায় যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত কাজ করে শিরোনামে এসেছিলেন সত্তর বছর বয়সি কার্লা ডেল পন্টে। সিরিয়া সংক্রান্ত এই চাঞ্চল্যকর দাবি এই মাসের গোড়াতেই করেছেন তিনি। আর তাঁর বক্তব্য, রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই তদন্ত কমিশন থেকে তিনি সরে যেতে চান কারণ, ‘‘ওখানে কিছুই হয় না।’’ কার্লা বলেছেন, ‘‘সিরিয়ায় সবাই যেন নেতিবাচক জায়গায়। আসাদ সরকার মানবতার বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর সব ষড়যন্ত্র করছে। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছে। আর বিরোধীরা হচ্ছে সব কট্টরপন্থী অথবা জঙ্গির দল।’’
রাষ্ট্রপুঞ্জের তদন্ত কমিশনে গত বৃহস্পতিবারই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে জানান কার্লা। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে ওই তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট তুলে দেওয়ার পরে কার্লা আনুষ্ঠানিক ভাবে সরে যাচ্ছেন ১৮ সেপ্টেম্বর। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অবশ্য বলেছেন, কার্লা চলে গেলেও ওই তদন্ত কমিশন তাদের কাজ চালিয়ে যাবে।
২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ায় সরকার বিরোধী প্রতিবাদ শুরুর কিছু দিন পরেই সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ নিয়ে তদন্তের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের এই কমিশন কাজে নামে। তার পর থেকে সিরিয়ার এই দীর্ঘকালীন সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষ। আশ্রয়হীন লক্ষাধিক, যার সঠিক হিসেবও নেই। কার্লার দাবি, তদন্ত কমিশনে থাকাকালীন সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধদমন আদালতে দরবার করার জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন নিরাপত্তা পরিষদে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। এই আইনজ্ঞের মতে, ‘‘এমন কোনও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর অংশ হয়ে থাকতে চাই না, যারা আখেরে কিছুই করে না।’’ তাই তাঁর পদত্যাগ প্রতিবাদও বটে। কার্লার আশা, ‘‘আমার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত যদি নিরাপত্তা পরিষদের উপরে একটু চাপ তৈরি করে, তা হলে অন্তত আক্রান্তেরা বিচার পাবেন।’’ কার্লা সরে যাওয়ার পরে তদন্ত কমিশনে রয়ে গেলেন আর দু’জন সদস্য।
সিরিয়া প্রসঙ্গ আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন আদালতে পৌঁছনোর আগেই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী কোনও সদস্য (যেমন আসাদের মিত্র দেশ রাশিয়া) ভেটো দিলে গোটা প্রক্রিয়া অবশ্য সেই তিমিরেই রয়ে যাবে!