Bangladesh General Election 2024

সেজে তৈরি ঢাকা, চ্যালেঞ্জ ভোটারদের বুথে আনাই

ভোটের স্লোগান কোথায়? বাংলাদেশের নির্বাচনী আইনে রঙিন পোস্টার ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু সাদা কালো পোস্টার শিকলির মতো দড়িতে ঝুলিয়ে বড় রাস্তা থেকে গলিপথ ছেয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

ঢাকা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪১
Share:

আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র লিগের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনে ছাত্ররা। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছবি: রয়টার্স।

ব্যস্ত দ্বিমুখী সড়কের এক ধার দখল করে চলেছে মিছিল। অল্পবয়সি ছেলের দল। মাথায় বিভিন্ন রঙের টুপি। হাতে বাংলাদেশের নতুন ও পুরনো পতাকা। পুরনো পতাকাটির মাঝখানে বাংলাদেশের মানচিত্র। এই পতাকা মুঠোয় নিয়েই হয়েছে বাংলাদেশ স্বাধীন করার যুদ্ধ। ছেলেদের হাতে হাতে পোস্টার-ফেস্টুন। তা পড়ে বোঝা গেল— এই তরুণেরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নামে একটি সংগঠনের। ‘ভোট দাও, ভোট দাও’ নয়, এঁরা স্লোগান দিচ্ছেন স্বাধীনতা-বিরোধীদের বিরুদ্ধে। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে। গলা চড়িয়ে এঁরা যে ধুয়ো তুলছেন, মুক্তিযোদ্ধারা তা উচ্চারণ করে এক সময়ে পাকিস্তানি বাহিনির সঙ্গে মরণপণ লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। তাঁদের, আর এঁদের— দুই প্রজন্মেরই স্লোগান, ‘জয় বাংলা’।

Advertisement

কিন্তু ভোটের স্লোগান কোথায়? বাংলাদেশের নির্বাচনী আইনে রঙিন পোস্টার ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু সাদা কালো পোস্টার শিকলির মতো দড়িতে ঝুলিয়ে বড় রাস্তা থেকে গলিপথ ছেয়ে দেওয়া হয়েছে। কারও দেওয়ালে আর কোনও জায়গা নেই যেখানে আরও গোটা দুয়েক পোস্টার মারা যায়। সংবাদমাধ্যম ছেয়ে গিয়েছে ভোটের খবরে। শাসকদল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-কে লাল কার্ড দেখাও, তারা যেন আর কোনও ম্যাচেই মাঠে নামতে না-পারে। অনেকেরই বক্তব্য, ভোট-প্রচার এ বার অনেকটাই একতরফা। ঢাকার সর্বত্র স্বতন্ত্র (নির্দল) প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। রয়েছে শাসক দলের সঙ্গে ঘোষিত ভাবে আসন সমঝোতা করা ‘বিরোধী দল’ জাতীয় পার্টিও। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছে এক নজরে তাদের কারও অস্তিত্বটুকুও সে ভাবে টের পাওয়া গেল না।

আবার ইতিমধ্যেই ভোটের মাঠে শাসকদল আওয়ামী লীগকে যেন খানিকটা ওয়াকওভার দিয়ে ফেলা বিএনপি নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় সেই হরতাল-অবরোধের রাস্তা থেকে কিছুতেই সরতে পারছে না। বাংলাদেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯-টিতে ভোট (নওগাঁর একটি আসনে স্বতন্ত্র এক প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে ভোট স্থগিত হয়েছে)। রবিবার সেই নির্বাচনের দিনটিকে মাঝখানে রেখে শনিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত একটানা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার ‘গোপন জায়গা’ থেকে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠক করে এই ঘোষণা করেছেন বিএনপি-র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি।

Advertisement

বিএনপি-র হরতালের ডাকে কি থমকে যাবে বাংলাদেশ? প্রশ্ন শুনে অনেকেরই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া— একমুখ হাসি। গত এক মাসে দফায় দফায় হরতাল ও অবরোধের ডাক দিয়ে গিয়েছে বিএনপি, তাদের ‘সমমনা’
মৌলবাদী ইসলামি দল জামাতে ইসলামি এবং কিছু বামপন্থী দল। কিন্তু, মানুষ হরতালের ডাকে কানও দেননি। তাদের এই হঠকারী পথ বিএনপি-কেই বিপাকে ফেলে দিয়েছে বলে মত অনেকের। এই অবস্থায় ডাক দিলেও হরতাল বাস্তবায়নের ক্ষমতা যে তাদের নেই, সেটা নেতৃত্বও বুঝছেন।

নমাজে, রাস্তার যানজটে, কুয়াশামাখা শীতে বিকেল বিকেল সন্ধ্যা নামছে ঢাকার হাতির ঝিলে। কাওরান বাজারের সরগরম ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে, ভোটের আগে পেট। তবু নির্বাচনী সাজে সেজে ওঠা ঢাকা দাদাঠাকুরের সুরে ডাক পাঠাচ্ছে বাসিন্দাদের কাছে— ‘ভোট দিয়ে যা / আয় ভোটার আয়।’ বস্তুত,
ভোটারদের বুথে আনাটাই এই ভোটে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ শাসক আওয়ামী লীগের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন