হাসপাতালে: চার্লি ও তার বাবা-মা।
প্রথম জন্মদিনটাও কি দেখতে পাবে একরত্তিটা! চিকিৎসা-ব্যবস্থা এবং আদালত, সব কিছুর সঙ্গে এত দিন ধরে একটা ‘অসম’ লড়াই চালিয়েছেন লন্ডনের বেডফন্টের দম্পতি কোনি ইয়েটস এবং ক্রিস গার্ড। কিন্তু শেষ অবধি হার মেনেছেন অসহায় এই দম্পতি।
বিরল জিনগত রোগের শিকার তাঁদের এগারো মাসের ছেলে চার্লি। জীবনদায়ী ব্যবস্থায় রাখা ছাড়া ভবিষ্যতে যার আর কোনও চিকিৎসা সম্ভব নয়। প্রথম সন্তানকে জেনেশুনে এক রকম মৃত্যুর হাতে তুলে দেওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প খোলা নেই কোনি-ক্রিসের কাছে। এ সত্য মেনে নিতে তাঁদের অনেক সময় লেগেছে। বিতর্ক গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। শেষমেশ সত্যির কাছে মাথা নুইয়েছেন চার্লির বাবা-মা। এখন তাঁদের ইচ্ছে, শেষ ক’টা দিন ছেলের সঙ্গে একটু একান্তে যদি কাটানো যায়। সেই সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছে হাইকোর্ট।
গত বছর ৪ অগস্ট চার্লির জন্ম। প্রথম দিকটায় কিছু বোঝা যায়নি। ২০১৬-র অক্টোবরের গোড়া থেকে সমস্যার শুরু। খুদের ওজন বাড়ছিল না ঠিকমতো। তাই প্রথমে সাধারণ চিকিৎসকের কাছে ওকে নিয়ে যান কোনি আর ক্রিস। কিন্তু ১১ অক্টোবর চার্লিকে ভর্তি করতে হয় লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হসপিটালে। শ্বাস নিতে অসুবিধে হচ্ছিল চার্লির। তখন থেকেই তাকে ভেন্টিলেটরে রাখা শুরু হয়। চার্লির যে বিরল জিনগত রোগে আক্রান্ত, সেটা ধরা পড়ে অক্টোবরের শেষে। তার পর থেকেই অবনতির শুরু। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি চার্লির মস্তিষ্ক ক্রমশ বিকল হতে শুরু করে। তার পরে নষ্ট হয় শ্রবণ ক্ষমতা। আর বছর ঘুরতে ঘুরতে শ্বাস নিতে পারা, নড়াচড়া করা বা চোখের পাতা পর্যন্ত নিজে আর খুলতে পারত না চার্লি। ক্ষমতা হারাচ্ছিল হৃদ্যন্ত্র আর কিডনিও।
এর মধ্যে চিকিৎসার চেষ্টাও হয়েছে যথেষ্ট। কিন্তু আশামাফিক সাড়া মেলেনি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেটা মেনে নিতে পারেননি কোনি আর ক্রিস। আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার কথা ভেবে তাঁরা চার্লিকে নিয়ে আমেরিকায় যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। এর পরেই আইনি লড়াইয়ের শুরু।
হাইকোর্টে চিকিৎসকরা জানান, চার্লি যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে তাকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে চিকিৎসায় সাড়া মেলার সম্ভাবনাও প্রায় নেই বললেই চলে। তাই চার্লিকে স্বস্তি দিতে জীবনদায়ী ব্যবস্থা তুলে নেওয়াই সমীচীন। সব শুনে ভেঙে পড়েছিলেন কোনি আর ক্রিস। অনেক চ়ড়াই উতরাই পেরিয়ে ক্রমশ বুঝতে ওঁরাও বুঝতে পারেন, ছেলেকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য। গত সোমবার তাঁরা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
এর পরেও প্রশ্ন রয়ে যায়। শেষ দিনগুলো বাড়িতেই একটু স্বস্তিতে ছেলের পাশে থাকতে চেয়েছিলেন কোনি-ক্রিস। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে এলেও চার্লির সেই যত্ন সম্ভব হবে কি? উঠেছিল সেই প্রশ্ন। তাই গত বুধবার হাসপাতালের পরামর্শে কোর্টে স্থির হয়, নানা ব্যবস্থা রয়েছে এমন কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হোক চার্লিকে। তাতে হয়তো বা বাবা-মায়ের কাছে আরও একটা সপ্তাহ কাটাতে পারবে আদরের খুদে। তবে সেখানেও সর্বক্ষণ নজরে রাখতে হবে তাকে।
ভারাক্রান্ত মনে কোর্টের সেই সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার দুপুরে মেনে নিয়েছেন ক্রিস-কোনি। এই আশ্রয়ে পৌঁছনো মাত্র জীবনদায়ী ব্যবস্থা খুলে নেওয়া হবে চার্লির শরীর থেকে। অনেক সয়েছে একরত্তিটা। এ বার দু’দণ্ড শান্তি পাক— ছেলের পাশে বসে বাবা-মায়ের এখন এইটুকুই প্রার্থনা।