ছবি: সংগৃহীত।
দলের নীতি মানতেই হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপরেও এ বার কড়া নজরদারি চালানোর ইঙ্গিত দিল বেজিং।
বাকি দুনিয়া থেকে তারা এত দিন যে ভাবে নিজেদের আড়াল করে এসেছে, সে ভাবেই এগোতে চাইছে চিন। দেশজ সমাজতন্ত্রের ধারা থেকে তিনি যে একচুলও সরবেন না, কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম কংগ্রেসের শুরুর দিনই তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। এ বার জানা গেল, শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার উপরেও খড়্গহস্ত হতে চাইছে চিন সরকার। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি এই সংক্রান্ত এক ঝাঁক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বেজিং। যাতে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরেই কড়া নজর রাখবে প্রশাসন। অধ্যাপকদের মূল্যায়ন করবে সরকার। এমনকী, কখনও যদি মনে হয় চিনা ভাবধারা থেকে কেউ একচুলও সরে এসেছেন, তাঁকে উচিত শিক্ষা দেবে রাজনৈতিক দলই! ব্যাপারটা নিয়ে সবে তখন কানাঘুষো শুরু হয়েছে। জানা গেল, বিদেশেও চিনা ছাত্রদের পাঠ্য তালিকায় হস্তক্ষেপ করতে চাইছে বেজিং।
কেমন সেই কড়াকড়ি? বিতর্কের শুরুটা অগস্টের মাঝামাঝি। ক্রেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রকাশিত ‘চায়না কোয়ার্টারলি’ পত্রিকাকে ঘিরে। ব্রিটেন-সহ সহ পৃথিবীর আরও অনেক প্রান্তেই এই পত্রিকাটি নিয়ে বিশেষ চাহিদা রয়েছে চিনা ছাত্রদের। কিন্তু মাস দু’য়েক আগে তাঁরা জানতে পারেন যে, ৩১৫টি নিবন্ধ ও কিছু পুস্তক সমালোচনা ছেঁটে ফেলতে চাইছে চিনের সরকার। আর এ নিয়ে যে প্রকাশক-বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর বিস্তর চাপ আসছে, তা নিয়ে সেপ্টেম্বরে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম খবরও করে।
কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তার দাবি, ‘‘১৯৮৯-এ তিয়ানআনমেন স্কোয়ারের প্রতিবাদ কিংবা চিনের সাংস্কৃতিক বিল্পবের মতো বিতর্কিত ইতিহাসের চর্চা করাটা বেজিং আদৌ ভাল চোখে দেখে না।’’ কিন্তু এটা কি স্বেচ্ছাচারিতা নয়? শিক্ষাক্ষেত্রেও কেন এত দাদাগিরি সইতে হবে— বিতর্কের গোড়ায় এ সব প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছিল দেশ বিদেশের এক ঝাঁক স্বেচ্ছাসেবী ও মানবাধিকার সংগঠন। তাদের চাপে পড়েই ২০ অগস্টের সম্পাদকীয়তে চিনের সরকার নিয়ন্ত্রিত ‘গ্লোবাল টাইমস’ লিখেছিল, ‘‘ব্রিটেনের মতো দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতাকে আমরা সম্মান দিই। কিন্তু নিজের দেশে কী ছাপানো হবে, তা নিয়ন্ত্রণের অধিকার আমাদের একেবারেই ব্যক্তিগত।’’ এর পরে সাময়িক ভাবে ব্যাকফুটে চলে যায় ক্রেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি। কিন্তু দিন তিনেকের মধ্যেই আবার ফিরে আসে এই ৩১৫টি ‘বিতর্কিত’ নিবন্ধ।
এটা অবশ্য প্রথম নয়। তাদের ক্লাসরুমেও চিন ছড়ি ঘোরাতে চাইছে বলে গত মাসেই অভিযোগ করেছিল অস্ট্রেলিয়ার আটটি বিশ্ববিদ্যালয়।