শি চিনফিং। —ফাইল চিত্র।
তাঁকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়েও শক্তিশালী রাষ্ট্রনেতার তকমা দিয়েছে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের একাংশ। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম কংগ্রেসের পরে সে দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সমাজের উপরে তাঁর নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় হবে বলে ধারণা পশ্চিমী কূটনীতিকদের। দুর্নীতি-দমন ও অন্য নানা ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের মতকেই এ বার আইনের রূপ দিতে উদ্যোগী হয়েছে চিনা রাষ্ট্র।
পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের একাংশের মতে, মাও জে দংয়ের পরে অন্য কোনও চিনা রাষ্ট্রনেতা চিনফিংয়ের মতো নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে পারেননি। তিনিই যে ফের পাঁচ বছরের জন্য চিনা রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে অনুমোদিত হতে চলেছেন তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই চিন বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, নজিরবিহীন ভাবে তৃতীয় বারও শীর্ষ পদে অনুমোদিত হতে পারেন চিনফিং। সেই সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বে রদবদল ঘটাতে পারেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে পারেন নিজের অনুগামীদের। গত পাঁচ বছরে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোণঠাসা করে ফেলেছেন চিনফিং।
জাতীয়তাবাদী অবস্থান ও দুর্নীতি দমনের ফলে চিনা জনতার কাছে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে চিনফিংয়ের। বিদেশনীতির ক্ষেত্রে বিশ্বে চিনা প্রভাব ছড়িয়ে দিতে অনেক ক্ষেত্রেই কড়া অবস্থান নিয়েছেন তিনি। ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্প অনুযায়ী, বেশ কয়েকটি দেশে রেলপথ, বন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অন্য পরিকাঠামোয় কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে চিন। আফ্রিকার জিবুতিতে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে চিন। এই প্রথম প্রকাশ্যে বিদেশের মাটিতে ঘাঁটি গেড়েছে চিনা সেনা। ফলে জাতীয়তাবাদী চিনাদের কাছে চিনফিংয়ের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।
কিন্তু নয়া চিনা স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদার ভাবনাচিন্তা বা মানবাধিকার কর্মীদের কাজকর্ম নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে তাঁর। চিনের কমিউনিস্ট শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। চিনফিংয়ের আমলে মানবাধিকারের মামলা নিয়ে আইনজীবীদের উপরে চাপ বেড়েছে। কমিউনিস্ট পার্টিকে সাহায্য করতে বলা হয়েছে তাঁদের। চলতি মাসে সরকারের দুর্নীতি দমন অভিযানকে অনলাইন পোস্টে কটাক্ষ করায় লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হয়েছে এক আইনজীবীর। আইনের তোয়াক্কা না করেই চিনা সরকার দুর্নীতির দায়ে শাস্তি দিচ্ছে বলে অনলাইন পোস্টে মন্তব্য করেছিলেন ওই আইনজীবী।
চিনফিংয়ের যে সব উদ্যোগকে আইনের রূপ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তার মধ্যে দুর্নীতি দমন অভিযান অন্যতম। আগামিকাল শুরু হচ্ছে পার্টি কংগ্রেস। সেখানে দুর্নীতি নিয়ে নয়া আইন পাশ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে চিনফিংয়ের দুর্নীতি দমনের ফাঁদে পড়েছেন কমিউনিস্ট পার্টির ১৪ লক্ষ কর্মী। অভিযান চালাতে নয়া জাতীয় নজরদারি কমিশন গড়ছে প্রশাসন। এখন কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিশন দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করে। সঙ্গে নানা স্তরে দুর্নীতি দমন সংস্থা রয়েছে। গত বছরেই কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিশন জানিয়েছে, নতুন নজরদারি কমিশন গঠিত হওয়ার পরে দুর্নীতি দমনের যাবতীয় কাজ তারাই করবে। চিনফিংয়ের অন্যতম সহযোগী ওয়াং কিশান দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনিই নয়া কমিশনের শীর্ষ পদে আসতে পারেন। ওয়াং প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন, ওই কমিশনের হাতে অভিযুক্তকে আটক করার অধিকারও থাকা উচিত।
ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ, চরবৃত্তি, চিনা জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া নিয়েও নয়া আইন পাশ হয়েছে চিনফিং জমানায়। পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের একাংশের মতে, চিনে কমিউনিস্ট একনায়কতন্ত্রে চিনফিং-ই শেষ কথা হয়ে উঠতে পারেন। যা বিশ্বের পক্ষে উদ্বেগজনক।