প্রয়াত প্রফুমো কেলেঙ্কারির সেই মডেল

দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সমস্যা এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। সোমবার রাতে ফার্নবোরোর প্রিন্সেস রয়্যাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৪
Share:

বিতর্কিত: ক্রিস্টিন কিলার

মারা গেলেন ব্রিটেনের খ্যাতনামা প্রাক্তন মডেল ও প্রফুমো কেলেঙ্কারির অন্যতম প্রধান চরিত্র ক্রিস্টিন কিলার। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সমস্যা এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। সোমবার রাতে ফার্নবোরোর প্রিন্সেস রয়্যাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। সোমবার ওই প্রাক্তন মডেলের ছোট ছেলে সিম্যুর প্ল্যাট মায়ের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেন।

নানা বিতর্ক থেকে পালিয়ে গিয়ে স্লোয়েন নাম নিয়ে বসবাস করছিলেন কিলার। কিন্তু পিছু ছাড়েনি পঞ্চাশ বছর আগের সেই ঘটনা। এ দিনও সবার মুখেমুখে ঘুরেছে ষাটের দশকে সেই ১৯ বছরের মডেলের কথা, যাঁকে ঘিরে বিতর্কের জেরে মসনদ খোয়াতে হয়েছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারকে। রাজনৈতিক শিবিরে এমন শোরগোল ফেলা যৌন কেচ্ছা সম্ভবত সেটাই প্রথম ছিল।

Advertisement

সময়টা ছিল ১৯৬৩ সাল। উঠতি মডেল ছিলেন কিলার। নামডাক হয়নি তখনও। অনুষ্ঠানের সংখ্যাও কম ছিল। তেমনই একটি অনুষ্ঠানে কিলারের আলাপ হয় অস্থিবিশেষজ্ঞ ও নৃত্যশিল্পী স্টিফেন ওয়ার্ডের সঙ্গে। গুরুত্বপূর্ণ লোকজনদের সঙ্গে ওঠাবসা থাকা ওয়ার্ড বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিতে থাকে কিলারের। সেই সময়েই কিলারের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ওয়ার্ডের বন্ধু ও তৎকালীন হ্যারল্ড ম্যাকমিলান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন প্রফুমোর। জানা যায়, ওই একই সময় রুশ বাহিনীর বিশেষ দূত ইয়েভগেনি ইভানভের সঙ্গেও পরিচয় হয়েছিল কিলারের। ঠান্ডা যুদ্ধের দুই বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা দু’জনের সঙ্গে কিলারের এই সম্পর্কের কেচ্ছা প্রকাশ্যে আসায় তোলপাড় শুরু হয় রাজনৈতিক শিবিরে। প্রশ্ন ওঠে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস হয়ে হওয়ার আশঙ্কা নিয়েও।

প্রথমে কিলারের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করলেও পরে চাপের মুখে তা মানতে বাধ্য হন প্রফুমো। এর পরেই পদত্যাগ করেন। এই কেচ্ছাকে হাতিয়ার করে ১৯৬৪-র সাধারণ নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির হ্যারল্ড ম্যাকমিলানের সরকারকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে লেবার পার্টি। কিলারকে এই সব ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারি নজরদারি শুরু হয় ওয়ার্ডের বিরুদ্ধেও। পরে তাঁর বিরুদ্ধে শুনানি চলাকালীন আত্মঘাতী হন তিনি। পরে অন্য একটি মামলায় ছ’মাসের জেল হয় কিলারেরও। ব্যক্তিগত জীবনেও ওই মডেলের কোনও সম্পর্ক স্থায়িত্ব পায়নি। ভেঙে যায় দু’টো বিয়েই। দুই সন্তানের মধ্যে জেমস বড়। দ্বিতীয় স্বামীর সন্তান সিম্যুর।

কিলারের জীবনের উপর ভিত্তি করে ১৯৮৯-তে তৈরি হয় ‘স্ক্যান্ডল’ ছবিটি। তাঁকে ঘিরে তৈরি হয়েছে আরও অনেক নাটক। আগামী বছর কিলারকে নিয়ে একটি ধারাবাহিকও সম্প্রচার হওয়ার কথা।

মায়ের মৃত্যুর কথা জানানোর সময় সিম্যুর বলেন, ‘‘মা নিজের অতীত নিয়ে খুবই লজ্জা পেতেন। আমাকেও ওসব থেকে দূরে রাখতেন। সংবাদমাধ্যমে তাঁর সম্বন্ধে যা লেখা হতো, তা খুবই হতাশাজনক। মায়ের থেকে একটা জিনিস শিখেছি। লড়াই করা। চোখের সামনে কিছু ভুল হতে দেখলে কখনওই তাকে প্রশ্রয় দিতেন না তিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন