ইকুয়েডরের সঙ্গে দ্বন্দ্বেই কি ধৃত অ্যাসাঞ্জ

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কিতো (ইকুয়েডর) শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৫৩
Share:

হঠাৎ করে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয় কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে ইকুয়েডরের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে নয়া টানাপড়েন। লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে টানা সাত বছর ছিলেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। বৃহস্পতিবার আচমকা তাঁকে গ্রেফতার করে লন্ডন পুলিশ। পরে জানা যায়, আমেরিকার কাছ থেকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পেয়েই সক্রিয় হয়েছে ব্রিটেনের প্রশাসন। অস্ট্রেলিয়া জানিয়ে দিয়েছে, তাদের নাগরিক বলে অ্যাসাঞ্জকে আলাদা কোনও খাতির করা হবে না। কিন্তু ইকুয়েডর এ ভাবে অ্যাসাঞ্জের মাথার উপর থেকে হাত তুলে নিল কেন?

Advertisement

এই সূত্রেই দাবি, দেশের নয়া প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনতে গোপন ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। আর সেই জন্যই তড়িঘড়ি তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় থেকে বঞ্চিত করা হল। এই সিদ্ধান্তের জন্য ইকুয়েডরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রাফাল করেয়া তীব্র সমালোচনা করেছেন মোরেনোর। তিনি কাল বলেছিলেন, ‘‘এই অপরাধ কেউ কোনও দিন ভুলবে না।’’

২০১২ সালে অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিলেন এই করেয়াই। তখন তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্টের পদে। আর করেয়ার চোখে অ্যাসাঞ্জ ছিলেন ‘নায়ক’— যিনি মার্কিন প্রশাসনের গুপ্ত নথি ফাঁস করার সাহস দেখিয়েছিলেন। মোরেনোকে গত কাল করেয়া তোপ দেগেছেন ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলেই ।

Advertisement

২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পরে মোরেনো প্রথম থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে বাড়াবাড়ি তাঁর না-পসন্দ। অস্ট্রেলীয় হুইসলব্লোয়ারকে অনলাইনে রাজনৈতিক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলেন তিনি। ইকুয়েডরের দূতাবাসে স্কেটবোর্ডে চড়ে ঘোরাঘুরি এবং পোষ্য বেড়ালকে (মেয়েদের দেওয়া) সাফসুতরো করানো বন্ধ করতেও বলেছিলেন! এত রাগের আদত কারণ, একটি বেনামি ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়, মোরেনোর ভাইয়ের বিদেশে কিছু সংস্থা আছে এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি সংস্থায় কাজ করার সময়ে মোরেনো যখন সপরিবার ইউরোপে ছিলেন, তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাপনের খরচ জোগাত ওই সংস্থাগুলি। মোরেনোর অভিযোগ, বেনামি ওই ওয়েবসাইটটির পিছনে উইকিলিকস-এর মদত ছিল। এবং মোরেনোর দাবি, তিনি কোনও দুর্নীতিতে জড়াননি। যদিও ওয়েবসাইটটিতে ফাঁস হওয়া নথির মধ্যে মোরেনোর পরিবারের সঙ্গে ছবি ছিল। যা নিয়ে মোরেনো বলেছিলেন, অ্যাসাঞ্জ তাঁর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং ফোন হ্যাক করেছেন।

ইকুয়েডরের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আজ আলোচনা হয়েছে, লন্ডনে অ্যাসাঞ্জের জীবনযাপন এবং নিরাপত্তার পিছনে ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৬২ লক্ষ ডলার খরচ হয়েছে। বিদেশমন্ত্রী হোসে ভ্যালেন্সিয়া বলেছেন, অ্যাসাঞ্জের কাছে এমন একটি মোবাইল ছিল যাতে ইকুয়েডরের দূতাবাসের স্বীকৃতি ছিল না। তাতে ‘প্যানিক’ বোতামও রাখা ছিল, বিপদে পড়লে যাতে তিনি দ্রুত জানাতে পারেন। হোসের কথায়, ‘‘অ্যাসাঞ্জ সব সময়েই নিজেকে ‘আক্রান্ত’ বলে দেখানোর চেষ্টা করতেন।’’ অ্যাসাঞ্জের বন্ধুবান্ধবদের আবার দাবি, মোরেনো ক্ষমতায় আসার পরেই ইকুয়েডরের দূতাবাসের সব কর্মীকে পাল্টে ফেলা হয়েছিল। করেয়ার আমলে দূতাবাস কর্মীরা অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করলেও মোরেনোর কর্মীরা সেটা করেননি। সেখানে আসা অতিথিদের প্রতি সৌজন্য দেখানো হলেও অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে কিছুটা খারাপ ব্যবহারই করা হত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন