Coronavirus

সিক্স পয়েন্ট প্ল্যান কি তবে জাদুকাঠি, উত্তর খুঁজছে নিউ জার্সি

নিউ ইয়র্কে যেখানে এই শিক্ষাবর্ষে আর স্কুল খুলবে না, সেখানে নিউ জার্সিতে নাকি জুনের শেষের দিকে খুলতে পারে স্কুল। 

Advertisement

ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য

নিউ জার্সি শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ১৬:০৪
Share:

করোনার প্রকোপে স্তব্ধ শহর। ছবি: এএফপি।

“মাঝখানে নদী ওই বয়ে চলে যায়।”আমরা যারা নিউ জার্সির বাসিন্দা তারা ওইভাবেই চিনতাম একদিন নিউ ইয়র্ক শহরটাকে। আজ মনে হয় ভাগ্যিস নদীটুকু ছিল মাঝখানে। নিউ জার্সিতেও আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষের বেশি, মারা গিয়েছেন ছয় হাজারের বেশি মানুষ, আমেরিকার হিসেবে আমরা দ্বিতীয় স্থানে। তবু আমাদের ওপারের ‘সেলিব্রিটি’ শহরের তুলনায় তো কিছুটা হলেও কম।

Advertisement

লকডাউনের জেরে যেন অর্থনৈতিক ‘আর্মাগেডন’ হতে চলেছে এই নিউজার্সিতে যার ফলস্বরূপ হয়ত শিক্ষক, পুলিশ, দমকলবাহিনীর মতো পেশায় যারা আছেন তাঁদের বেতন বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন স্বয়ং মেয়র। গত বছর যেখানে ৮৪০০০ বেকারভাতার দাবিদার ছিলেন, এখন এই সংখ্যাটা ৮৫৮০০০ (অত্যাধিক চাপে সাইটটি ডাউন থাকায় অনেকে এখনও ফর্ম জমা দিতে পারেননি)।

ষড়রিপু যতই শত্রু হোক মানুষের, নিউ জার্সির গভর্নরের ‘সিক্স পয়েন্ট’ প্ল্যান কিন্তু দুশ্চিন্তার অতল আঁধারে একটুকরো নিয়নবাতি জাগালো বুকে।নিউ ইয়র্কে যেখানে এই শিক্ষাবর্ষে আর স্কুল খুলবে না, সেখানে নিউ জার্সিতে নাকি জুনের শেষের দিকে খুলতে পারে স্কুল। তবে পড়ুয়ারা সে ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করবে। বড় জমায়েত এড়িয়ে চলতে হবে স্কুলে। শোনা যাচ্ছে লকডাউন তুলে নেওয়ার আগে জরিপ করা হবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক। যেমন নতুন করোনা কেস এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান হতে হবে প্রায় ১৪ দিন একটানা। আক্রান্ত ব্যক্তি কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, সেসব খতিয়ে দেখার জন্য প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করতে হবে। বাড়াতে হবে কোয়রান্টিনের জায়গা, যেখানে বিনা খরচে থাকতে পারেন অসুস্থ লোকেরা।

Advertisement

জনশূন্য সমুদ্র সৈকত। ছবি: এএফপি।

আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনা-সংক্রমণ ছড়ানোর দায়ে চিনের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবির হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের​

রি-ওপেনিংয়ের আগে অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থার দিকে নজর রাখতে হবে এবং বজায় রাখতে হবে পিপিই-র সরবরাহ। সবচেয়ে বড় কথা হল ব্যাপক হারে টেস্টিংয়ের উপায় বার করা। এতদিন অবধি ‘সোয়াব টেস্ট’ ছিল মুখ্য এবং সহজ উপায়। কিন্তু অত সোয়াব জোটানো হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ‘মাস টেস্টিং’-এর পথে অন্তরায়। রক্তের নমুনার মাধ্যমেও করা হচ্ছিল কিছু টেস্টিং। কিন্তু এখন মুখের স্যালাইভার মাধ্যমেই করোনার পরীক্ষাকরা যাবে। যেটি আবিষ্কার করে ফেলেছেন নিউ জার্সির স্টেট ইউনিভার্সিটি রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এফডিএ-র অনুমোদনও মিলেছে চটজলদি। এতে একদিনে প্রায় দশ হাজার টেস্টিং করা সম্ভব হতে পারে এমনটাই আশা করা হচ্ছে। পরীক্ষার রিপোর্ট মিলে যাবে ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যেই। যদিও গভর্নর সতর্ক করেছেন, “needlessly rushed is a plan that will needlessly fail” তবুও মনে হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত সামারে ‘জার্সি শোর’ জনসমুদ্রে মেতে উঠবে আবার।

আরও পড়ুন: করোনা-উপসর্গের তালিকায় আরও লক্ষণ যোগ করল মার্কিন স্বাস্থ্য সংস্থা​

তবে কি আমেরিকার ‘মেমোরিয়াল ডে’ আসার আগেই করোনার যুদ্ধে নিউ জার্সিকে আংশিক হলেও জিতিয়ে দেবে বিজ্ঞান? হয়ত থাকবে সামাজিক দূরত্বের কিছুটা ঘেরাটোপ। যেখানে সবাই স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছিলাম ঠিক সেখানে শুরু হবেনা এই নতুন প্রারম্ভের গল্পটা। কিছুটা অগোছালো হলেও আবারতো জীবনের ছন্দে ফেরার একটা ইঙ্গিত দেখা দিচ্ছে কোথাও। আমেরিকান ড্রিমের শব কাঁধে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়া একটা রাজ্য যেখানে বাঙালি জনসংখ্যা দেখে মাঝেমাঝেই কলকাতা বলে ভুল হয়ে যায় অবশেষে যেন সোনার কাঠি রুপোর কাঠির ছোঁয়া পেতে চলেছে শিগগির। যদিও এখনই ‘স্টে এট হোম’ নিয়ে কোন পরিবর্তন সংবাদ আসেনি, কিন্তু এই শহরের বসন্ত যেন ফিসফিস করছে, মুক্তি কি আসন্ন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন