Coronavirus

এই বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সারা বিশ্বের

দু’তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখলাম, ইটালির করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা আকাশ ছুঁয়েছে, মৃত্যুও বাড়ছে হু-হু  করে। কানাডায় কিন্তু তখনও সেই আগুনের আঁচ এসে পৌঁছয়নি।

Advertisement

হৃদয়নাথ ভট্টাচার্য্য

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি

দু’-দুটো বিশ্বযুদ্ধের কথা ইতিহাস বইয়ের পাতায় পড়ে বড় হয়েছি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কোভিড-১৯ নামের অতিমারি যে ভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে, তাতে কোনো বিশ্বযুদ্ধ চাক্ষুষ না করলেও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে জীবন কতটা দুঃসহ হতে পারে, তা টের পাচ্ছি।

Advertisement

এ বছর গোড়ার দিকে করোনা নিয়ে মাঝেমধ্যে চিন থেকে কিছু খবর ও পরিসংখ্যান উঁকি দিত। তখনও আমরা বিষয়টিকে বিশেষ পাত্তা দিইনি। তার পরে হঠাৎ খেয়াল করলাম, ইটালি, ফ্রান্স ও স্পেনের মতো দেশগুলো মুখ থুবড়ে পড়ছে। দু’তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখলাম, ইটালির করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা আকাশ ছুঁয়েছে, মৃত্যুও বাড়ছে হু-হু করে। কানাডায় কিন্তু তখনও সেই আগুনের আঁচ এসে পৌঁছয়নি। মার্চ মাসের শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই পরিস্থিতিকে অতিমারি ঘোষণা করল। বুকের ভেতরটা আঁতকে উঠলেও আমাদের জীবন তখনও বেশ স্বাভাবিকই চলছিল। পরিস্থিতি লাগাম ছাড়া হল মার্চের মাঝামাঝি থেকে। অন্টারিও, ব্রিটিশ কলম্বিয়া এবং আরও কয়েকটি রাজ্যে ‘স্টেট অব ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা করা হল। হঠাৎই মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক দেখতে পেলাম, একটা অজানা আতঙ্ক। কেউ জানে না এই ‘স্টেট অব ইমার্জেন্সি’ ঠিক কত দিন চলবে এ রকম। তা হলে কি ইটালির মতোই বিভীষিকা আসতে চলেছে সারা বিশ্বে? মানুষের মধ্যে এতটা আতঙ্ক আগে দেখিনি।

নিমেষের মধ্যে সুপারমার্কেটে জিনিসপত্র ফাঁকা, বিশেষ করে টয়লেট পেপার, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার, ফ্রোজ়েন ফুড, চাল, ডাল নিমেষে উধাও। মনে হচ্ছিল, সবাই যেন শেষের সেই দিনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ধীরে ধীরে রেস্তরাঁ, থিয়েটার, ব্যাঙ্ক, একে একে সব বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করল, বন্ধ হয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয়, অনির্দিষ্ট কালের জন্য। খোলা আছে শুধু সুপারমার্কেট ও হাসপাতাল। রাস্তায় বাস চলছে, তবে যাত্রী প্রায় নেই বললেই চলে।

Advertisement

আরও পড়ুন: জনহীন পথে রাস্তার উপর শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছে সিংহের দল!

কানাডায় আজ মোট আক্রান্ত প্রায় ৩২ হাজার, মৃতের সংখ্যা ১৩০০ ছাড়িয়েছে। প্রতিবেশী দেশ আমেরিকার পরিস্থিতি দেখে ভয়ে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।

সংজ্ঞা অনুযায়ী এ কোনও বিশ্বযুদ্ধ নয়। বরং এ হল করোনার বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের যুদ্ধ । আর এই যুদ্ধক্ষেত্রে অক্লান্ত লড়াই করে চলেছেন ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থকর্মীরা, পুলিশ, সুপারমার্কেটের কর্মীরা, এমনকি মালবাহী ট্রাকের চালকেরাও। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো প্রতিদিন সকাল সওয়া এগারোটায় নিজের বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সারা দেশবাসীর কাছে আবেদন জানাচ্ছেন বাড়িতে থেকে, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে এই সব যোদ্ধার লড়াইয়ে শরিক হতে।

গত এক মাসে কানাডার ইতিহাসে সব থেকে বেশি মানুষ তাঁদের জীবিকা হারিয়েছেন, বিভিন্ন বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে, সময় যেন থমকে গিয়েছে। সরকার থেকে জীবিকাহারাদের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে, ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এ ব্যবস্থা তো সাময়িক, কেউ জানে না এ ভাবে কত দিন চলবে। হাসপাতালে ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে, ভরে আসছে আইসিইউয়ের বেডগুলো, শেষ হয়ে আসছে মাস্ক-সহ নানা সরঞ্জাম।

তবু, এ লড়াই আমাদের সকলের লড়াই। এই যুদ্ধ আমাদের একজোট হতে শিখিয়েছে। আশা রাখি, সে কথা আমরা অচিরেই ভুলে যাব না।

(লেখক কুইন্স ইউনিভার্সিটির পোস্টডক্টরাল গবেষক)

আরও পড়ুন: লকডাউনে হার্ভার্ডের অনলাইন কোর্স করুন একদম নিখরচায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন