ব্রাজিলের হারে অস্তিত্বের সঙ্কটে দিলমা সরকার

বিশ্বকাপ থেকে শুধু ছিটকেই গেলেন না! অস্কার, ফ্রেড, দাভিদ লুইজ, দাতেরা প্যাঁচে ফেলে দিয়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফকেও। ব্রাজিলের অকাল বিদায়ে ফের অনিশ্চয়তার মুখে গোটা দেশ। লজ্জায় মুখ ঢেকেছে প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে দিলমা রুসেফের অপসারণ চেয়ে রাজধানী ব্রাসিলিয়ার পথে নেমেছেন মানুষ। দিলমার নিন্দায় বিক্ষোভ চলছে সাও পাওলো, রিও ডি জেনেইরো, বেলো হরাইজন্তের মতো শহরেও।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

রিও ডি জেনেইরো শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০২:৫০
Share:

বিশ্বকাপে ধরাশায়ী হওয়ার পর ব্রাজিলের সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পুলিশ। ছবি: এপি।

বিশ্বকাপ থেকে শুধু ছিটকেই গেলেন না! অস্কার, ফ্রেড, দাভিদ লুইজ, দাতেরা প্যাঁচে ফেলে দিয়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফকেও। ব্রাজিলের অকাল বিদায়ে ফের অনিশ্চয়তার মুখে গোটা দেশ। লজ্জায় মুখ ঢেকেছে প্রশাসন।

Advertisement

প্রেসিডেন্ট পদ থেকে দিলমা রুসেফের অপসারণ চেয়ে রাজধানী ব্রাসিলিয়ার পথে নেমেছেন মানুষ। দিলমার নিন্দায় বিক্ষোভ চলছে সাও পাওলো, রিও ডি জেনেইরো, বেলো হরাইজন্তের মতো শহরেও। গত ২৪ ঘণ্টায় দাঙ্গা-সম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেশটায়। শুধুমাত্র সাও পাওলোতেই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ২০টি বাস। লুঠপাট চলেছে বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের দোকানগুলিতে। রিও ডি জেনেইরো-র কোপাকাবানার সৈকতে বিক্ষোভরত মানুষকে ছত্রভঙ্গ করতে মরিচগুঁড়ো স্প্রে করেছে পুলিশ। সাও পাওলোতে ব্রাজিলের পতাকা পোড়াতে দেখা যায় এক দল বিক্ষুব্ধকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয় পুলিশকে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বেধে গেলে অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয় সালভাদর ফ্যান ফেস্টে। অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হয় শহরগুলিতে।

প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ অবশ্য নতুন কিছু নয়। বিশ্বকাপ আয়োজনের আভাস মিলতেই বিক্ষোভ দানা বাঁধছিল অর্থনৈতিক ভাবে বিধ্বস্ত দেশটিতে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে দেশ জুড়ে যখন সাজো সাজো রব, তখন “খাবার চাই, ফুটবল নয়” স্লোগান মুখে পথে নেমেছিলেন হাজারো মানুষ। স্টেডিয়ামগুলো সাজাতে, বিদেশি পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার পরিকাঠামো উন্নয়নে যখন কোটি কোটি ডলার খরচ করছিল সরকার, তখন স্বাস্থ্য-শিক্ষার অধিকারের দাবিতে অনশন করছিলেন ব্রাজিলের সাধারণ মানুষ। পুলিশের লাঠি আর নেইমার-বাহিনীর প্রাথমিক জয়যাত্রায় অবশ্য সেই বিক্ষোভের আগুন ছাইচাপা পড়ে যায়। প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ সদর্পে ঘোষণা করেন, বিশ্বকাপ আয়োজনে এক কোটি দশ লক্ষ ডলার খরচ করতে চলেছে তাঁর সরকার, টুর্নামেন্টের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ।

Advertisement

চলতি বছর অক্টোবরেই ব্রাজিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দিলমা আশা করেছিলেন, বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমেই ঘুরে দাঁড়াবে দেশের অর্থনীতি। দিলমার আশ্বাস ছিল, ‘কাপের পর কাপ’ আসবে দেশে।

গত ১২ জুন বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ এবং তার পর থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত ব্রাজিলের দৌড়ে ক্রমে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছিলেন দিলমা এবং তাঁর অনুগামী রাজনৈতিক মহল। ৭-১-এ হারের পর অবশ্য সুর নরম হয়েছে তাঁদের। টুইটারে প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, “ব্রাজিলের হারে খুবই দুঃখিত আমি। তবে বলব, জেগে ওঠো ব্রাজিল, ধুলো ঝেড়ে ফের নিজের পায়ে দাঁড়াও।” আগামী সোমবার বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষ হওয়ার পরেই শুরু হয়ে যাবে দিলমার নির্বাচনী প্রচার। ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাজিলের প্রাক্তন এবং সব চেয়ে সফল প্রেসিডেন্ট, ওয়ার্র্কার্স পার্টির লুলা দ্য সিলভার যোগ্য উত্তরসূরির মর্যাদা রাখতে পারেননি দিলমা। বামপন্থী লুলার সময় ব্রাজিল বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতির সম্মান পেয়েছিল। দিলমার সময়ে তা তলানিতে এসে ঠেকেছে। মুদ্রাস্ফীতির সমস্যায় জর্জরিত উন্নয়নশীল এই দেশ। বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রশ্নেই যেখানে তেতে উঠেছিল দেশের মানুষ, সেখানে বজ্রপাতের মতো এই হার তাঁদের আরও খেপিয়ে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে গিয়ে হয়তো যার মাসুল দিতে হবে দিলমাকে। সম্প্রতি এক জনমত সমীক্ষা হয় ব্রাজিলে। তাতেও সঙ্কেত মিলেছে খুব একটা নিরাপদ অবস্থায় নেই ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট। প্রধান প্রতিপক্ষ তথা সেনেটর এসিও নাভাস কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন তাঁকে।

ব্রাজিলের হারে বছর চব্বিশের এক তরুণীর প্রতিক্রিয়া, “একটাই ভাল জিনিস, দিলমার অবস্থান হয়তো এতে নড়বে। তবে তাতেও ভাল কিছুই হওয়ার নেই। দেশের রাজনীতির অবস্থা যে ফুটবলের থেকেও খারাপ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন