লুইস ও ডেভিড টারপিন। ছবি এএফপি।
যাবজ্জীবন কারাবাসের শাস্তি শুনে বিচারকদের সামনে কেঁদে ফেলেছিলেন ডেভিড ও লুইস টারপিন। কাঁদতে কাঁদতে লুইস বললেন, ‘‘ছেলেমেয়েদের শাস্তি দিতে আমি যা যা করেছি তার জন্য দুঃখিত। আমি বাচ্চাদের ভীষণ ভালবাসি। ওদের খুশি আমার কাছে সবচেয়ে দামি।’’
১৩ জন সন্তানকে আটকে রেখে অমানবিক ভাবে অত্যাচার করার অভিযোগে ফেব্রুয়ারিতে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন দক্ষিণ ক্যালিফর্নিয়ার এই দম্পতি। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হন ৫৭ বছরের ডেভিড ও ৫০ বছরের লুইস। শুক্রবার সাজা ঘোষণার পরে রিভারসাইড কাউন্টির বিচারক টুইট করে জানান, ‘‘টারপিন দম্পতি বাকি জীবনটা জেলেই কাটাবেন। তবে পঁচিশ বছর কাটানোর পরে যদি প্যারোল পান, তবেই একমাত্র বাইরে বেরোতে পারবেন।’’
দক্ষিণ ক্যালিফর্নিয়ার পেরিস শহরে বাড়ি টারপিনদের। ফেব্রুয়ারি মাসে সেখান থেকেই পুলিশের কাছে একটি ফোন যায়। ভয়ার্ত কণ্ঠে এক কিশোরী তাকে ও তার ভাইবোনদের উদ্ধারের আর্জি জানায়। পুলিশ এসে দেখে, অন্ধকার, অপরিচ্ছন্ন একটি ঘরে ১৩টি ছেলেমেয়েকে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ আবার বিছানার সঙ্গে শেকল দিয়ে বাঁধা। অপুষ্টির শিকার ওই ছেলেমেয়েদের বয়স তখন ২ থেকে ২৯ বছর। শরীর জুড়ে মারধরের চিহ্ন স্পষ্ট। পুলিশকে তারা জানায়, জন্ম থেকে এ ভাবেই তাদের বন্দি করে রাখত বাবা-মা। ভাল ভাল খাবার এনে তাদের লোভ দেখাতো। কিন্তু খেতে দিত না। পান থেকে চুন খসলেই জুটত বেদম মার। এমনকি হাত ধোয়ার সময় কব্জির উপর ভিজলেই জল নষ্ট হচ্ছে এই অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হত।
বিচার চলাকালীন ডেভিডের বাবা-মা বলেছিলেন, তাঁদের ছেলে-বৌমা ভীষণ ধার্মিক। বাড়িতেই ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা শেখাতেন। কড়া নিয়মে ওদের বড় করতে চেয়েছিলেন।
পুলিশ অবশ্য ওই ১৩ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়েছে। শুক্রবার বাবা-মায়ের শাস্তি শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে সেই কিশোরী কন্যা। বলেছে, ‘‘আমার গোটা জীবন কেড়ে নিয়েছিল বাবা-মা। এ বার আমি তা ছিনিয়ে নিলাম।’’