প্রাণঘাতী নয় অসুখ, তবু মৃত্যুতে সায় আদালতের

জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন ছিল ন্যান্সি। মেনিনজাইটিস, সেপ্টিসেমিয়ার মতো কঠিন অসুখও বাসা বেঁধেছিল একরত্তি খুদের শরীরে। যা প্রাণঘাতী না হলেও যন্ত্রণা ছিল অসহনীয়। কিন্তু সে যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশের ক্ষমতাটুকুও ছিল না তার। কথা বলা, হাঁটা-চলা, নাওয়া-খাওয়া, কোনও ক্ষমতাই ছিল না ন্যান্সির। মাথায় জমা জল বার করতে বসানো হয় নল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লন্ডন শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৫
Share:

জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন ছিল ন্যান্সি। মেনিনজাইটিস, সেপ্টিসেমিয়ার মতো কঠিন অসুখও বাসা বেঁধেছিল একরত্তি খুদের শরীরে। যা প্রাণঘাতী না হলেও যন্ত্রণা ছিল অসহনীয়। কিন্তু সে যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশের ক্ষমতাটুকুও ছিল না তার। কথা বলা, হাঁটা-চলা, নাওয়া-খাওয়া, কোনও ক্ষমতাই ছিল না ন্যান্সির। মাথায় জমা জল বার করতে বসানো হয় নল। চিকিৎসকেরা বাবা-মা’কে জানিয়ে দেন, মেরেকেটে চার বছর। এর বেশি আয়ু নেই মেয়ের। কিন্তু সে সময় পেরিয়ে যায়। বেঁচে থাকে ন্যান্সি। ছোট্ট মেয়েটার অসহ্য যন্ত্রণা আর প্রতিদিনের লড়াই সহ্য করতে পারেন নি মা। আদালতে আবেদন জানান মেয়ের নিষ্কৃতি-মৃত্যুর।

Advertisement

ন্যান্সি ফিটজমরিসের অসুখ সে অর্থে প্রাণঘাতী ছিল না। বাইরে থেকে সাহায্য ছাড়াই হৃদযন্ত্র সচল ছিল তার। তা সত্ত্বেও সব দিক বিচার করে মা শার্লটের আবেদন মেনে নেয় আদালত। আদালতের এই রায়ে প্রথম নিষ্কৃতি মৃত্যুর অধিকার পেল এক কিশোরী, জীবনদায়ী ব্যবস্থা ছাড়াই যে বেচেঁ ছিল বারোটা বছর। কিন্তু মেয়ের এই বেঁচে থাকাই বিষের মতো ঠেকছিল শালর্টের কাছে। মূক মেয়ে বলতে পারত না যন্ত্রণার কথা। কিন্তু মা অনুভব করতে পারতেন সবটাই। আদালতের কাছে তাই আবেদন করেন, “ও সহ্য করতে পারছে না। মা হিসাবে আমার কষ্ট হচ্ছে মেয়ের মৃত্যু চাইতে। কিন্তু এবার আমি ন্যান্সির মৃত্যু চাই।” অগস্টে আদালত তাঁর আবেদনে সায় দেয়। এর ১৪ দিন বাদে ওরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালে মারা যায় ন্যান্সি।

১২ বছর মেয়ের যন্ত্রণার সাক্ষী শার্লট বলেছেন, “২৪ ঘন্টা চিৎকার করত ন্যান্সি। প্রচণ্ড মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণায় কাতরাত ও। মেয়ের এই কষ্ট সহ্য করা যেত না। আমি না পারতাম সেই যন্ত্রণার ভাগ নিতে। না পারতাম তা থেকে মুক্তি দিতে।”

Advertisement

২০০২ সালে ন্যান্সির জন্মের দু’দিন আগে এসেক্সের বাসিন্দা শার্লট জানতে পারেন তাঁর সন্তান গ্রুপ বি স্ট্রেপটোকক্কাস সংক্রমণ নিয়ে জন্মাবে। শুরুতে ধরা পড়লে গর্ভাবস্থাতেই চিকিৎসা করা সম্ভব হত। কিন্তু তা না হওয়ায় জন্ম থেকেই অসুস্থ ছিল ন্যান্সি। চিকিৎসকেরা জানান, চার বছরের বেশি বাঁচবে না ন্যান্সি। কিন্তু বেঁচে ছিল সে। ২০১২ সালের মে মাসে কিডনিতে অস্ত্রোপচার হয়। সেখান থেকে ছড়ায় সংক্রমণ। চিকিৎসকরা জানান, ন্যান্সির কষ্ট কমানোর উপায় নেই তাদের হাতে। প্রতিদিনের যন্ত্রণায় ন্যান্সির একমাত্র উপশম ছিল কড়া পেনকিলার। একসময় তাও হার মানে। হার মানে বাবা-মা’র ধৈর্যও। মা শার্লট, বাবা ডেভিড শরণাপন্ন হন হাসপাতালের চিকিৎসক বোর্ডের। শার্লটের আবেদন নিয়ে কোর্টে যেতে রাজি হয় হাসপাতাল। শার্লটের আবেদন মানে আদালতও। এর দু’সপ্তাহ বাদে ২১ অগস্ট মৃত্যু হয় ন্যান্সির।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন