চিনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে শ্রীলঙ্কায় নোঙর করল ভারতের দুই যুদ্ধজাহাজ

ভারত মহাসাগরে আধিপত্য কায়েমের লড়াইতে চিনকে জোর ধাক্কা দিল ভারত। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় বন্দর গড়ে নৌবহর মোতায়েন করেছিল চিন। সেই বন্দর থেকে ফিরে গেল চিনের তিন যুদ্ধজাহাজ। আর তার পরই ভারতীয় নৌসেনার সবচেয়ে বড় এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রমাদিত্য নোঙর করল কলম্বোতে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৬ ১৩:২৮
Share:

কলম্বো বন্দরে ভারতের সবচেয়ে বড় এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রমাদিত্য। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান। ছবি: এফএফপি।

ভারত মহাসাগরে আধিপত্য কায়েমের লড়াইতে চিনকে জোর ধাক্কা দিল ভারত। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় বন্দর গড়ে নৌবহর মোতায়েন করেছিল চিন। সেই বন্দর থেকে ফিরে গেল চিনের তিন যুদ্ধজাহাজ। আর তার পরই ভারতীয় নৌসেনার সবচেয়ে বড় এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রমাদিত্য নোঙর করল কলম্বোতে। সেখানে স্থায়ীভাবে ভারতীয় নৌবহর মোতায়েন করার কথাও ভাবতে শুরু করেছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। শ্রীলঙ্কা সরকারও সব রকম সহযোগিতায় তৈরি।

Advertisement

মাহিন্দা রাজাপাক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছিল নয়াদিল্লি আর কলম্বোর মধ্যে। চিনের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার দ্রুত ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকা মোটেই পছন্দ ছিল না ভারত সরকারের। কিন্তু ভারতকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে শুরু করেন রাজাপাক্ষে। চিন কলম্বোতে বন্দরও বানাতে শুরু করে। সেখানে মোতায়েন করা হয় চিনা নৌবহর। ভারতকে চাপে রাখতে চিনের বেশ কয়েকটি সাবমেরিনকেও পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলম্বোর চিনা বন্দরে। সেই বন্দরকে কাজে লাগিয়ে গোটা ভারত মহাসাগরেই দাপট বাড়াচ্ছিল চিন।

রাজাপাক্ষে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে মৈত্রীপালা সিরিসেনা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হতেই পট পরিবর্তন শুরু হয়েছে শ্রীলঙ্কার বিদেশ নীতিতে। সেই সঙ্গে পট পরিবর্তন শুরু হয়ে গিয়েছে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্যেও। প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার পর সিরিসেনার বিদেশ সফরের প্রথম গন্তব্য ছিল ভারতই। তার পর থেকে ক্রমেই আবার বেড়েছে ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কের উষ্ণতা। ভারতের পরামর্শ মেনে পাকিস্তানের কাছ থেকে হেলিকপ্টার কেনার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। এর পর চিনের পালা। মাঝে শোনা যাচ্ছিল, কলম্বোয় চিনা বন্দর প্রকল্প বাতিল করে দেবে শ্রীলঙ্কার সরকার। তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। তবে চিনকে খুব বেশি সুবিধা দিতে যে কলম্বো আর রাজি নয়, সে কথা বেজিং বুঝে গিয়েছে। কয়েক দিন আগেই চিনের তিনটি যুদ্ধজাহাজ কলম্বোর বন্দর ছেড়ে ফিরে গিয়েছে। তার পরই ভারতের সবচেয়ে বড় এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার (বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ) আইএনএস বিক্রমাদিত্য কলম্বোয় হাজির হয়েছে। সঙ্গে ভারতীয় নৌসেনার গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার আইএনএস মাইসোর-ও গিয়েছে কলম্বোয়।

Advertisement

আরও পড়ুন:

ভিয়েতনামে ভারতীয় নৌঘাঁটি, টেনশনে চিন

ভারতের সেরা ১২ ক্ষেপণাস্ত্র যা কাঁপিয়ে দেয় প্রতিপক্ষের বুক

বৃহস্পতিবার কলম্বোয় নোঙর করেছে আইএনএস বিক্রমাদিত্য এবং আইএনএস মাইসোর। শনিবার পর্যন্ত দুই ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ সেখানে থাকবে। ভারতীয় নৌসেনার যুদ্ধজাহাজ দু’টি ঘিরে শ্রীলঙ্কায় প্রবল উৎসাহও দেখা দিয়েছে। সে দেশের নৌসেনার আধিকারিকরা ভারতীয় নৌসেনার যুদ্ধজাহাজগুলি ঘুরে দেখেন বৃহস্পতিবার। স্কুল পড়ুয়াদেরও সুযোগ করে দেওয়া হয় আইএনএস বিক্রমাদিত্য দেখার।

ভারতের তরফে জানানো হয়েছে, নৌসেনার দুই যুদ্ধজাহাজ ‘গুডউইল ভিজিট’ অর্থাৎ ‘সদ্ভাবনা সফর’-এ কলম্বো গিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা বলছেন, আসলে কলম্বোয় রণতরী পাঠিয়ে বেজিংকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ ছুড়ল নায়াদিল্লি। ভারত মহাসাগরে চিনের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা যে কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না, তা বুঝিয়ে দিল ভারতীয় নৌসেনা। শুধু শ্রীলঙ্কা নয় মায়ানমার, বাংলাদেশ, সেশ্যেলস, মরিশাস, মালদ্বীপ— ভারত মহাসগরীয় অঞ্চলকে ঘিরে ছড়িয়ে থাকা এই সব দেশেও নৌবহর মোতায়েনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে নয়াদিল্লি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন