অনেক কষ্টে তৈরি ১২৮ জিবির মাইক্রো এসডি কার্ড। চুলের মতো সরু মেমরি ডিস্ক। সূক্ষ্ম, দুরন্ত। হাতে আসতেই ব্যবহারের ব্যস্ততা। নতুন কিছু এলেই সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োগ। পিছিয়ে পড়তে যেন না হয়। আনকোরা বস্তু পরখ করে ছড়িয়ে দেওয়াই বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদদের কাজ। সামনে পা ফেলা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে। এ আন্দোলনের স্লোগানও ‘জয় বাংলা’। এতেই জেগেছিল সমগ্র জাতি। ঝাঁপিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দায়িত্ব বাড়ে। আগে অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড শক্ত করা। এসেছে চাষে সাফল্য। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ম্ভর। ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প বাড়ছে। বড় শিল্প গড়ার কাঠামো তৈরি হচ্ছে। পণ্য থেকে যাত্রী পরিবহণ আগের চেয়ে দ্রুতগামী। তাড়াতাড়ি চলতে না পারলে দুনিয়ার সঙ্গে পাল্লা দেবে কী করে! সবের মূলে প্রযুক্তি। সেটা না হলে অচল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে আরও বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বলেছেন, প্রযুক্তি কাজে আনে স্বচ্ছতা। দুর্নীতি মুক্ত হতেও সাহায্য করে।
মেশিন মানুষের তৈরি। আবার সেই মেশিনই মানুষকে অন্যায়ের শাস্তি দেয়। ভুল ধরে সতর্ক করে। ঠিক রাস্তা দেখায়। প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহারে মানুষ আরও সক্রিয়। রেল স্টেশনে টিকিট চেকিংয়ের কথাই ধরা যাক। ফাঁকি দেওয়ার, ফন্দি ফিস্তি কম নয়। মেট্রো রেলে তার উপায় নেই। অটোমেটিক মেশিনের সঙ্গে পেরে ওঠে না ফাঁকিবাজরা। যন্ত্রের কাছে জব্দ। হাসিনা তনয়, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুণদের সংগঠিত করছেন। নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব তাদের কাঁধেই চাপাচ্ছেন। প্রথম বিশ্ব যা পেরেছে, বাংলাদেশও সেটা পারবে। এটাই তাঁর স্থির বিশ্বাস। মুদ্রণেও তিনি আরও গতি আনতে চান। থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে ইউনির্ভাসিটি অব সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া। এতে প্রিন্টিংয়ের সময় ঘন্টা থেকে মিনিটে নেমে আসবে। জয়ের পরামর্শ, সংবাদপত্র এভাবে ছাপা হলে ভাল হবে। সময়ের আগেই কাগজ পোঁছতে পারবে পাঠকের হাতে।
ডিজিটাল বিচার ব্যবস্থার শুরু সিলেটে। সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২ মার্চ ‘ডিজিটালাইজড উইটনেস ডিপোজিশন সিস্টেম’ চালু করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহা। এতে সাক্ষীর দেওয়া সাক্ষ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট ভাবে সংরক্ষিত হবে। এটা পাইলট প্রজেক্ট। সিলেটের ৪০টি আদালতের ২০টিতে এভাবেই সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। অন্য আদালতেও এ কাজ শুরু হবে দ্রুত।
সিলেটের দেখান রাস্তায় হাঁটবে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টও। একটু সময় হয়ত লাগবে। পরিকাঠামো তৈরি এক দিনে সম্ভব নয়। তবে কাজ থেমে নেই। প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, দেশে ৩০ লাখ মামলা এখনও ঝুলে। তার নিষ্পত্তি কবে হবে বলা যাচ্ছে না। ডিজিটালে মামলার গতি বাড়ানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। তাঁর ধারণা, শত বছরের পুরোন পদ্ধতি বদলে নতুন পদ্ধতি বিচারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। বিচার প্রার্থীদের কষ্ট কমবে।
সুরেন্দ্রকুমার সিনহা গণমাধ্যমকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ডিজিটাল ব্যবস্থার সুযোগ তারাই নিচ্ছে। তারা যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করছে। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তার মানে এই নয়, যা খুশি বলার বা লেখার অধিকার তাদের আছে। স্বাধীনতায় দায়িত্ববোধ না থাকলে, মানুষের মঙ্গল হয় না। ডলার যার গণতন্ত্র তার আমেরিকায় সেটা চলতে পারে, বাংলাদেশে নয়। ১৮৩৬, ১৮৯২-এর মান্ধাতা আমলের আইন চলবে না। তাঁর মত, ফিসারিজ, বালি খাদ, জলাশয়ের ইজারার কোনও আইন নেই। সার্কুলার দিয়েই কাজ সারা হয়। এর জন্য আইন দরকার। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে অগ্রগতি সম্ভব নয়।
সব অসঙ্গতি দূর করতে ডিজিটাল ব্যবস্থার ওপর জোর। এতে বিদেশি বিনিয়োগ টানতেও সুবিধে হবে। বিদ্যুতের সমস্যা আছে ঠিকই। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, ২০১৮তে বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে কোনও বাধাই আর টিকবে না।