প্যারিসের ব্যঙ্গ-পত্রিকা শার্লি এবদো-র দফতরে জঙ্গি হানা। নিহত স্বনামধন্য ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী-সহ আরও কয়েক জন। প্রতিবাদে উত্তাল প্রেমের শহর। ১১ জানুয়ারি, ২০১৫। প্যারিস সরকার ঘোষণা করল ‘ইউনিটি মার্চ’। কনকনে শীতের শহরে এক রবিবার গার দ্যু লেস্থ থেকে প্লাস দো লা রেপুবলিক পর্যন্ত কাতারে কাতারে মানুষ ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা চেয়ে পা মেলালেন।
সেই মিছিলের চরিত্রকে ধরে রাখতে চেয়েছিল এক ভারতীয় ক্যামেরা। ‘‘কিছু বন্ধু আছে প্যারিসে। তাই বেড়াতে আর একটা মাল্টি-লিঙ্গুয়াল ছবি বানানোর শখ নিয়ে মাস দুয়েকের জন্য ফ্রান্সে যাই। তার পরে তো অত কাণ্ড! প্যারিসেই আলাপ ‘মাল্টিডাইমেনশন’ সংস্থার জয়ন্ত চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনিও অডিও-ভিস্যুয়ালের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর কথাতেই যাই ইউনিটি মার্চ কভার করতে,’’ বলছিলেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। মাস কয়েক আগে তাঁর প্রথম বাংলা ছবি ‘ঝুমুরা’ মুক্তি পেয়েছে। তার আগে তাঁর ফ্রান্স-যাত্রা।
এক দিনের বিশেষ মিছিলে তো শুধুই একপেশে একটা চিন্তা। কিছু দিন পরে কেমন হবে ছবিটা? সেটা বুঝতেই মিছিলের এক সপ্তাহ পরে ফের ক্যামেরা নিয়ে তিনি প্যারিসের পথে। শার্লি এবদোর সময় থেকেই স্লোগান উঠেছিল ‘জো সুই শার্লি’ অর্থাৎ ‘আমিই শার্লি’। সেই কথাকে ধরেই ফরাসি, ইতালীয়, বাংলাদেশি- এমন অনেককে প্রশ্ন পরিচালকের, ‘‘আপনি কি এখনও ‘শার্লি’?’’ কেউ এড়িয়ে যান। কেউ মেনে নেন। কেউ জানান, ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ‘গোঁড়ামি’ এড়িয়ে চলার কথা।
সেই সব মত মিলিয়েই তৈরি তথ্যচিত্র ‘এক্সট্রিমিজ্ম ডিনায়েড’। অর্থাৎ, ‘বর্জন করা হল সব ধরনের গোঁড়ামি’। দিন কয়েকের মধ্যেই ছবিটির বিশেষ প্রদর্শন হবে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্যু বেঙ্গাল-এ। সেখানকার ডিরেক্টর স্তেফান আমালিরও জানালেন, ছবি দেখানোর পরে আলোচনা-বিতর্ক হবে ‘ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা’ নিয়ে। ইউটিউবে তথ্যচিত্রটির ট্রেলার এবং ফেসবুকে পোস্টার প্রকাশ হয়েছে। ‘‘আদতে ফরাসি এমন অনেকেও বলছিলেন, ওই ব্যঙ্গ-পত্রিকার চরমভাবাপন্ন কিছু কাজের কথা। এমনও অনেকে বলেছেন, স্বাধীনতা মানে তো এই নয় যে আমি আপনার গালে একটা চড় মেরে দিলাম! অন্য দিকে, ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাহত হবে, এমন চিন্তাও তো সর্বতো ভাবে পরিহার্য।’’ দু’দিক মিলিয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিকেই খুঁজবে তথ্যচিত্র ‘এক্সট্রিমিজ্ম ডিনায়েড’।