মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। — ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি এইচ-১বি ভিসার নিয়মে বিস্তর বদল এনেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই চালু হতে চলেছে সেই নিয়ম। তার আগে মার্কিন প্রশাসন জানাল, অদূর ভবিষ্যতে এইচ-১বি ভিসা দেওয়ার জন্য বিদেশি কর্মীদের বাছাইয়ের প্রক্রিয়াতেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করা হবে। এখন থেকে আর সহজে মার্কিন মুলুকে আসতে পারবেন না কম বেতনসম্পন্ন এবং কম দক্ষ প্রযুক্তি কর্মী ও তাঁদের পরিজনেরা।
সম্প্রতি নিউজ় নেশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন বাণিজ্যসচিব হোয়ার্ড লুটনিক বলেন, ‘‘ভিসা দেওয়ার বর্তমান প্রক্রিয়ায় অনেক গলদ রয়েছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। তার আগেই ভিসার নিয়মে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে।’’ লুটনিকের কথায়, ভিসার আবেদনের জন্য যে বিপুল অঙ্কের টাকা ধার্য করা হয়েছে, তাতে মানুষের উপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া, এইচ-১বি ভিসার জন্য কর্মী বাছাইয়ের লটারি প্রক্রিয়াতেও নানা অসঙ্গতি রয়েছে। কারণ, বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত প্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে লটারির মাধ্যমে কর্মী নির্বাচন কেবল অদ্ভুতই নয়, অযৌক্তিকও বটে।
লটারি ব্যবস্থা নিয়ে লুটনিক বলেন, ‘‘এই নিয়মের কোনও অর্থ নেই। এইচ-১বি ভিসা দানের ১৯৯০ সালের প্রক্রিয়াটি এ বার বদলানো প্রয়োজন। এ নিয়ে ঐকমত্যও রয়েছে।’’ তাঁর মতে, ভিসা দেওয়া হচ্ছে মূলত প্রযুক্তি পরামর্শদাতাদের। এইচ-১বি ভিসার জন্য স্বাভাবিকের থেকে ৭-১০ গুণ বেশি আবেদন জমা পড়ে, যার ৭৪ শতাংশই প্রযুক্তিকর্মী। অথচ এই ভিসা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য তা ছিল না। মার্কিন বাণিজ্যসচিবের কথায়, ‘‘আমাদের উচিত শুধুমাত্র দক্ষ ব্যক্তিদের চাকরি দেওয়া। ডাক্তারি কিংবা শিক্ষকতার মতো পেশাগুলিতেও উচ্চযোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ করা প্রয়োজন। তাঁদেরও ভিসা দেওয়া উচিত। যদি সংস্থাগুলি ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ করতে চায়, তা হলে তাদের উচিত শুধুমাত্র উচ্চ বেতনসম্পন্ন ও দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ করা।’’
এই ব্যবস্থা বদলাতে চলতি মাসেই ‘প্রজেক্ট ফায়ারওয়াল’ নামে একটি উদ্যোগ চালু করতে চলেছে মার্কিন শ্রম দফতর। এর মাধ্যমে দক্ষ মার্কিন শ্রমিকদের অধিকার, বেতন এবং কর্মসংস্থানের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। এই উদ্যোগটি নিশ্চিত করবে যে নিয়োগকর্তারা কর্মী নিয়োগের সময় যোগ্য আমেরিকানদেরই অগ্রাধিকার দেবেন। পাশাপাশি, এইচ-১বি ভিসা প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করলে জবাবদিহি করতে হবে নিয়োগকর্তাদের। মার্কিন শ্রমসচিব লরি শ্যাভেজ-ডেরেমারের কথায়, ‘‘এই উদ্যোগের মাধ্যমে এইচ-১বি ভিসা প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি এবং অপব্যবহার রোখা যাবে।’’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এইচ-১বি ভিসা সংক্রান্ত নিয়মে একের পর এক বদল আনছে আমেরিকা। এখন থেকে এইচ-১বি ভিসার জন্য মার্কিন সংস্থাগুলির কাছ থেকে এক লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা) নেওয়া হবে। তবে যাঁদের ইতিমধ্যেই এইচ-১বি ভিসা রয়েছে, তাঁদের দেশে পুনঃপ্রবেশের ক্ষেত্রে কোনও টাকা দিতে হবে না। কেবলমাত্র যাঁরা নতুন করে এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদন করবেন, তাঁদের জন্য সংশ্লিষ্ট মার্কিন সংস্থাকে এক লক্ষ ডলার দিতে হবে সরকারকে। তার উপর সপ্তাহখানেক আগে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছে, এখন থেকে প্রচলিত লটারি ব্যবস্থা বাতিল করে একটি নতুন বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চালু করা হবে, যাতে ওই ভিসা ব্যবহার করে উচ্চ দক্ষতা এবং উচ্চ বেতনের বিদেশি কর্মীদের আমেরিকায় নিয়ে আসতে পারে বিভিন্ন সংস্থা। নয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, কর্মীদের নির্ধারিত বেতনস্তরের ভিত্তিতে ভিসা দেওয়ার জন্য বাছাই করা হবে। চারটি বেতনস্তরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে থাকা কর্মীরা, অর্থাৎ যাঁদের বার্ষিক বেতন ১৬২,৫২৮ মার্কিন ডলার, তাঁরা চার বার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। সর্বনিম্ন স্তরে থাকা কর্মীরা সেই সুযোগ পাবেন কেবলমাত্র এক বার। অর্থাৎ, উচ্চ বেতনের অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রার্থীদের নির্বাচনের সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে যাবে। অন্য দিকে, সদ্য স্নাতক হওয়া কিংবা নবাগত কর্মীরা সুযোগ পাবেন কম। সেই আবহে এ বার ভিসার নিয়ম বদলের পথে আরও এক ধাপ এগোল ট্রাম্প প্রশাসন।