প্রেসিডেন্টের এক চিঠিতেই ছাঁটাই কোমি

এফবিআই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। শিক্ষানবিশ গোয়েন্দাদের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছেন গোয়েন্দা-কর্তা। হঠাৎ ঘরের একাধিক টিভি স্ক্রিনে ফুটে উঠল— ‘বরখাস্ত জেমস কোমি’।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ০৩:৩২
Share:

ট্রাম্প ও কোমি।

এফবিআই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। শিক্ষানবিশ গোয়েন্দাদের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছেন গোয়েন্দা-কর্তা। হঠাৎ ঘরের একাধিক টিভি স্ক্রিনে ফুটে উঠল— ‘বরখাস্ত জেমস কোমি’। ‘‘নির্ঘাত রসিকতা’’— মুখে বললেও ধুরন্ধর কর্তা মুহূর্তে বুঝে যান, তাঁর ‘পিঙ্ক স্লিপ’-এ সই করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঠিক তাই! কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁর হাতে চলে এল ট্রাম্পের চিঠি।

Advertisement

‘অযোগ্য’ তকমা নিয়ে চাকরি খোয়ালেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এইফবিআই-এর ডিরেক্টর জেমস কোমি (৫৬)। একদা ‘প্রিয়পাত্র’ কোমিকে চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, ‘‘মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্সের সুপারিশের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত।’’ মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত করছিলেন এফবিআই প্রধান। সে জন্যই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হলো, ফিসফাস ক্যাপিটলের অলিন্দে। প্রেসিডেন্টের দাবি, ‘‘কাজটা ঠিকঠাক করছিলেন না জেমস কোমি। তাই তাঁকে বরখাস্ত করতে হলো!’’ জাস্টিস ডিপার্টমেন্টও বলছে, প্রাক্তন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনের ই-মেল তদন্ত নিয়ে সম্প্রতি কংগ্রেসকে ত্রুটিপূর্ণ তথ্য দেন কোমি। সেই কারণেই তাঁকে সরানো হয়েছে। এই জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের কাছেই কয়েক দিন আগে কোমি দরবার করেছিলেন, রুশ হ্যাকি‌ং নিয়ে তদন্ত চালাতে তাঁকে আরও সাহায্য করা হোক।

রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত প্রসঙ্গে কয়েক সপ্তাহ ধরে লাগাতার টুইটারে মন্তব্য করে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর মুখে একটাই কথা— করদাতাদের টাকা এ ভাবে খরচ করার কোনও মানে হয় না। কাল কোমিকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প আরও বলেন, “আপনাকে ধন্যবাদ যে, আপনি তিন বার আমায় জানিয়েছিলেন, আপনার তদন্তের নিশানায় আমি নেই। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে এ বিষয়ে আমি একমত যে, আপনি আর এফবিআইয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার উপযুক্ত নন।”

Advertisement

বরখাস্ত: জেমস কোমিকে এই চিঠিই পাঠিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি।

ঘটনাচক্রে, আজই হোয়াইট হাউসে রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ট্রাম্পের। এফবিআই-কর্তাকে বরখাস্ত করা নিয়ে তাই ডোমোক্র্যাটদের সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন রিপালিকানদের একাংশও। গোয়েন্দা কমিটির ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি অ্যাডাম বি শিফের কথায়, ‘‘অপরাধ ঢাকতে, তদন্ত অন্য পথে ঘুরিয়ে দিতে হোয়াইট হাউস যে ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে, তা সত্যিই বিপজ্জনক।’’ চুপ নেই ট্রাম্প-বিরোধী রিপাবলিকান নেতারাও। ২০০৮-এ বারাক ওবামার প্রতিদ্বন্দ্বী সেনেটর জন ম্যাককেন যেমন বলেছেন, ‘‘প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছি। আশা করি, এ ব্যাপারে দ্রুত স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে।’’ ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরেই বরখাস্ত হওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল প্রীত ভারারা-ও বিষয়টিকে মার্কিন গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়াবহ বলে একহাত নিয়েছেন প্রেসিডেন্টকে।

২০১৩-য় কোমিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মাথায় বসিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সাধারণত এই পদের মেয়াদ ১০ বছর। সেই হিসেবে এখনও ৬ বছর চাকরি ছিল কোমির। ভোটের ঠিক মুখে হিলারির বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরু করে ট্রাম্পের বিস্তর প্রশংসা কুড়োন কোমি। এক ধাক্কায় জনপ্রিয়তা কমে যায় হিলারির। কোমি পরে হিলারিকে ক্লিনচিট দিলেও বদলায়নি পরিস্থিতি। সপ্তাহ খানেক আগে হিলারিও তাঁর হারের জন্য কোমিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। তাই রাতারাতি এ ভাবে ছাঁটাই হওয়ার কথা ঠাহর করতে পারেননি কেউই। যদিও ইঙ্গিত
একটা ছিলই। হিলারির অভিযোগের জবাবে ট্রাম্প টুইট করেছিলেন, ‘‘কোমি তো হিলারির কাছে আশীর্বাদের মতো। কারণ কোমির জন্যই ওঁর অনেক অনৈতিক কাজকর্ম ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছিল।’’

অনেকে আবার এর সঙ্গে সাতের দশকে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন জমানার ‘ওয়াটারগেট’ কেলেঙ্কারির মিল খুঁজে পাচ্ছেন। তদন্তকারী নিরপেক্ষ কৌঁসুলিকে সে বারও রাতারাতি ছেঁটে ফেলেছিলেন নিক্সন। পরে যদিও তদন্ত ধামাচাপা দিতে চাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন নিক্সন। পরে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফাও দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন