ডোনাল্ড ট্রাম্প। — ফাইল চিত্র।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় আর বিদেশি পড়ুয়াদের ভর্তি নিতে পারবে না বলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে শুক্রবার প্রতিক্রিয়া জানালেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানালেন, এই সিদ্ধান্ত ‘বেআইনি’। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষ, গবেষণার প্রকল্পগুলি ধাক্কা খেতে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ট্রাম্প প্রশাসন পাল্টা শর্ত চাপিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে। জানিয়েছে, ওই ছয় শর্ত মেনে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশি পড়ুয়াদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিলে তারা আবার নতুন শিক্ষাবর্ষে বিদেশি পড়ুয়াদের ভর্তি নিতে পারবে। ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিসিটর প্রোগ্রাম’-এর শংসাপত্র প্রত্যাহার করা হবে না। বৃহস্পতিবার, ২২ মে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে এই শংসাপত্র প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে আমেরিকার নিরাপত্তা সচিব ক্রিস্টি নোয়াম।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন জানিয়েছে, বিদেশ থেকে আর পড়ুয়াদের ভর্তি নিতে পারবে না হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি, এ-ও জানিয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যে সব বিদেশি পড়ুয়া পড়াশোনা করছেন, তাঁদের দ্রুত অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে। নয়তো তাঁদের ভিসা বাতিল করা হবে। এর পরেই শুক্রবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র জেসন নিউটন বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘বিদেশ থেকে আসা পড়ুয়া এবং গবেষকদের শিক্ষাদানের বিষয়ে যে দক্ষতা রয়েছে হার্ভার্ডের, সেই বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৪০টি দেশ থেকে এখানে পড়াশোনা করতে আসেন ছাত্র-ছাত্রী, গবেষকেরা। তাঁরা এই বিশ্ববিদ্যালয়, তথা দেশকে সমৃদ্ধ করেন। আমরা তাঁদের পথ দেখাই। সাহায্য করি। এই প্রত্যাঘাত হার্ভার্ডের পড়ুয়া এবং আমাদের দেশের ক্ষতি করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষ, গবেষণার কাজেও ধাক্কা দিতে পারে।’’
বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ৬০০০ বিদেশি পড়ুয়া সেখানে ভর্তি হয়েছেন। মোট পড়ুয়ার ২৭.৩ শতাংশই বিদেশি। কর্তৃপক্ষের তরফে এ-ও জানানো হয়েছে যে, এই বিদেশি পড়ুয়াদের জমা করা টিউশন ফি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ চলে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের অন্যতম উৎস হল বিদেশি পড়ুয়াদের জমা করা টিউশন ফি।’’ প্রসঙ্গত, বিদেশি পড়ুয়াদের টিউশন ফি সে দেশের পড়ুয়াদের থেকে বেশি। তাতে কোপ পড়লে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ছয় শর্ত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ট্রাম্পের প্রশাসন যদিও ছয়টি শর্ত রেখেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। জানিয়েছে, সেই শর্ত মেনে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশি পড়ুয়াদের বিষয়ে নথিপত্র জমা করলে তারা আবার বিদেশ পড়ুয়াদের ভর্তি নিতে পারবে। কী কী নথি জমা করতে হবে কর্তৃপক্ষকে? এক, বিদেশি পড়ুয়ারা গত পাঁচ বছরে ক্যাম্পাসের ভিতরে ও বাইরে ‘বেআইনি কার্যকলাপ’ জড়ালে, সেই নথি দিতে হবে। দুই, তাঁরা গত পাঁচ বছরে ‘হিংসাত্মক কার্যকলাপ’-এ জড়িয়ে পড়লে সেই নথি দিতে হবে। তিন, বিদেশি পড়ুয়ারা অন্য পড়ুয়া বা শিক্ষকদের ‘হুমকি’ দিলে সেই সংক্রান্ত নথি ট্রাম্প প্রশাসনকে দিতে হবে। চার, ক্যাম্পাসের ভিতরে বা বাইরে যদি বিদেশি পড়ুয়ারা অন্যদের কখনও তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন, তা হলে সেই নথি জমা করতে হবে। পাঁচ, গত পাঁচ বছরে বিদেশি পড়ুয়ারা কখনও শৃঙ্খলাভঙ্গ করলে সেই নথি দিতে হবে। এবং ছয়, গত পাঁচ বছরে বিদেশি পড়ুয়ারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখালে তার অডিয়ো এবং ভিডিয়ো ট্রাম্প প্রশাসনকে দিতে হবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে।
পশ্চিম এশিয়ায় হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধের আবহে আমেরিকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্যালেস্টাইনের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। মার্কিন প্রশাসন অভিযোগ করে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ইহুদি-বিদ্বেষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সঠিক পদক্ষেপ করছেন না বলেও অভিযোগ তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষ বন্ধ করার জন্য কী কী করণীয়, সে বিষয়ে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছিল সরকারের তরফে। কিন্তু সরকারের দেওয়া শর্তাবলি মানতে রাজি ছিল না হার্ভার্ড। ‘শাস্তিস্বরূপ’ অনুদান বন্ধের কথা বলে মার্কিন প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি (ভারতীয় মুদ্রায় ১৭ হাজার কোটিরও বেশি) আর্থিক অনুদান বন্ধের ঘোষণা করে ট্রাম্প সরকার। অনুদান বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। সেই আবহে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৪৫ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় চার হাজার কোটি) আর্থিক অনুদান বন্ধ করা হয়। এ বার সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি পড়ুয়া ভর্তির শংসাপত্রও বাতিল করে ট্রাম্প প্রশাসন। আমেরিকার নিরাপত্তা সচিব ক্রিস্টি নোয়াম জানিয়েছেন, বিদেশি পড়ুয়াদের বিষয়ে তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁর আরও অভিযোগ, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হামাসের সমর্থনে উস্কানি দেওয়া হয়। এর ফলে ইহুদি পড়ুয়ারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।
আমেরিকার নিরাপত্তা সচিব নোয়াম সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘‘হার্ভার্ডের ক্যাম্পাসে হিংসা, ইহুদি-বিদ্বেষ, চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সহযোগিতা গড়ে ওঠার জন্য দায়ী থাকবেন এই কর্তৃপক্ষ। বিদেশি পড়ুয়াদের ভর্তি করানোটা কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার হতে পারে না। সুবিধার মধ্যে পড়ে। ওই বিদেশি পড়ুয়াদের দেওয়া ফি তাদের সাহায্য করে। অনেক সঠিক কাজ করার সুযোগ ছিল হার্ভার্ডের। কিন্তু তারা তা করেনি।’’ আর সে কারণেই হার্ভার্ডের ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিসিটর প্রোগ্রাম’-এর শংসাপত্র বাতিল করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এই পদক্ষেপকে ‘বেআইনি’ বললেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।