ডোনাল্ড ট্রাম্প
মুখোমুখি সাক্ষাতের আগে দুই রাষ্ট্রনেতার মুখেই শোনা যাচ্ছিল, ‘ভাল ভাল’ কথা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশংসা করছিলেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের। ভাবমূর্তি ‘পাল্টানোর’ জন্য কিমও যে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন, তা নজর এড়ায়নি সংবাদমাধ্যমের। তবে তিনি দুম করে করে বদলে যেতে চাইলেও উত্তর কোরিয়া যে আছে উত্তর কোরিয়াতেই, সমালোচনায় সেটাই মনে করিয়েছে মার্কিন বিদেশ দফতর।
কূটনীতিকদের মতে, সে দেশে চলতে থাকা একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ইতি পড়ে গিয়েছে, এমন কষ্টকল্পনা কেউই করতে পারবেন না! ট্রাম্প-কিমের ‘মনভোলানো’ কথায় তাই বাদ সাধল মার্কিন বিদেশ দফতরের তীব্র তিরস্কার। ‘বিশ্বের অন্যতম দমনমূলক এবং অত্যাচারী সরকারের’ শাসন চলছে উত্তর কোরিয়ায়— স্পষ্ট ভাষায় মার্কিন বিদেশ দফতরের এই সমালোচনা ট্রাম্প-কিমের আলোচনার আগে বড় ধাক্কা।
এক সময় যাঁকে ‘লিটল রকেট ম্যান’ বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন, তাঁকে নিয়ে এখন ট্রাম্প মুখে কুলুপ আঁটলেও মার্কিন বিদেশ দফতর কিমের দেশে কয়েক দশক ধরে চলতে থাকা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়ঙ্কর ঘটনা নিয়ে ভর্ৎসনা করেছে উত্তর কোরিয়ার প্রশাসনকে। মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র হেদার নোয়ার্ট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘গত ৬০ বছরে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাক্ষী হয়েছেন উত্তর কোরিয়ার মানুষ। শিশু-সহ অন্তত এক লক্ষ মানুষকে রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে রেখে দেওয়া হয়েছে। মৌলিক অধিকার থেকেও পুরোপুরি বঞ্চিত তাঁরা। আর এই দমনমূলক রাষ্ট্র ছেড়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়লে মৃত্যু অবধারিত, নয়তো অকথ্য নির্যাতন।’’
বিতর্কিত এই সব বিষয় নিয়ে মার্কিন বিদেশ দফতর উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, ‘এই ভয়ানক অবস্থার জন্য যারা দায়ী, তাদের উপরে চাপ তৈরি করা থেকে সরে আসব না আমরা।’
আপাতত কিমের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্পের লক্ষ্য, যে করেই হোক উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি আদায় করা। বস্তুত দিন কয়েক আগেই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কিম বলেন, ‘‘আমেরিকা আক্রমণ না করলে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে কোনও বাধা নেই।’’
তবে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে মার্কিন বিদেশ দফতর কী ভাবে উত্তর কোরিয়ার উপরে চাপ বাড়াতে চায়, তা স্পষ্ট নয়। নোয়ার্ট বলেছেন, ‘‘আমরা চাই বিচ্ছিন্ন এই দেশটি থেকে যথাসম্ভব নিরপেক্ষ তথ্য বাইরে আনতে। পাশাপাশি চাই বাইরের দুনিয়ার বাস্তব চিত্রটাও সে দেশে পৌঁছে দিতে।’’ তথ্য আদান-প্রদানের সহজ রাস্তাটিও উত্তর কোরিয়া শক্ত হাতে বন্ধ করে রেখেছে। তাই সে পথ খুলতেই আগ্রহী আমেরিকা।