যুবরাজকে কি আড়াল করতে চাইছেন ট্রাম্প!

সন্তুষ্ট নয় ব্রিটেন-ফ্রান্স-জার্মানি। হোয়াইট হাউস কাল জানিয়েছিল, সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুনের তদন্তে সৌদি আরবের উপর কড়া নজর রাখবে আমেরিকা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০১:২১
Share:

সন্তুষ্ট নয় ব্রিটেন-ফ্রান্স-জার্মানি। হোয়াইট হাউস কাল জানিয়েছিল, সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুনের তদন্তে সৌদি আরবের উপর কড়া নজর রাখবে আমেরিকা। রিয়াধের বিবৃতিকে ‘সন্দেহজনক’ বলে তোপ দেগেছিলেন সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহামেরা। পরোক্ষে তাঁরা নিশানা করেছিলেন সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনকেও (এমবিএস)। মার্কিন প্রেসি়ডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও জানালেন, সৌদি-রিপোর্টে তিনি অসন্তুষ্ট। কিন্তু তার পরেই যে ভাবে তিনি যুবরাজকে কার্যত ক্লিনচিট দিয়ে বসলেন, আজ তা নিয়েই নয়া বিতর্ক।

Advertisement

কাল এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘‘সাংবাদিক খুনের ব্যাপারে যুবরাজের কিছু না-জানাটা অসম্ভব নয়।’’ আমেরিকা নিজেদের মতো করে তদন্ত করবে বলেও জানান তিনি। তবে রিয়াধের সঙ্গে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি যে বাতিল হচ্ছে না, তা স্পষ্ট করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসাটা না হলে ওদের চেয়ে আমাদেরই ক্ষতি বেশি।’’ দিন তিনেক আগে এই ট্রাম্পকেই বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘সাংবাদিক খুনে সৌদি-যোগ প্রমাণ হলে রিয়াধকে কড়া শাস্তি দেবে আমেরিকা।’’ কিন্তু এ দিন সৌদি যুবরাজকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘সাংবাদিক খুনে যুবরাজ জড়িত বলে আমাকে কেউ জানাননি। জড়িত নন, এমন প্রমাণও নেই। তবে আমার মতে, এমবিএস সত্যিই দেশকে ভালবাসেন।’’ শীঘ্রই যুবরাজের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

খাশোগিকে যে ইস্তানবুলের সৌদি কনসুলেটে খুন করা হয়েছিল, গত কাল তা স্বীকার করেছে সৌদি আরব। জানিয়েছে, প্রশাসনের পাঁচ শীর্ষকর্তাকে বহিষ্কার করেছে তারা। এঁদের মধ্যে দু’জন যুবরাজ-ঘনিষ্ঠ। তাই রাজ পরিবারের নির্দেশেই খাশোগিকে খুন করা হয়েছিল কি না, সন্দেহ থাকছে।

Advertisement

তুরস্কের দাবি, খুনের অডিয়ো-ভিডিয়ো টেপ তাদের হাতে রয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের একাংশের রিপোর্ট, সেই টেপ দেখেছে সিআইএ-ও। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদিও জানিয়েছেন, এমন কিছু থাকলে, তিনিই সেটা সবার আগে পেতেন।

সৌদি-বিবৃতিতে কাল বলা হয়, বচসা থেকে হাতাহাতির জেরেই খুন। আজ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সৌদি কর্মকর্তা আরও সবিস্তার জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, খাশোগিকে সৌদিতে ফেরাতে চেয়েই ২ অক্টোবর ইস্তানবুল গিয়েছিল ১৫ জনের সৌদি স্কোয়াড। পরিকল্পনা ছিল, তাঁকে অপহরণ করে কিছু দিন ইস্তানবুলের বাইরে সেফ হাউসে রাখার। খাশোগি রাজি না হলে পরে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ওই কর্মকর্তার কথা অনুযায়ী, সে দিন গোড়াতেই বেঁকে বসেন খাশোগি। জানান, কনসুলেটের বাইরে অপেক্ষমান বাগদত্তাকে সব বুঝিয়ে তিনি ভিতরে এসেছেন। পরিস্থিতি বেহাত হওয়াতে স্কোয়াডের এক সদস্য গলা চেপে ধরেন সাংবাদিকের। মারা যান খাশোগি। কিন্তু তাঁকে খুনের কোনও পরিকল্পনা ছিল না বলে দাবি করেছেন ওই কর্মকর্তা।

খাশোগিকে খুনের পরে, স্কোয়াডে থাকা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ সব প্রমাণ নষ্ট করেন। অন্য এক জন কনসুলেটের চোখে ধুলো দিতে সাংবাদিকেরই পোশাক পরে বেরিয়ে যান। তুরস্ক প্রথম থেকেই বলে আসছে, খাশোগির দেহ টুকরো টুকরো করে জঙ্গলে পুঁতে ফেলেছে সৌদি স্কোয়া়ড। সৌদি কর্মকর্তা যদিও জানিয়েছেন, কাপড়ে মুড়ে কনসুলেটের গাড়িতেই দেহ পাচার করে দেওয়া হয়েছিল সে দিন।

স্কোয়াডের মাথা ছিলেন যুবরাজ-ঘনিষ্ঠ সৌদির গোয়েন্দা বিভাগের উপপ্রধান আহমেদ আল-আসিরি। সৌদি কর্মকর্তার দাবি, স্কোয়াডকে স্বাধীন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। গোড়ায় সৌদি আরব কিন্তু খুনের কথা মানতে চায়নি। কারণ, প্রশাসন ও রাজ পরিবারকে সে দিন ঘটনাস্থল থেকে ভুয়ো রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। এত সব জানলেন কী ভাবে ওই কর্মকর্তা? সাংবাদিক খুনে রাজ পরিবারের যে কোনও যোগ নেই, সেটা প্রমাণ করতেই কি এমন কাউকে এগিয়ে দেওয়া হল? জল্পনা তা নিয়েও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন