প্রচারের সময় বলেছিলেন, আমেরিকায় মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে চান। সেই ‘প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট’ ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বার পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ‘অকুণ্ঠ’ প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন— দাবি করেছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দফতর। শুধু তাই নয়, তাদের দাবি, মার্কিন প্রশাসন পাকিস্তানকে সাহায্য করতে ‘যে কোনও ভূমিকা’ পালন করতে আগ্রহী।
গত কাল রাতে সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেছিলেন শরিফ। সেই সময়েই নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় দুই নেতার মধ্যে। তার পরে পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে: ‘‘ট্রাম্প শরিফকে বলেছেন, আপনাদের সমস্যা সমাধানে যে কোনও ভূমিকা নিতে আমি তৈরি। এটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক বিষয়। ২০ জানুয়ারির আগেও (প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার কথা) আমাকে ফোন করতে দ্বিধা করবেন না।’’ ওই বিবৃতি অনুযায়ী, এর পরে ট্রাম্প শরিফের প্রশংসা করে বলেন, ‘‘আপনি অসাধারণ! দারুণ কাজ করছেন। আপনার সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী আমি। আপনার সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে আপনি যেন অনেক দিনের চেনা!’’ বিবৃতিতে রয়েছে, পাকিস্তান ‘অসাধারণ’ দেশ। প্রচুর সুযোগ রয়েছে এখানে। পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতর বলেছে, শরিফও ট্রাম্পকে তাঁর দেশে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যা শুনে ট্রাম্প জানিয়েছেন তিনিও পাকিস্তানে যেতে চান।
তবে মজার কথা হলো, পাকিস্তান এবং শরিফকে নিয়ে ট্রাম্প এত ‘প্রশংসা’ করলেও প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট-এর অন্তর্বর্তিকালীন দলের তরফে এমন কিছুই জানানো হয়নি। তারা শুধু বলেছে, দুই নেতার মধ্যে কথা হয়েছে। ভবিষ্যতে পাকিস্তান এবং আমেরিকা কী ভাবে দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে তাঁদের।
পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতর যা বিবৃতি দিয়েছে তা নিয়ে মন্তব্য করেনি ট্রাম্পের অন্তর্বর্তিকালীন দল।
৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পরে বিশ্বনেতাদের মধ্যে অনেকের সঙ্গেই ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। একেবারে প্রথম দিকে যাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তার মধ্যে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীও।
এমনিতে আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তাতে ট্রাম্পের তরফে শরিফের জন্য এতটা প্রশংসা ভাঁজ ফেলেছে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কপালেও। তাঁরা এই কথোপকথনের ‘সত্যতা’ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কূটনীতিকদের মতে, মাসুদ আজহার এবং হাফিজ সইদের মতো জঙ্গি নেতাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নিষ্ক্রিয়তায় যথেষ্ট বিরক্ত মার্কিন প্রশাসন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের মদত দেওয়ার অভিযোগও নতুন কিছু নয়। ভারতও এ ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ বিভিন্ন সময় দিয়ে এসেছে। তাই পাকিস্তান নয়, কূটনীতিকরা বলছেন, বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়েছে ভারত আর আমেরিকারই। গত অগস্টেই দু’দেশ একে অপরের সেনা ঘাঁটি ব্যবহারের জন্য চুক্তি করেছে। যাতে আদতে উদ্বেগ বেড়েছে পাকিস্তানেরই। তা ছাড়া, জঙ্গিদমন প্রশ্নে পাকিস্তানের অবস্থানে আমেরিকা যে মোটেই খুশি নয়, তা পাকিস্তানে ত্রাণসাহায্যে কাটছাঁট থেকেই স্পষ্ট। এই অক্টোবরেই এক নির্দেশিকা এনে প্রয়োজন ছাড়া পাকিস্তানে মার্কিন নাগরিকদের সফর নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান নিয়ে ট্রাম্পের এত ‘প্রশংসা’ হজম হয়নি মার্কিন সংবাদমাধ্যমেও। এক দৈনিকের দাবি, ‘‘ট্রাম্পের এই প্রশংসা সত্যি অভাবনীয়। চার বছর আগেও টুইটারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন ট্রাম্প।’’