USA

শপিং মলের ড্রেসিং রুমে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প, অভিযোগ মার্কিন লেখিকার

ক্যারল বলেছেন, সেই সময় ট্রাম্প সুদর্শন ছিলেন। ক্যারলের দাবি, কোনও এক মহিলার জন্য উপহার কিনতে তাঁকে সাহায্য করার আর্জি জানান ট্রাম্প।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৯ ১২:০৪
Share:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনলেন মার্কিন লেখিকা। —ফাইল চিত্র

মার্কিন প্রেসিডেন্টের যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগের তালিকায় যুক্ত হল আরও এক মহিলার নাম। এ বার ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনলেন ই জিন ক্যারল নামে নিউইয়র্কের এক লেখিকা। নিজের লেখা একটি বইয়ে ক্যারলের দাবি, প্রায় দু’দশক আগে একটি শপিং মলের ড্রেসিং রুমে তাঁর শ্লীলতাহানি করেন ট্রাম্প। ওই বই প্রকাশের পর একটি ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে ফের সেই কাহিনীর বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। যদিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে ক্যারলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বাজারে নিজের বইয়ের চাহিদা বাড়ানোর জন্যই ওই মহিলা মিথ্যে কাহিনি রটাচ্ছেন বলেও দাবি ট্রাম্পের।

Advertisement

মূলত মহিলাদের স্বার্থরক্ষায় এবং নারী অধিকার নিয়ে মার্কিন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির জন্য জনপ্রিয় ক্যারল। নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে তাঁর বহু লেখা বিভিন্ন সময়ে সমাদৃত হয়েছে। বর্তমানে ৭৫ বছর বয়সী ক্যারলের লেখা একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ওই ঘটনার উল্লেখ করার পরই শোরগোল পড়ে গিয়েছে মার্কিন মুলুকে। এর পর ওয়াশিংটন পোস্টে একটি সাক্ষাৎকারে বিষয়টি ফের উল্লেখ করেছেন ক্যারল।

ঠিক কী হয়েছিল সেদিন? ক্যারলের দাবি অনুযায়ী, ঘটনাটি ১৯৯৫ সালের শেষের দিকে বা পরের বছরের শুরুর দিকের। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ওই শপিং মলে একটি টিভি শোয়ের সঞ্চালনা করছিলেন তিনি। শো শেষ হওয়ার পর শপিং মল বন্ধ হওয়ার হওয়ার মুখে তিনি ট্রাম্পের কাছে যেতেই ট্রাম্প তাঁকে চিনতে পারেন। তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি তো সেই উপদেশ দেওয়া মহিলা।’’

Advertisement

ক্যারল বলেছেন, সেই সময় ট্রাম্প সুদর্শন ছিলেন। ক্যারলের দাবি, কোনও এক মহিলার জন্য উপহার কিনতে তাঁকে সাহায্য করার আর্জি জানান ট্রাম্প। তার পর ক্যারল সেই মহিলার বয়স জিজ্ঞেস করেন। ট্রাম্প সেটা না জানিয়ে উল্টে ক্যারলের বয়স জিজ্ঞেস করেন। ক্যারল নিজের বয়স ৫২ বছর বলার পর ট্রাম্প তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি অনেকটাই বয়স্ক।’’ সেই সময় ট্রাম্পের বয়স ছিল ৪৯ বছর।

আরও পড়ুন: জঙ্গি দমনে ব্যবস্থা না হলে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে, পাকিস্তানকে চরম হুঁশিয়ারি এফএটিএফ-এর

আরও পডু়ন: কাটমানির অভিযোগ জানান প্রশাসনকে, নির্দেশ মমতার, চালু টোল ফ্রি নম্বর

ক্যারলের বক্তব্য, ‘‘ট্রাম্প তখন একটি টুপি কেনেন এবং উল্লিখিত মহিলার উপহার কেনার নাম করে মলের উপরের তলায় একটি অন্তর্বাসের দোকানে নিয়ে যান। সেই সময় যেহেতু শপিং মল বন্ধ হচ্ছিল, তাই ওই এলাকায় কোনও লোকজন ছিল না। ট্রাম্প সেই সময় কয়েকটি অন্তর্বাস ও একটি স্বচ্ছ গাউন নেন এবং আমাকে পরতে বলেন।’’ তাঁর শরীরের সঙ্গে পোশাক মানানসই বলেও ট্রাম্প মন্তব্য করেন বলে দাবি ক্যারলের। লেখিকার দাবি, পাল্টা ট্রাম্পকেই সেগুলো পরতে পলেন তিনি।

ক্যারলের দাবি অনুযায়ী, এর পরই শুরু হয় তাঁর অগ্নিপরীক্ষা। তাঁরা একটি ড্রেসিং রুমের কাছে যেতেই ট্রাম্প তাঁকে দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরেন। সেখানেই তাঁকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করেন। তার পর জোর করে তাঁর অন্তর্বাস খুলে ফেলেন যৌনাঙ্গে হাত দেন। এর পর নাকি নিজের প্যান্টের চেনও খুলে ফেলেন ট্রাম্প। ক্যারলের আরও দাবি, প্রথমে হেসে ট্রাম্পকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন তিনি। তার পর কোনও রকমে ধাক্কা দিয়ে ট্রাম্পকে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান।

কিন্তু এত দিন কেন সেই ঘটনা সামনে আনেননি ক্যারল? এমনকি, ২০১৬-১৭ সালে যখন মার্কিন মুলুকে #মিটু আন্দোলনের ঝড় উঠেছিল, তখনও সামনে আসেননি কেন? লেখিকার দাবি, “তার জন্য আমি নিজেকে দোষারোপ করেছি, আমি নীরব ছিলাম এবং আমি ভিতরে ভিতরে পাপবোধ করেছি।’’ নিজের অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে সেই সময় দুই বন্ধুর কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন ক্যারল। ওয়াশিংটন পোস্টের তরফে সেই দুই বান্ধবীর এক জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনিও স্বীকার করেছেন যে, ক্যারল সেই সময় তাঁকে ঘটনার কথা বলেছিলেন। লেখিকার ওই বান্ধবী এও দাবি করেছেন, সেই সময়ই তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দৃঢ় ভাবে ঘটনার কথা অস্বীকার করে দাবি করেছেন, এটা ‘ফেক নিউজ’। একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘সেই সময় শপিং মলের কোনও ফুটেজ নেই বা মলের কোনও কর্মী সাক্ষী নেই?’’ একটি বিবৃতি দিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য, ‘‘জীবনে কখনও ওই মহিলার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়নি। উনি নতুন একটা বই বিক্রির চেষ্টা করছেন। সেই উদ্দেশ্যেই এই সব রটাচ্ছেন। এটা কোনও কল্পকাহিনী বিভাগে বিক্রি হতে পারত।’’ ওই বিবৃতিতেই ট্রাম্পের আহ্বান, কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন, ক্যারল বা ওই ম্যাগাজিন ডেমোক্র্যাট পার্টির হয়ে কাজ করছে, তাহলে সামনে আসুন।

প্রসঙ্গত, ক্যারল ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে তিনি হিলারি ক্লিন্টনের হয়ে ভোট দিয়েছেন। সেই সময় দলকে মহিলা প্রার্থীদের খরচের জন্য ১০০০ মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন। আবার ২০১২ সালে বারাক ওবামা যখন দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়ছেন, তখনও ৫০০ মার্কিন ডলার সাহায্য করেছিলেন ওবামার ডেমোক্র্যাট পার্টির নির্বাচনী খরচের জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন