সেইফ-ই খুনি, মানতে পারছে না পরিবার

ফুটবল খেলতে খুব ভালবাসত সে। ভালবাসত পাশ্চাত্য সঙ্গীতও। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কফিশপে সিগারেট হাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতেও হামেশা দেখা যেত তাকে। সুসের সৈকতে কালাশনিকভ হাতে সে-ই যে ৩৯ জন বিদেশি পর্যটককে মেরে ফেলেছে সে কথা এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না গোটা গাফুর। সেইফেদ্দিন রেজগুইয়ের নিজের শহর।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

তিউনিস শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০৩:১৮
Share:

হোটেলে তিউনিসিয়া নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। ছবি: এফপি।

ফুটবল খেলতে খুব ভালবাসত সে। ভালবাসত পাশ্চাত্য সঙ্গীতও। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কফিশপে সিগারেট হাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতেও হামেশা দেখা যেত তাকে। সুসের সৈকতে কালাশনিকভ হাতে সে-ই যে ৩৯ জন বিদেশি পর্যটককে মেরে ফেলেছে সে কথা এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না গোটা গাফুর। সেইফেদ্দিন রেজগুইয়ের নিজের শহর।

Advertisement

সেইফ রেজগুই। এই একটা নাম গত তিন ধরে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সারা দেশের কাছে। সৈকত শহর সুসের এক রিসর্টে বন্দুক হাতে হামলা চালিয়ে গত শুক্রবার ৩৯ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল সেইফ। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তারও। কিন্তু ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য সেইফ যে এমন নৃশংস কিছু করতে পারে, তা আজও বিশ্বাস করতে পারছেন না তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা।

গাফুর হল দক্ষিণ-পশ্চিম তিউনিসিয়ার এক কৃষিপ্রধান শহর। সেখানেই থাকে সেইফের পরিবার। বছর তেইশের সেইফ গত কয়েক বছর ধরে কাইরৌয়ানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিল। গাফুরের মতো ছোট শহরে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই। তাই বাড়ির মেধাবী ছেলেকে অন্য শহরে পাঠানোর আগে দু’বার ভাবেনি সেইফের পরিবার।

Advertisement

রেজগুই পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, হামলার ঠিক দু’দিন আগে নিজের শহরে ফিরেছিল সেইফ। একটা গোটা দিন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে কাটিয়েছিল। পরের দিন গিয়েছিল এক কাকার বাড়ি। সেখানেও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে গল্পগুজব করেছে। কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাননি, এক দিনের মধ্যে কী সাংঘাতিক অভিযানে যাচ্ছে সে। ‘‘ও ধর্ম নিয়ে একটা কথাও বলেনি। আর ওর মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদের কোনও চিহ্নই আমরা সে দিন দেখতে পাইনি,’’ বলেছেন মহম্মদ নামে সেইফেরই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ‘‘হয়তো বাইরে পড়তে গিয়েই ওর চিন্তাধারায় বদল এসেছিল,’’ বললেন আলি রেজগুই। সেইফের কাকা। সেইফের বাবা অবশ্য গোটা বিষয়টির জন্য আইএসকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, তাঁর ভাল ছেলের মাথাটা ওই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনই বিগড়ে দিয়েছে। ইন্টারনেটেই আইএসের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে বলে মনে করছে তার পরিবার।

ধর্ম নিয়ে কখনও প্রকাশ্যে কথা না বলা সেইফ কী ভাবে আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হল, তা-ই এখন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। তাঁরা জানতে পেরেছেন, সেইফ নিয়মিত মসজিদে প্রার্থনা করতে যেত বটে। কিন্তু তার মধ্যে কখনও উগ্র মৌলবাদী মনোভাব প্রকাশ পায়নি। তবে কাইরৌয়ান যাওয়ার পরই যে সেইফের মধ্যে পরিবর্তন এসেছিল সে বিষয়ে একরকম নিশ্চিত গোয়েন্দারা। আর তাঁরাই বলছেন, অতি সন্তর্পণে নিজের সেই সত্তা বাইরের জগতের কাছে লুকিয়ে রেখেছিল সে।

আজ আবার তদন্তকারীদের হাতে এসেছে এগারো মিনিটের একটা ভিডিও ফুটেজ। সেখানে দেখা গিয়েছে, এক হোটেলকর্মী কী ভাবে পিছু ধাওয়া করেছিলেন হামলাকারী সেইফের। ওই কর্মীই নিজের মোবাইল ফোনে ভিডিওটি তুলেছিলেন। ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, সেইফকে থামাতে একটা সময় অলিভ অয়েলের শিশি ছুড়ে মারেন ওই কর্মী। পরে সেইফ তাকেও মারতে উদ্যত হয়। ভিডিওর একদম শেষে দেখা গিয়েছে, কী ভাবে পুলিশ বন্দুকবাজকে ঘিরে ধরে গুলি করছে।

তিউনিসিয়া সরকার আজ জানিয়েছে, আইএসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েক জন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজই তিউনিসিয়া পৌঁছেছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেরেজা মে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন