টেক্সাসের সামার ক্যাম্পের সেই ঘর। ছবি: সংগৃহীত।
ঘরের মধ্যে কাদাজল। ভেঙে গিয়েছে জানলা-দরজা। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে বালিশ, বিছানা, বাচ্চাদের জামাকাপড়। তার মধ্যে থেকেই একটা তোয়ালে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলেন মাইকেল। তার পর হাউহাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তাঁর হাহাকার, ‘‘এই ঘরেই ছিল মেয়েটা!’’ টেক্সাসের গুয়াদালুপ নদীর ধারে সেই সামার ক্যাম্পে গিয়েছিল মাইকেলের আট বছরের কন্যা। নদীতে হড়পা বান আসার পর থেকে সে নিখোঁজ।
শুক্রবার থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয় টেক্সাসের বিভিন্ন অংশে। তার জেরে আচমকাই হড়পা বান আসে গুয়াদালুপ নদীতে। সপ্তাহান্তে সেই নদীর ধারেই আয়োজন করা হয়েছিল সামার ক্যাম্পের। নদীর জল ঢুকে তছনছ হয় শিবির। ভেসে যায় বহু ছাত্রী। শনিবার রাত (আমেরিকার সময়) পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল ২৭ জন ছাত্রী। তাঁদের মধ্যে রয়েছে মাইকেলের আট বছরের কন্যাও।
মাইকেল অস্টিনের বাসিন্দা। শুক্রবার হড়পা বানের খবরটা প্রথম শোনার পরেই শুরু হয় আশঙ্কা, এই বুঝি এল সেই খারাপ খবর! হলও তাই। সামার ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হল, তাঁর কন্যারও খোঁজ নেই। তার পরেই টেক্সাসের শিবিরে ছুটে আসেন মাইকেল। জল নেমে যাওয়ার পরে শিবিরের ঘরগুলি ঘুরে দেখতে থাকেন। তখনই চোখে পড়ে সেই তোয়ালে। ওই ঘরে খাটের পাশে টেবিলে রাখা ছিল মাইকেলের সঙ্গে মেয়ের একটি ছবিও। তা দেখে আর বুঝতে বাকি ছিল না। কাদাজল ভরা ঘর ঘাঁটাঘাঁটি করতেই হাতে আসে মেয়ের একটি ব্রেসলেট।
৪৫ মিনিটে নদীর জলস্তর ২৬ ফুট (আট মিটার) বৃদ্ধি পায়। নদীর তীরে শিবিরে তখন ছিল ৭৫০ জন ছাত্রী। বেশির ভাগকেই উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু জলের স্রোতে ভেসে যায় মাইকেলের কন্যা-সহ ২৭ জন। রবিবার সকাল পর্যন্ত (ভারতীয় সময় অনুসারে) জলে ভেসে অন্তত ৫১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১৫ জন শিশু। স্থানীয়েরা বলছেন, আচমকা যে জলস্তর এতটা বৃদ্ধি পাবে, তা বোঝা যায়নি। সতর্কতাও ছিল না। নদীর তীরে একটি রেস্তরাঁ চালান জেরার্ডো মার্টিনেজ়। তাঁর কথায়, ‘‘বলা হয়, প্রতি ১০০ বছরে এক বার নাকি এ রকম ভয়ঙ্কর বন্যা হয়। এর আগে এ রকম দেখিনি। আর যেন জীবদ্দশায় না দেখতে হয়!’’
মাইকেলের কানে আর এ সব কিছুই যাচ্ছে না। শিবিরের ওই ঘরেই তন্নতন্ন করে মেয়ের জিনিসপত্র খুঁজে চলেছেন তিনি। আর বিড়বিড় করে বলছেন, ‘‘মির্যাকল তো হতেই পারে! আশা রাখি।’’