আত্মঘাতী ফিদেল-পুত্র

নামেই নয়, বাবার সঙ্গে মুখেরও মিল ছিল দিয়াজ-বালার্তের। দীর্ঘ দেহ, বাবার মতোই এক মুখ দাড়ি। ৬৮ বছর বয়সি জুনিয়র কাস্ত্রোকে লোকজন ‘ফিদেলিতো’ (ছোট ফিদেল) বলে ডাকতেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

হাভানা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৫
Share:

ফিদেল কাস্ত্রো দিয়াজ-বালার্ত

অবসাদে ভুগছিলেন দীর্ঘদিন। গত কাল অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে কিউবার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোর বড় ছেলে ফিদেল কাস্ত্রো দিয়াজ-বালার্তের। সরকারি ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, ‘‘বেশ কয়েক মাস ধরে তাঁর মানসিক চিকিৎসা চলছিল। বৃহস্পতিবার সকালে আত্মহত্যা করেছেন দিয়াজ-বালার্ত।’’

Advertisement

নামেই নয়, বাবার সঙ্গে মুখেরও মিল ছিল দিয়াজ-বালার্তের। দীর্ঘ দেহ, বাবার মতোই এক মুখ দাড়ি। ৬৮ বছর বয়সি জুনিয়র কাস্ত্রোকে লোকজন ‘ফিদেলিতো’ (ছোট ফিদেল) বলে ডাকতেন। কয়েক মাস আগে মানসিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। পরে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা চলছিল।

দিয়াজ-বালার্তের ছোটবেলা কেটেছে বাবা-মায়ের তিক্ত সম্পর্ক দেখে। মা মির্তা দিয়াজ-বালার্ত কিউবার বেশ অভিজাত পরিবারের মেয়ে। যখন বিয়ে হয়, তখনও কাস্ত্রো প্রেসিডেন্ট হননি। আমেরিকার সঙ্গে ঠান্ডা-যুদ্ধ শুরু হয় পরে। লড়াই শেষে কিউবায় ক্ষমতায় আসেন ফিদেল কাস্ত্রো ও তাঁর ভাই রাউল। তার আগেই ছাড়াছাড়িও হয়ে গিয়েছিল কাস্ত্রো ও মির্তার। মির্তাকে সপরিবার কিউবাও ছাড়তে হয়। আমেরিকায় আশ্রয় নেন তাঁরা। মিয়ামির কাস্ত্রো-বিরোধী পরিবার বলেই বরং পরিচিতি ছিল তাঁদের। দিয়াজ-বালার্তের তুতো ভাই মারিও দিয়াজ-বালার্ত ফ্লরিডার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান। বরাবরই কিউবার বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

Advertisement

কাস্ত্রো কিউবায় ক্ষমতায় আসার কিছু দিন পরেই বাবার কাছে ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন মির্তা। কিন্তু কাস্ত্রো আমেরিকায় ফিরতে দেননি ছেলেকে। পরে মির্তা এ-ও দাবি করেন, তাঁর ছেলেকে অপহরণ করেছেন কাস্ত্রো। তাতে লাভ অবশ্য হয়নি। বাবার কাছেই থেকে গিয়েছিল ছেলে। পরে কিশোর ফিদেলিতোকে বাবার সঙ্গে হাভানায় একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায়। ঝরঝরে ইংরেজিতে কথা বলে সে। বাবার এনে দেওয়া নতুন পোষ্যকে দেখায়।

পরবর্তী কালে ফিদেলিতো অবশ্য বাবার মতো রাজনীতির পথে হাঁটেননি। তিনি ছিলেন পরমাণু-পদার্থবিদ। পড়াশোনা করতে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন। পরমাণু গবেষণার প্রশিক্ষণও নেন সেখানেই। বিয়ে করেছিলেন এক রুশ মহিলাকে। তিন সন্তান রয়েছে তাঁদের— ফিদেল আন্তোনিও, মির্তা মারিয়া, হোসে রাউল। পরে মারিয়া ভিক্টোরিয়া বারেরো নামে অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি। ‘কিউবান কাউন্সিল অব স্টেট’-এর বিজ্ঞান-উপদেষ্টা ছিলেন দিয়াজ-বালার্ত। দীর্ঘদিন ‘কিউবান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এর ভাইস-প্রেসিডেন্টও ছিলেন তিনি। কিউবার পরমাণু গবেষণা তাঁর হাত ধরেই চলছিল।

২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বর ৯০ বছর বয়সে মারা যান ফিদেল কাস্ত্রো। বছর দুয়েকের মাথায় আকস্মিক ভাবেই চলে গেলেন ছেলে। এ খবর প্রকাশ্যে আসতেন চমকে গিয়েছেন কিউবার মানুষ। কারণ, কাস্ত্রো-পুত্র যে মানসিক অবসাদে ভুগছেন, সে খবর জানতেনই না কেউ। বরাবর তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন আড়ালেই রেখে এসেছে কাস্ত্রো-পরিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন