লেবার পার্টি আলো করে পাঁচ বাঙালি নেত্রী

বিশেষ করে হ্যামস্টেডের মতো ইহুদি-প্রধান অঞ্চলে লেবার পার্টির বিরুদ্ধে ইহুদি-বিদ্বেষের কথা বলেও কিছু করতে পারেনি অন্য দল দু’টি। ওই আসনে টিউলিপের ঝুলিতে এসেছে ২৮,০৮০ ভোট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লন্ডন শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৩২
Share:

রুশানারা আলি, রূপা হক, লিসা নন্দী, টিউলিপ সিদ্দিক ও আফসানা বেগম।

ভোটের লড়াইয়ে দল বিপর্যয়ের মুখে পড়লেও মান রেখেছেন তাঁরা। লেবার পার্টির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পাঁচ নেত্রী। তাঁদের দৌলতে পাঁচ ‘বাঙালি’ মুখ এ বার হাউস অব কমন্সে।

Advertisement

উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের হ্যামস্টেড এবং কিলবার্ন আসন নিজের দখলে রাখতে পেরেছেন শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনঝি টিউলিপ সিদ্দিক। ২০১৫ সাল থেকেই এই আসনটি তাঁর দখলে। ১৪,১৮৮ ভোটে এ বার জিতেছেন লেবার সদস্য টিউলিপ। কনজ়ারভেটিভ এবং লিবারাল ডেমোক্র্যাটরা তাঁর বিরুদ্ধে জোরদার প্রচার চালিয়েও হালে পানি পাননি।

বিশেষ করে হ্যামস্টেডের মতো ইহুদি-প্রধান অঞ্চলে লেবার পার্টির বিরুদ্ধে ইহুদি-বিদ্বেষের কথা বলেও কিছু করতে পারেনি অন্য দল দু’টি। ওই আসনে টিউলিপের ঝুলিতে এসেছে ২৮,০৮০ ভোট। তার পরে রয়েছেন কনজ়ারভেটিভ পার্টির জনি লুক (১৩,৮৯২ ভোট)। লিবারাল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ম্যাট স্যান্ডার্স পেয়েছেন ১৩১২১টি ভোট। ২০১৭ সালের ভোটে ৩৪,৪৬৪ ভোট পেয়েছিলেন টিউলিপ। জয়ের পরে সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা এখানে জিতেছি ঠিকই। কিন্তু জাতীয় ক্ষেত্রে দল ভাল করেনি। আমাদের এ বার আস্থা ফেরানোর কাজটা করতে হবে। এ দেশে লেবার সরকারই প্রয়োজন।’’

Advertisement

এর পরে টিউলিপের সংযোজন, ‘‘পরের বার শুধু আমি নই। আমাদের সব সহকর্মী যেন নিজের জায়গা পুনরুদ্ধার করতে পারেন।’’ ২০১০ সালের মে মাসে ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম মহিলা কাউন্সিলর হন টিউলিপ। ২০১৫ সালে সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবার লড়তে নামেন এবং হ্যামস্টেড আসনে জেতেন।

ইলিং সেন্ট্রাল ও অ্যাক্টন থেকে নিজের আসন ধরে রেখেছেন রূপা হক। কনজ়ারভেটিভ প্রার্থী জুলিয়ান গ্যালান্টকে হারিয়েছেন তিনি। গত বারের ভোটেও জিতেছিলেন রূপা। পার্লামেন্টে পা ফেলার আগে কিংসটন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের সিনিয়র লেকচারার ছিলেন তিনি। আদি বাড়ি পাবনায়।

পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন এবং বো থেকে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন রুশানারা আলি। ৪৪,০৫২ ভোটে জিতেছেন তিনি। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি মহিলা হিসেবে জিতে হাউস অব কমন্সে পা রেখেছিলেন রুশানারা। ২০১৭ সালেও ৪২,৯৬৯ ভোটে জিতেছিলেন তিনি। আদতে সিলেটের বাসিন্দা রূপাকে ২০১৫ সালের নির্বাচনের পরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য-দূতের পদে নিয়োগ করা হয়। অক্সফোর্ডের ছাত্রী রূপা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এবং শিক্ষা দফতরের ছায়ামন্ত্রীও ছিলেন।

ম্যাঞ্চেস্টারের উইগান আসনে ফের জয় পেয়েছেন আর এক বাঙালি লিসা নন্দী। ব্রিটিশ মা এবং বাঙালি বাবার কন্যা লিসা ২১,০৪২ ভোটে জিতেছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কনজ়ারভেটিভ প্রার্থী অ্যাশলে উইলিয়ামস ১৪৩১৪ ভোট পেয়েছেন। ২০১০ সাল থেকে এই আসনটি লিসার দখলে রয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, ‘‘এ বারের লড়াই সবচেয়ে কঠিন ছিল।’’ সমর্থকদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘আপনারা আমায় প্রতিটি দিন অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সাধারণ মানুষ ন’বছর ধরে আমার উপরে আস্থা রেখেছেন। সবাইকে তার জন্য ধন্যবাদ।’’

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আফসানা বেগমও রয়েছেন মহিলা ব্রিগেডে। এই প্রথম বার ভোটের লড়াইয়ে নেমে পূর্ব লন্ডনের পপলার এবং লাইমহাউস আসন থেকে জিতেছেন তিনি। পেয়েছেন ৩৮,৬৬০ ভোট।

বিজেপি-পন্থী ‘ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়া’ গোষ্ঠীর চেষ্টা সত্ত্বেও লন্ডনে লেবারদের ফল ভাল হয়েছে। দেশে লেবারদের ভরাডুবির থেকে এখানকার ছবিটা অনেকটাই আলাদা। লন্ডনের বিভিন্ন গুজরাতি-অধ্যুষিত এলাকায় হিন্দু প্রার্থী দিয়েছিল কনজ়ারভেটিভরা। কিন্তু সে সব আসনেও লেবাররাই জিতেছে। তবে জয়ী হয়েছেন নর্থ ইয়র্কশায়ারে রিচমন্ডের কনজ়ারভেটিভ প্রার্থী এবং ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণমূর্তির জামাই ঋষি সুনক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন