৬৬ যাত্রী নিয়ে ভাঙল মিশরীয় বিমান

গ্রিস থেকে মিশরের আকাশে ঢোকার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। গোলমালটা বাধল মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরের আকাশ ছোঁয়ার পর পরই। রেডারের সঙ্গে যোগাযোগটা তখনই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ইজিপ্ট এয়ারের ফ্লাইট-৮০৪-এর। মিশরের সময় তখন রাত পৌনে তিনটে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

প্যারিস শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:৫৫
Share:

খবর নেই। প্যারিস বিমানবন্দরের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এক যাত্রীর আত্মীয়া। ছবি: এপি।

গ্রিস থেকে মিশরের আকাশে ঢোকার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। গোলমালটা বাধল মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরের আকাশ ছোঁয়ার পর পরই। রেডারের সঙ্গে যোগাযোগটা তখনই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ইজিপ্ট এয়ারের ফ্লাইট-৮০৪-এর। মিশরের সময় তখন রাত পৌনে তিনটে। মিশরের আকাশসীমায় বিমানটি ঠিকমতো ঢুকেছে কি না, বারবার জানার চেষ্টা করছিল গ্রিসের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয় তারা। আশঙ্কার শুরু তখন থেকেই। শেষমেশ বিকেলের দিকে মিশরের সরকারই জানিয়ে দেয় ভূমধ্যসাগরে ভেঙে পড়েছে ইজিপ্ট এয়ারের এয়ারবাস-৩২০। যাত্রীদের বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ। গোটা ঘটনার পিছনে নাশকতার তত্ত্ব উড়িয়ে দিচ্ছে না মিশর সরকার।

Advertisement

৫৬ জন যাত্রী আর ১০ জন বিমানকর্মী নিয়ে কাল সন্ধেয় প্যারিস থেকে কায়রো রওনা দিয়েছিল ইজিপ্ট এয়ারের ফ্লাইট-৮০৪। যাত্রীদের মধ্যে তিনটি শিশুও ছিল। স্থানীয় সময় ভোররাতে বিমানটির কায়রো পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধে রাত পৌনে তিনটে নাগাদ। গ্রিসের কারপাথোস দয়ে মিশরের আকাশের ঢোকার পর থেকে কার্যত হারিয়ে গিয়েছিল বিমানটি। না গ্রিস, না মিশর, কোনও দেশই তাদের রেডারে খুঁজে পাচ্ছিল না বিমানটিকে। অথচ গ্রিস জানিয়েছিল, তাদের আকাশে থাকার সময় পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। বিমানচালক কোনও অস্বাভাবিকতার ইঙ্গিত দেননি। গ্রিস এবং মিশরের উদ্ধারকারী দল এর পরই তল্লাশি অভিযান শুরু করে।

রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কায়রো বিমানবন্দরে যাত্রীদের উদ্বিগ্ন পরিবারের ভিড় বাড়তে শুরু করে। তাঁদের অভিযোগ, বিমান সম্পর্কে কোনও তথ্য দিচ্ছিলেন না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন ইজিপ্ট এয়ারের কর্মীরাও। ‘‘কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলে সকলেই ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিচ্ছিলেন’’, বললেন এক যাত্রীর বাবা।

Advertisement

বিকেলের দিকে মিশরের সরকার জানায়, ভূমধ্যসাগরে ভেঙেই পড়েছে বিমানটি। গ্রিস ও মিশরের সেনা বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের কাজ শুরু করেছে। সন্ধের দিকে গ্রিসের সংবাদমাধ্যম জানায়, দক্ষিণ ভূমধ্যসাগরের ক্রেট দ্বীপের ২৩০ মাইল দক্ষিণে বিমানের ধ্বংসাবশেষের কিছু অংশ মিলেছে। সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় মিলেছে কিছু লাইফ জ্যাকেটও। কিন্তু কোনও যাত্রীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছে কি না, জানা যায়নি। ফরাসি সরকার জানিয়েছে, বিমানটিতে ৩০ জন মিশরীয় নাগরিক, ১৫ জন ফরাসি নাগরিক ছাড়াও ইরাক, ব্রিটেন, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, সৌদি আরব, কুয়েত, আলজিরিয়া, চাদ এবং কানাডার যাত্রীরাও ছিলেন।

কী ভাবে ভেঙে পড়ল বিমানটি? এখানেই ধন্দে পড়েছে মিশর সরকার। বিমান সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, যান্ত্রিক গোলযোগে বিমানটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। গ্রিক এটিসি-ও জানিয়েছে, বিমানচালকের সঙ্গে শেষবার হওয়া কথা পর্যন্ত তিনি অন্তত তেমন কিছু ইঙ্গিত দেননি। জানা গিয়েছে, ভূমধ্যসাগরে পড়ে যাওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে বিমানটি অদ্ভূত ভাবে নিজের গতিপথ পরিবর্তন করেছিল। এর পর এক বার নব্বই ডিগ্রি ডান দিক, এক বার ৩৬০ ডিগ্রি বাঁ দিকে ঘুরে প্রায় ৩৭ হাজার ফুট থেকে আচমকা নীচে নামতে শুরু করে বিমানটি। তার পরে গোঁত্তা মেরে ভেঙে পড়ে সমুদ্রে। একটি গ্রিক মালবাহী জাহাজের ক্যাপ্টেনের মুখেও এমন কথা শোনা গিয়েছে। তিনি তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, কাল মাঝ রাতে সমুদ্রের ওই একই জায়গায় বড় আগুনের গোলা দেখেছিলেন তিনি। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতাহ আল-সিসি জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার পিছনে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের হাত থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

কিন্তু যত ক্ষণ না পর্যন্ত কোনও প্রমাণ মিলছে, এ নিয়ে সবিস্তার কিছু বলতে নারাজ কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন