ফুটবল ও রাজনীতি এক নয়, হারেও প্রত্যয়ী দিলমা

অভিযোগ আছে ভুরি ভুরি। ক্ষোভও রয়েছে বিস্তর। কিন্তু ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ প্রত্যয়ী আর্থিক দুরবস্থা বা বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া, কিছুরই প্রভাব পড়বে না আসন্ন নির্বাচনে। শুক্রবার বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বললেন, “ফুটবল আর রাজনীতি এক নয়।” পাশাপাশি সাম্বার সুর ভাঁজতে ভাঁজতে বার্তাও দিলেন, এ বার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ব্রাসিলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৪ ০০:৫৩
Share:

অভিযোগ আছে ভুরি ভুরি। ক্ষোভও রয়েছে বিস্তর। কিন্তু ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ প্রত্যয়ী আর্থিক দুরবস্থা বা বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া, কিছুরই প্রভাব পড়বে না আসন্ন নির্বাচনে। শুক্রবার বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বললেন, “ফুটবল আর রাজনীতি এক নয়।” পাশাপাশি সাম্বার সুর ভাঁজতে ভাঁজতে বার্তাও দিলেন, এ বার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা।

Advertisement

জার্মানির কাছে স্রেফ খড়কুটোর মতো উড়ে যাওয়া ব্রাজিল সে বার্তায় কতটা আশ্বাস পাবে বলা মুশকিল। আমজনতা তো বটেই, ব্রাজিলের ‘স্টার’ নেইমার দ্য সিলভাও যে মঙ্গলবারের হার মেনে নিতে পারেননি, তা সাংবাদিক সম্মেলনেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রকাশ্যে কেঁদে ফেলেছেন নেইমার। ভরসা তবু একটাই। এই ফুটবল তারকার অন্তত বার্সেলোনা আছে। সুযোগ আছে ক্লাব ফুটবলে দুর্দান্ত খেলে হৃত সম্মান ফিরিয়ে আনার। আম ব্রাজিলবাসীর সে সব নেই। বেকারত্ব, আর্থিক দুর্দশা, দুর্নীতি এ সবে জর্জরিত বাসিন্দাদের কাছে ফুটবলই আশা-ভরসার জায়গা ছিল। কিন্তু এখন তা-ও শেষ। এবং সব কিছুর জন্যই তাঁরা দায়ী করছেন দিলমা ও তাঁর অকর্মণ্য প্রশাসনকে।

শুক্রবারের বৈঠকে অবশ্য সে সব নিয়ে সরাসরি কোনও জবাব দেননি দিলমা। শুধু বুঝিয়েছেন, বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিল ছিটকে যাওয়ার পর তিনিও আমজনতার মতো ভেঙে পড়েন। বলেছেন, “ভবিষ্যতেও হয়তো বহু দিন পর্যন্ত এই হারের কথা আলোচনা করব।” ব্যস ওটুকুই। তাঁর বক্তব্যের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর কথা, ভুল-ত্রুটি বুঝে নিয়ে নতুন ভাবে ফিরে আসার ইতিবাচক ভাবনা-চিন্তা। সাংবাদিকদের সামনে পাওলো ভানজোলিনির ‘পিক ইওরসেল্ফ আপ’ নামে যে গানটির ক’টি ছত্র গুনগুন করেছেন দিলমা, তার প্রতিটি অংশই ইতিবাচক বার্তায় ভরা।

Advertisement

কিন্তু এ সব তো সুদূর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা। তাতে ভর দিয়ে অক্টোবরের নির্বাচনী তরী কি পার করতে পারবেন তিনি? বিরোধীরা নিশ্চিত, এ যাত্রায় রক্ষে নেই। তাঁদের মতে, গত বছর থেকেই দিলমা-প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে শুরু করেছেন দেশের মানুষ। প্রত্যেকেরই প্রশ্ন ছিল, আর্থিক দুর্দশার মধ্যেও কী ভাবে বিশ্বকাপ আয়োজনের বিলাসিতা করছেন দিলমা? কিন্তু সে সবে পাত্তা না দিয়েই আয়োজন চলেছিল। ভরসা ছিল ক্ষুব্ধ ব্রাজিলকে হয়তো ফুটবল বিশ্বকাপের ট্রফিই শান্ত করতে পারে। কিন্তু জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারার দিলমা-বিরোধীরা বলছেন, যে ফুটবলপ্রেমকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচন জেতার কথা ভেবেছিলেন তিনি, সেটিই এ বার ব্যুমেরাং হয়ে ফিরবে।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট অবশ্য মোটেও চিন্তিত নন। বরং তিনি মনে করেন, দেশের পরাজয়ের থেকেও অনেক বেশি লজ্জার বিষয় হতো যদি বিশ্বকাপ আয়োজনে কোনও ত্রুটি থাকত। বলা বাহুল্য, তা হয়নি। তা ছাড়া, দিলমা মনে করিয়ে দিয়েছেন ফুটবল-বিশ্বকাপের ফলাফল আর নির্বাচনের জেতা-হারার মধ্যে সম্পর্ক নেই। কারণ তথ্য বলছে, ২০০২-র বিশ্বকাপ ব্রাজিল জিতলেও সে বছরের নির্বাচনে হেরেছিলেন তৎকালীন শাসক দলের প্রার্থী। আবার ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ব্রাজিল হেরে গেলেও নির্বাচনে কিন্তু জিতেছিলেন সে সময়ের প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দো এনরিকে কার্দোসো। ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্টের অবস্থান এর থেকেই স্পষ্ট। এর পাশাপাশি অবশ্য দিলমা জানিয়েছেন, তাঁর সময় থেকে বৈষম্য কমেছে, কমেছে বেকারত্বও।

সত্যিটা কী, সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছেই। কিন্তু তার থেকেও বড় প্রশ্ন, রবিবারের ফাইনালে কাকে সমর্থন করবেন দিলমা? দেশের দুর্গতির দায় এড়ানোর মতোই এই প্রশ্নের উত্তরও এড়িয়ে গিয়েছেন ব্রাজিল-প্রেসিডেন্ট।

বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর আর কী কী তাঁকে এড়াতে হবে, তা সময়ই বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন